আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দেশে হঠাৎই শুরু হয় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। রাজধানীতে আটটি ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামে তিনটি অভিযান চালায় র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। অভিযানে অন্তত ২৭০ কোটি টাকার মতো এফডিআর ও টাকা জব্দ করা হয়। ওই অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত যার নাম তিনি সম্রাট। রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত আসামি তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।
গ্রেপ্তার হন ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর গভীর রাতে। গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত তার জীবনযাপন ছিল সম্রাটের মতোই। গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি কখনো বুকে ব্যথা, কখনো হার্টের সমস্যা- এমন সব সমস্যা নিয়ে কারাগার থেকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গ্রেপ্তারের পর কিছু দিন কারাগারে, কিছু দিন কারা হাসপাতালে, মাস খানেক পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে, এর পর চার মাস বিরতি দিয়ে ফের বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে। ওই চার মাসেও কারা হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সবমিলিয়ে বন্দিত্বের পুরো সময়টাই হাসপাতালে অস্ত্র, অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনোকাণ্ডসহ কয়েক মামলার আসামি সম্রাট।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ খ্যাত ইসমাইল হোসেন সম্রাট। তার হার্টের অবস্থা খুব খারাপ। কারাগারে থাকলে যে কোনো সময় যে কিছু হতে পারে, তাই ঝুঁকি না নিয়ে কারাগার কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে রেখেছেন।
তবে অভিযোগ রয়েছে, প্রভাব খাটিয়ে ও অর্থের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন সম্রাট।
সম্রাটের বিরুদ্ধে করা পাঁচ মামলার মধ্যে অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলা বিচারাধীন। মানি লন্ডারিং ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা অবৈধ সম্পদের মামলাটি তদন্তাধীন। মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচারেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসা নিতে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে সামর্থ্যবানদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যাদের সামর্থ্য বেশি তারা হাসপাতালেই থেকে যাচ্ছেন মাসের পর মাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর গ্রেপ্তারের পর কিছু দিন কারা হাসপাতালে ছিলেন মাদক, অস্ত্র আইন ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি সম্রাট। মাসখানেকের মধ্যেই ওই বছরের ২৪ নভেম্বর তিনি বুকে ব্যথা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দফায় হাসপাতালের প্রিজন সেলে টানা আট মাস ছিলেন।
২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর আবারো একই হাসপাতালে ভর্তি হন সম্রাট। সেই থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি। ২০২১ সালের ১৩ জুলাই হার্টের সমস্যা গুরুতর হলে তাকে হাসপাতালের ডি-ব্লকের সিসিইউ ওয়ার্ডের ২ নম্বর বেডে ভর্তি রাখা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সম্রাটের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। তার হার্টের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। যে কোনো সময়ে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে। তাই আমরা ঝুঁকি না নিয়ে তাকে হাসপাতালে রেখেছি।’
সুভাষ আরও বলেন, ‘কারা হাসপাতালে যতক্ষণ চিকিৎসা সম্ভব ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো কারাবন্দিকে চিকিৎসার জন্য বাইরের কোনো হাসপাতালে পাঠানো হয় না। যখন বড় ধরনের সমস্যা হয় তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সম্রাট খুব অসুস্থ। তিনি সিসিইউতে ভর্তি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে কেমন আছে সেটা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ভালো বলতে পারবেন।’
সম্রাটের বিচার কতোদূর
তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্যাসিনো মামলাগুলোর তদন্তে ও বিচারে সময় অতিবাহিত হয়েছে। করোনা না থাকলে এতদিনে এসব মামলার তদন্ত ও বিচার অনেকটাই গুছিয়ে আনা সম্ভব ছিল বলে মনে করেন তারা।
এদিকে ক্যাসিনোর ১৩ মামলার মধ্যে ১০টির অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে সম্রাট আর খালেদের তথ্যের জন্য আটকে আছে অভিযোগপত্র।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পাচারকৃত অর্থের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষ হয়নি আড়াই বছরেও। এ কারণে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা সম্রাটসহ আরও কয়েকজনের তিন মামলার অভিযোগপত্র দিতে সময় নিচ্ছে সিআইডি। তদন্তে সম্রাটের ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
এ ব্যাপারে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘সম্রাটের যে মামলাটা এটাতে ১৯৫ কোটি টাকা মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে পাচারের তথ্য আমাদের কাছে আছে। এখন আমরা পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়ার পরে যাচাই বাছাই করে বলতে পারব মূলত কত টাকা পাচার হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সম্রাটের অনেক মামলা আমাদের আদালত থেকে বদলি হয়ে গেছে। তবে দুদকের একটি মামলা রয়েছে । অন্য মামলাগুলো বিশেষ জজ আদালতে বদলি হয়ে থাকতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ওই গ্রামের জামায়াত নেতা মনির চৌধুরীর বাড়ি থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আটক করা হয়। পরদিন তাদের নিয়ে রাজধানীতে নিজ নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদক জব্দ করা হয়।
এর আগে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। এর পর সন্ধ্যায় গুলশানের বাসা থেকে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করা হয়। এটাই ছিল ক্যাসিনোবিরোধী প্রথম অভিযান।