আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মরণ ভাইরাস করোনা ভারতেও কালো থাবা বসিয়েছে। আর এই ভাইরাস ঠেকাতে জারি করা হয়েছিল কঠোর লকডাউন। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর গত কাল সোমবার থেকে ভারতে ধর্মীয় উপাসনালয়, হোটেল, শপিং মল ও রেস্তোরাঁগুলো খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
দিল্লির সুপ্রাচীন জামা মসজিদের দরজাও আজ থেকে আবার মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে, তবে সেখানেও নামাজের জন্য নানা নতুন নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। জামা মসজিদের শাহী ইমাম আহমেদ বুখারির কথায়, সরকারের নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে আমরা এখানে তার চেয়েও বেশি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি।
আর দিল্লিতে এখন যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, তাতে প্রবল আতঙ্ক তো আছেই। তবু সরকার যখন উপাসনালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েইছে, সেই অনুযায়ী আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি, বয়স্ক ও বৃদ্ধদের আসতে নিষেধ করছি। মসজিদ থেকে কার্পেট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওজু বাড়ি থেকেই করে আসতে হবে এবং প্রত্যেককে নিজস্ব জায়নামাজ ও স্যানিটাইজারও আনতে বলা হচ্ছে।
শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, আজ থেকে খুলে গেছে অনেক বন্ধ শপিং মলের তালাও। ডিএলএফ শপিং মলসের শীর্ষ কর্মকর্তা পুস্প বেক্টর বলছিলেন, গুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসন তাদের মলের ভেতর বেশ কয়েকটি ‘স্ট্যান্ডঅ্যালোন স্টোর’
খোলার এবং খাবারের দোকানগুলোর ডেলিভারি ও টেকঅ্যাওয়ের অনুমতি দিয়েছেন। আটচল্লিশ থেকে বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে আরও মল খুলে যাবে, এরই মধ্যে স্যানিটাইজেশন চলছে পুরোদমে এবং আমরাও সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
রেস্তোরাঁগুলোকেও তাদের ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসন নিয়ে খুলতে বলা হয়েছে, তবে আজ প্রথম দিনে শপিং মল বা রেস্তোরাঁয় ‘ফুটফল’ ছিল না বললেই চলে। ধর্মস্থানগুলোতে অবশ্য ভক্তদের ভিড় ছিল ভালোই।
মধ্য দিল্লির ঝান্ডেওয়ালা মন্দিরে আসা ললিতা দেবী যেমন সেই ফেব্রুয়ারির পর আজ তিন মাস বাদে সেখানে এসেছিলেন। আর তিনি এ ব্যাপারেও নিশ্চিত যে সবাই সরকারের গাইডলাইনস মেনে চললে কোনো অসুবিধা হবে না, ভক্তরাও মাতারানির কৃপা পাবেন।
কিন্তু বড় সংখ্যায় জনসমাগম হয়, ভারতে সেই জায়গাগুলো এভাবে ‘আনলক’ করা হলো এমন একটা সময়ে যখন শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় ভারত বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। রোজ নতুন রোগী পাওয়া যাচ্ছে হাজার দশেক করে, কিন্তু সরকার লকডাউন আর বাড়ানোর মতো অবস্থাতেই নেই।
ব্যাঙ্গালোরেন বাসিন্দা অধ্যাপক গিরিশ রামাইয়ার কথায়, পরিস্থিতি যে আবার স্বাভাবিক হচ্ছে, মন্দির-মল-রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়া হচ্ছে এটা ভালো লক্ষণ। অর্থনীতির ইঞ্জিনকে আবার চালু করতেই হবে, কারণ আমাদের অনেকগুলো দিন নষ্ট হয়ে গেছে। দেশের স্বার্থেই আমাদের সব আবার খুলে দিতে হবে – ধীরে ধীরে, এবং যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে।
তবে ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন যে দুটি রাজ্যে, সেই মহারাষ্ট্র ও তামিলনাডুতে এখনো মন্দির-মসজিদ বা মল-রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি মেলেনি। নানা বিধিনিষেধ বহাল আছে বহু তথাকথিত ‘কন্টেইনমেন্ট জোনে’ও, অর্থাৎ যেখানে অনেক বেশি সংখ্যায় করোনা পজিটিভ রোগীরা আছেন।