রাশিয়ার টিকা নিয়ে যত আশা ও আশঙ্কা

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) টিকা প্রস্তুত। পরশু বুধবার যদি রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন পায় তাহলে তা মাত্র দুই দিন বা কয়েক ঘণ্টার হিসাব-নিকাশ—করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্বের প্রথম টিকা তৈরির রাশিয়ার এই দাবি যতটা আশার আলো দেখাচ্ছে, ততটা আশঙ্কার মেঘ জমেছে বিশেষজ্ঞদের মনে।

করোনায় পর্যুদস্ত বিশ্বে কে প্রথম টিকা আনবে তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যেমন প্রতিযোগিতা আছে, তেমনি আছে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যেও। চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। চীন অবশ্য একটি টিকা উদ্ভাবনের কথা জানিয়ে শুধু নিজের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দিচ্ছে। এরপর বিশ্বে ‘প্রথম করোনার টিকা’ উদ্ভাবনের ঘোষণাটি যখন রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তখন রীতিমতো নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। টিকা উদ্ভাবনের যে ধাপগুলো আছে সেগুলো সম্পন্ন করেই এগোনো উচিত—এমন বক্তব্য দিয়ে রাশিয়ার টিকা সম্পর্কে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।

এখন টিকা নিবন্ধনের প্রাক্কালে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাশিয়াতেও। ওই দেশটির একজন ভাইরোলজিস্ট সতর্ক করে বলেছেন, দ্রুততার সঙ্গে টিকার ভুল ফর্মুলা আসলে সংক্রমণ আরো বাড়াবে।

ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অব ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির গবেষণাগারের সাবেক প্রধান আলেকজান্দার চিপুরনভ বলেছেন, ‘রাশিয়ায় অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি কভিড-১৯ টিকা বিপজ্জনক হতে পারে। এই টিকার ফর্মুলা যদি যথার্থ না হয়ে থাকে তাহলে এটি আরো বেশি সংক্রমণের কারণ হতে পারে।’

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটির ইংরেজি সংস্করণে বলা হয়েছে, দ্রুত টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে। রাশিয়াতে এর পরীক্ষাও চালানো হয়েছে। এটি শিগগিরই নিবন্ধন পেতে পারে। এর পরই এটি বড় পরিসরে উৎপাদনে যাবে। করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা উদ্ভাবনের প্রচেষ্টায় থাকা বিশ্বের অনেক দেশের মধ্যে রাশিয়া অন্যতম।

রাশিয়ার ভাইরোলজিস্ট আলেকজান্দার চিপুরনভ তাঁর দেশের সম্ভাব্য করোনার টিকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হবে তার শরীরে যদি এর আগেই সুনির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবডি থেকে থাকে তাহলে সেই টিকার প্রভাবে করোনাভাইরাস আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এ কারণেই টিকা নিয়ে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন। কিছু দেশে লোকজন যখন টিকা নিয়ে কাজ করে তখন এর ফলাফল তাত্ক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, আমরা কী নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু রাশিয়ার টিকার ক্ষেত্রে আমি এ ধরনের কিছু (গবেষণার ফলাফল) দেখছি না।’

আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশের কম্পানি যখন টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা চালাচ্ছে তখন তারা এর বিভিন্ন ধাপের ফলাফল ও তথ্য অনলাইনসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করছে। অন্যদিকে রাশিয়ার ‘আশাপ্রদ’ টিকাটি উদ্ভাবন ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে পুরোপুরি গোপনীয়তার সঙ্গে।

SHARE THIS ARTICLE