আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ প্রতিদিন জেলা, উপজেলা ও সিটি করপোরেশনগুলোতে দুই লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হবে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ঢাকায় প্রতিদিন ন্যূনতম ৪৫ হাজার মানুষকে করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) দেয়া হবে। তার আগে ট্রায়াল হিসেবে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী একটি এলাকার সীমিত সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেয়া টিকা আগে আসার খবরে টিকা কর্মসূচিও এগিয়ে আনা হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ২৭ জানুয়ারিই ট্রায়ালের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ট্রায়ালের এক সপ্তাহ পর টিকার গণপ্রয়োগ শুরু করবে স্বাস্থ্য বিভাগ। পর্যায়ক্রমে টিকা কর্মসূচির আওতা বাড়বে, ইউনিয়ন পর্যায়েও টিকা দেয়া হবে।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার টিকার ট্রায়াল শুরু করার কথা থাকলেও তা এখন ২৭-২৮ জানুয়ারিতেই শুরু হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তা মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারী) সংবাদকে জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, প্রথমে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী জেলার একটি এলাকার সীমিত সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীকে করোনার ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এরপর এক সপ্তাহ তাদের মধ্যে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কীনা, আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও সেই অনুযায়ী প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে টিকার গণপ্রয়োগ শুরু হবে।
ভ্যাকসিন পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আনা হচ্ছে কীনা জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের ১ ফেব্রুয়ারি ভ্যাকসিন ট্রায়ালের পরিকল্পনা ছিল। এখন যেহেতু আগেই ভ্যাকসিন পেয়ে যাচ্ছি, সেজন্য ২৭ বা ২৮ তারিখেই (জানুয়ারি) ট্রায়ালের কথা ভাবা হচ্ছে। আমরা ধরে রেখেছি, ২৭ তারিখেই হেলথ কেয়ার ওয়ার্ককার্রদের (স্বাস্থ্যকর্মী) একটি গ্রুপকে টিকা দেব। এরপর সাতদিন অভজার্ব করব। সাতদিন পর জাতীয়ভাবে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে।’
ঢাকায় ৩০০ কেন্দ্রে টিকা কর্মসূচি
রাজধানীতে দৈনিক তিনশ’ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি করে দল মানুষকে করোনার টিকা দেবে। একেকটি কেন্দ্রে প্রতিদিন ন্যূনতম ১৫০ জন টিকা নিতে পারবেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী প্রতিটি দলে ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। আর কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও নিরাপত্তায় থাকবেন পুলিশ বা আনসার সদস্যরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজেবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে।
টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এর মধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবারকল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
জেলা-উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে প্রতিদিন ২ লাখ টিকা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘শুধু জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশনগুলোকে ধরে প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে না।’
টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে চারটি টিম কাজ করবে। উপজেলা পর্যায়ে দুটি টিম কাজ করবে। মেডিকেল কলেজে ছয়টি টিম কাজ করবে। আমাদের যেসব ইনস্টিটিউট আছে সেখানেও টিম পাঠানো হচ্ছে।’
আজ বা কাল আসছে ভারতের উপহারের টিকা
বাংলাদেশ উপহার হিসেবে দেয়া ভারত সরকারের করোনার টিকা (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) আজ দেশে পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা আজ অথবা কাল আসছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘কাল বা পরশু টিকা আসবে। আমার আশা করছি আমাদের যে শিডিউল আছে সেই অনুযায়ী আসবে। আগামীকালের একটা শিডিউল আছে। অথবা পরশু আসবে। এটাই সর্বশেষ খবর। ভারত এই টিকা আমাদের কাছে পৌঁছে দেবে। আমি বিমানবন্দরে গিয়ে টিকা গ্রহণ করব। তবে কখন আসছে সেটার ফ্লাইট সিডিউল আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। কখন আসবে তা পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেয়া হবে। টিকা ভারত সরকার নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেবে।’
করোনা মহামারীতে প্রতিবেশী দেশের প্রতি চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ভারত করোনার প্রতিষেধক হিসেবে যে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাচ্ছে, তা আজ দেশে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম। এরপর চুক্তির আওতায় কেনা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ আগামী ২৫ জানুয়ারি দেশে পৌঁছার কথা রয়েছে।
প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকাদান
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা প্রয়োগ করে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই টিকা নিচ্ছেন, বাংলাদেশে এমন হবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপাতত এ ধরনের চিন্তা নেই। আমরা চিন্তাভাবনা করছি যাদের সবচেয়ে আগে প্রয়োজন, ফ্রন্টলাইনার, তাদের আগে দেব। ডাক্তার, নার্স, পুলিশ প্রথমে পাবেন। সাংবাদিকদেরও দেয়া হবে। যেটা প্ল্যান করা আছে সেভাবেই হবে। ভিভিআইপিরা আগে পাবেন না।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের কিছু টিকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এক সপ্তাহ পর সব জেলায় শুরু করা হবে। এটাই আমাদের পরিকল্পনা। টিকা প্রয়োগের বিস্তারিত পরিকল্পনা করতে মঙ্গলবার (গতকাল) প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা হয়। সেখানেই সব চূড়ান্ত হয়।’
উপহার হিসেবে পাওয়া টিকা সংরক্ষণের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এসব টিকা সিএমএসডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইপিআই এবং তেজগাঁও হেলথ কমপ্লেক্সের কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে।’
টিকা সংরক্ষণের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি আছে। প্রথমে ২০ লাখ আসছে। পরবর্তীতে আরও ৫০ লাখ আসবে। টিকা সংরক্ষণের জন্য কোল্ড চেইন, জনবল, ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’
চুক্তির টিকার প্রথম চালানে একসঙ্গে সব জেলায় কর্মসূচি
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান হাতে পাওয়ার পর সব জেলায় একসঙ্গে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।
ভারতের উপহার ২০ লাখ ডোজ টিকা কখন কাকে দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাদের যেভাবে জানাবে, সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেলা ১২টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যান। ভারত থেকে আসা টিকার ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এর আগে গত ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনা হয়েছে সেটি দেশে আসছে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে। আর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকা দেয়া শুরু হবে। সেজন্য আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে অনলাইনে নিবন্ধন।