বাংলাদেশে টিকা দান কর্মসূচী নিয়ে সংশয়

 

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বাংলাদেশে কোভিড টিকার পরবর্তী কার্য্যক্রম নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের নিকট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পরবর্তী চালান পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় অন্যান্য উৎস থেকে টিকা কেনার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে সরকার ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের সংগে সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-করভি ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গামালিয়া ইনস্টিটিউটের স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে কথা বলেছে।

এই দুটি টিকা ইতোমধ্যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এই দুটি টিকার অনুমোদন দেয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ ব্যাপারে চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলে তাদের টিকা কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে টিকার মূল্য, পরিমাণ, শর্তাবলী  এবং সময়ের ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এই দুটি টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্যে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে। 

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সিনোফার্ম তাদের টিকার কার্যকারিতা ৭৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বলে জানিয়েছিল; এরপরই চীন সরকার এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে সিনোফার্ম টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় আরব আমিরাত। তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের অন্তর্বর্তীকালীন ফলের বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, এই টিকার কার্যকারিতা ৮৬ শতাংশ।

রাশিয়া তাদের নিজ দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহারের জন্য স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয় ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমানের সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে যে, রাশিয়া ও চীনের বানানো ভ্যাকসিন লাখো মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে। এই টিকাগুলো বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে। (বাংলাদেশ) সরকার খুব ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে।’

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা। কিন্তু, গতকাল পর্যন্ত সরকার দুই দফায় মাত্র ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন রপ্তানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত সরকার।

এ ছাড়াও, ভারত থেকে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন গত ২১ জানুয়ারি এসেছে। আর গত মাসে বাংলাদেশে সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপহার হিসেবে আরও ১২ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এনেছেন। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় চালানটি কবে এসে পৌঁছাবে, সে বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। এ বিষয়ে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপনের সূত্রে জানা গিয়েছে যে, ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান কবে আসবে, শ্বে সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ তারা জানতে পারেন নি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে আগামী সপ্তাহে এব্যাপারে জানা যেতে পারে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভির নেতৃত্বাধীন কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ মোট ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাবে। এই কর্মসূচির আওতায় মে মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের ১ কোটি ৯ লাখ ৮ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কোভ্যাক্সের কাছ থেকে এখনো কোনো আপডেট পাওয়া যায়নি বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সূত্রে জানা গিয়েছে। ভ্যাকসিনের মজুত দ্রুত কমতে থাকায় ও সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে সময়মতো পরবর্তী চালান পাওয়ার অনিশ্চয়তার প্রভাব বর্তমানে চলমান টিকাদান কর্মসূচির ওপর পড়তে পারে। তবে সরকার দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে যে,  টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার জন্য তারা ইতিমধ্যে একটি মিটিং করেছেন এবং টিকা প্রদান কর্মসূচিতে কোন পরিবর্তন ছাড়াই কর্মসূচী অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রথম ডোজ প্রদান অব্যাহত থাকবে আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হবে। এখন পর্যন্ত সরকার ৫৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭২ জনকে টিকা দিয়েছে। আর মোট ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ২২২ জন মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন।

তথ্যসূত্রঃ ডেইলি স্টার 

SHARE THIS ARTICLE