আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বিদেশি প্রতিষ্ঠান নির্মিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও অন্যান্য হার্ডওয়্যার ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে চীন সরকার। দুই বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এটি নিশ্চিত করতে হবে এবং দেশীয় হার্ডওয়্যার ব্যবহার বাড়াতে হবে। খবর টেকরাডার ও দ্য রেজিস্টার।
স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে দীর্ঘ ছুটি শেষে ফিরে আসা বেশকিছু সরকারি কর্মকর্তাকে এটি কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদেশপত্রে বিদেশী হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের ব্যবহার বন্ধের কথা বলা হয়েছে। ফলে এইচপি, ডেলের মতো প্রতিষ্ঠান বড় বাজার হারাবে। হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলোও বাজার হারানোর পথে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মাইক্রোসফটের উইন্ডোজের বিকল্প হিসেবে চীন লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এদিক থেকে চীনে লিনাক্সের বাজার প্রসারে সাংহাইভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড সফটওয়্যার অন্যতম প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করবে।
বর্তমানে শুধু কম্পিউটারের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মাইক্রোপ্রসেসরের মতো অপরিবর্তনযোগ্য যন্ত্রাংশ এ তালিকার বাইরে রয়েছে। অদূরভবিষ্যতে এগুলোও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাদেশিক সরকারগুলোকেও শিগগিরই এ নির্দেশনা অনুসরণে চীন সরকার চাপ প্রয়োগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আদেশপত্রে আরো বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে স্পেশাল অনুমতিপত্র রয়েছে, তারা এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে না। ব্লুমবার্গের সূত্রের তথ্যানুসারে, প্রথম দিকে এ ধরনের অনুমতি পাওয়া সহজ হলেও ভবিষ্যতে তা কঠিন হবে।
ফাইভজি প্রযুক্তির আড়ালে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে হুয়াওয়ে ও জিটিইর কার্যক্রমকে কালো তালিকাভুক্ত করে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে বিশ্ববাজারে প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যবসায়িক সংকোচন ঘটে। এর পর পরই হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে বৈদেশিক নির্ভরতা কমাতে কাজ শুরু করে চীন। একসময়ের পরিচিত ব্র্যান্ড জিটিই অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। অন্যদিকে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের অনুমতি হারানোয় হুয়াওয়ে নিজস্ব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের উন্নয়ন কাজ শুরু করতে বাধ্য হয়।
বর্তমানে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। এ অবস্থায় প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনে চীন সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। এর অংশ হিসেবেই কম্পিউটার পণ্য ব্যবহার বন্ধে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকদের ধারণা। এর মাধ্যমে নির্ভরতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব পণ্য ব্যবহারের মাত্রাও বাড়বে।
বিক্রির বিষয়ে এইচপি ও ডেলের মন্তব্য চাওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকা চীন দূতাবাসে দ্য রেজিস্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিক্রি কমে যাওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র কোনো মন্তব্য নেই বলে জানান।
চীনে বিদেশি কম্পিউটারের ব্যবহার বন্ধে সরকারি নির্দেশ এটিই প্রথম নয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বিদেশী কম্পিউটার ও সফটওয়্যার পরিবর্তনে সরকারি কর্মকর্তাদের বেইজিংয়ের নির্দেশ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে সময় চীনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরোধ চলছিল। পাশাপাশি হুয়াওয়ের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তিন বছরের মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।