বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোতে থাকছে না ছাত্রসহ সহযোগী সংগঠন!

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অধিফতর, পরিদফতর এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করা এবং লেখাপড়া ও কাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এগুলোকে বিরাজনৈতিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনীতি বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন না রাখার প্রস্তাব দিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) থেকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন সংক্রান্ত বিধান আলাদা করে নতুন পৃথক একটি আইন তৈরির খসড়ায় এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। এরই মধ্যে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে তাদের মতামত চেয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সর্বসাধারণের মতামতও নিতে চায় কমিশন।

জনগণের মতামত নেয়ার জন্য ইসির ওয়েবসাইটে এরই মধ্যে বিষয়টি দেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছ থেকে আসা মতামতের ভিত্তিতে এই প্রক্রিয়ার ফয়সালা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসির দায়িত্বশীলরা।

এদিকে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের খসড়ায় নির্বাচন কমিশনের দেয়া এই ধারা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং রাজপথের অন্যতম বড় দল বিএনপিসহ কেউই ইসির এমন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হচ্ছে না।

বরং তারা এটিকে গণতন্ত্রের পথে বাধা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে সুধীজনরা ইসির এই বিধানটির উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেছেন।

তারা মনে করেন, এই আইনটি কার্যকর হলে শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাসমুক্ত হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সংগঠন না থাকায় তারা তদবির বাণিজ্যসহ নানা ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে কাজে মন দিতে বাধ্য হবে।

ইসির প্রস্তাবিত খসড়া আইনে নিবন্ধনের শর্তাবলিতে ৪-এর ‘খ’ দফায় ‘ই’ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক বা ছাত্র এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের সমন্বয়ে বা অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে অঙ্গ সংগঠন থাকিবে না। তবে শর্ত থাকে যে, তাহাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হইবার কিংবা সংগঠন, সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করিবার ও বর্ণিত সকল প্রকার গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করিবার ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তি হিসাবে, চলতি আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকিবে না।’

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব মো. আসাদুজ্জামান এ বিষয়ে মানবকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের খসড়ায় এই ধারাটি নির্বাচন কমিশন দেশ ও জনগণের স্বার্থেই সংযোজন করেছে। এটি কার্যকর হলে শিক্ষাঙ্গন ও প্রতিষ্ঠানগুলো সন্ত্রাসমুক্ত হবে। কাজের গতি বাড়বে। তবে ইসি এটি চূড়ান্ত করেনি। এ

বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে। ইসির ওয়েবসাইটেও এটি প্রকাশ করা হয়েছে। জনমতের ভিত্তিতেই বিধানটি বিষয়ে ফয়সালা হবে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত প্রায় সব দলেরই অনুমোদিত অঙ্গ সংগঠন রয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র সংগঠন ও শ্রমিক সংগঠন রয়েছে সব দলেরই। এ ছাড়া দলের অনুমোদনপ্রাপ্ত না হলেও নানা নামে প্রতিটি দলেরই অঙ্গসংগঠন রয়েছে অনেক। এসব সংগঠনের অনুষ্ঠান-কমসূচিতে দলের সিনিয়র নেতারা নিয়মিত যান। আলোচনায় অংশ নেন। মূলত এসব অঙ্গ সংগঠনই আলোচনায় রাখছে দল ও দলীয় কার্যক্রম। ইসির এসব অঙ্গ সংগঠন না রাখার প্রস্তাবের বিষয়ে তাই দলগুলোর নড়াচড়া একটু কম। তবে এমন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হোক- অনেক নেতাই এমনটি চান না বলেই জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের এই ধারাটি নিয়ে এখনো দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মতামত চ‚ড়ান্ত করা হয়নি। দলে আলোচনা করে ফয়সালা হলে এ বিষয়ে জানানো হবে।

ক্ষমতাসীন দলটির আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, নতুন আইনের এই বিধানটি নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে ইসির এমন প্রস্তাবে তার নিজের সায় নেই জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই রাজনীতি করা ও সংগঠন করার অধিকার রয়েছে। এটি তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।

বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তিনি জানান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এ ধরনের প্রস্তাবে আমরা একমত নই। আমার ধারণা, আওয়ামী লীগও আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত। ঐতিহ্যগতভাবে স্বাধীনতার আগে ও পরে সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এভাবে হয়ে আসছে। এই ধারাটি আগেও ছিল। সেখানে বলা হয়েছিল সহযোগী সংগঠন হিসেবে শ্রমিক ও ছাত্র সংগঠন থাকবে। এই ধারা পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেই মনে করছে বিএনপি।’

প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এই খসড়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে ইসি যদি এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে থাকে সেটি সঠিক হবে না। অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠন না থাকলে দল জনপ্রিয়তা পায় না। অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, যেসব রাজনৈতিক নেতা বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই ছাত্র সংগঠন কিংবা অন্য কোনো সহযোগী সংগঠন থেকেই এসেছেন। ইসির এই প্রস্তাবের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের একমত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই আমি মনে করি।’

SHARE THIS ARTICLE