আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তন বাড়ানোর জন্য একটি নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার যোগ্য নন, তাদের অবশ্যই তাদের মূল দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। এ লক্ষ্যে ইইউ সদস্য দেশগুলিকে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি ফ্রন্টেক্সের মতো সংস্থাকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
ইউরোপে আশ্রয়ের অধিকার নেই এমন লোকজনকে আরও বেশি সংখ্যায় নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উপায় এবং এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা না করা দেশগুলোর বিরুদ্ধে ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
এই বিষয়ে আলোচনা করতে আজ ২৬ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে বসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীরা।
জানা গেছে, যেসব দেশ নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়, প্রায় তিন বছর আগে সেসব দেশের জন্য ভিসা সীমিত করার পদক্ষেপে ঐক্যমতে পৌঁছেছিল ২৭ জাতিরাষ্ট্রের এই জোট। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের পর কেবল আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে শাস্তি দেয়া হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী সংস্থা ইউরোপীয় কমিশন ইরাক, সেনেগাল এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও গাম্বিয়ার মতো একই ধরনের শাস্তির প্রস্তাব করেছে। যদিও ইইউর দু’জন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রত্যাবাসন নিয়ে ঢাকার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেছে।’
ইইউ’র পরিসংখ্যান বিষয়ক সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে অবৈধ আশ্রয়প্রার্থী ফেরতের হার মোটাদাগে ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর এই হার এমন এক স্তর, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলো অগ্রহণযোগ্য কম বলে মনে করে।
ইউরোপের দেশগুলোর এই জোটের রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয় অভিবাসন। বৃস্পতিবারের বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তত্ত্বাবধানের কাজ কীভাবে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায় তা নিয়ে তাদের তিক্ত দ্বন্দ্ব পুনরুজ্জীবিত করার চেয়ে বরং প্রত্যাবর্তন বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রথমেই অনিয়মিত অভিবাসন হ্রাস করার বিষয়ে আলোচনা করবে।
এদিকে মন্ত্রীদের আলোচনার বিষয়ে একটি নথি তৈরি করেছে ইউরোপীয় কমিশন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপীয় কমিশনের ওই নথিতে বলা হয়েছে, অবৈধ আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠাতে কার্যকর এবং সাধারণ একটি ব্যবস্থাপনা দাঁড় করানোই হবে বিশ্বাসযোগ্য অভিবাসন ও আশ্রয় ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় স্তম্ভ।
অভিবাসন এবং আরও অধিকসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশের নেতাদের বৈঠকের দুই সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার ইইউর অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীদের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নেতাদের যৌথ বিবৃতির খসড়ায় বলা হয়েছে, ইইউর সমস্ত প্রাসঙ্গিক নীতিমালা মেনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ নিজ দেশে কার্যকর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ইউরোপীয় কমিশন বলেছে, আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশের অপর্যাপ্ত সহযোগিতা এক্ষেত্রে অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ। তাদের নাম-পরিচয় শনাক্ত, ভ্রমণের নথিও সমস্যা তৈরি করছে।
কিন্তু অতীতে ভিসা বিধি-নিষেধের মাধ্যমে কিছু তৃতীয় দেশকে শাস্তি প্রদানের বিষয়ে অভিবাসন প্রধানদের চাপপ্রয়োগ ইইউর নিজস্ব পররাষ্ট্র ও উন্নয়ন মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যায় অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু দেশের পরস্পরবিরোধী অ্যাজেন্ডার কারণে ব্যর্থ হয়। যে কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমাত্র গাম্বিয়া ছাড়া অন্য কোনও দেশের বিরুদ্ধে ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি কোনও দেশের বিরুদ্ধে ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করে, তাহলে সেই দেশের নাগরিকরা ওই ব্লকে প্রবেশের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা পান না, এমনকি ভিসা পাওয়ার জন্য দীর্ঘসময়ের অপেক্ষার মুখোমুখিও হতে হয়।
অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অনিয়মিত মুসলিম অভিবাসনের বিরুদ্ধে জোরেশোরে প্রতিবাদ করছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অবস্থান নিয়েছে জার্মানি। দেশটি ব্লকের বাইরের কর্মীদের জন্য তাদের চাকরির বাজার উন্মুক্ত করতে চাইছে।