আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ জুমু’আহ শব্দটি আরবি। এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। যেহেতু সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সঙ্গে সে দিনের জোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে, সে জন্য এই নামাজকে জুমার নামাজ বলা হয়।
জুমার খুতবায় রাসুলুল্লাহ (সা.) সবাইকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে উৎসাহিত করতেন। কেননা এটাই তাদের কল্যাণ লাভের বড় মাধ্যম। তারপর মৃত্যুর বিভীষিকা বর্ণনা করে সতর্ক করতেন। কেননা মানুষ দুনিয়ার মায়ায় পড়ে নিজেকে দুনিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা ভেবে বসে এবং মৃত্যুকে এড়িয়ে থাকতে চায়। কোনো জায়গা থেকে কোনো প্রতিনিধিদল উপস্থিত হলে তিনি প্রচারমূলক আয়াত পাঠ করতেন। এভাবে নবীজি (সা.) তাঁর খুতবায় আল্লাহ, রাসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, মিরাজ, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতেন। বিশেষত আল্লাহ তাঁর বন্ধু ও অনুগতদের জন্য যেসব পুরস্কার এবং তাঁর শত্রু ও অবাধ্যদের জন্য যেসব শাস্তি রেখেছেন, তা সবিস্তারে বর্ণনা করতেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন জুমার খুতবা দিতে দাঁড়াতেন, তখন (কখনো কখনো) তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উঁচু হতো এবং চেহারা মোবারকে ক্রোধের লক্ষণ পরিলক্ষিত হতো। তিনি খুতবায় আম্মা বাদ বলতেন। খুতবা সংক্ষিপ্ত করতেন এবং নামাজ দীর্ঘ করতেন। তিনি খুতবায় ইসলামের মূলনীতি ও শরিয়তের বিধি-বিধান বর্ণনা করতেন। কখনো কোনো বিষয়ে মুসলমানদের আদেশ বা নিষেধ করার প্রয়োজন পড়লে তিনি খুতবায় তা করতেন। যেমন—খুতবার সময় প্রবেশকারী এক ব্যক্তিকে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের আদেশ করেছেন। সময়ের দাবি অনুপাতে তিনি খুতবা দিতেন। মুসলিমদের মধ্যে অভাব-অনটন দেখা দিলে দান-খয়রাত করার আদেশ দিতেন এবং সাদকা করার প্রতি তাদের উৎসাহ দিতেন। খুতবায় দোয়া করার সময় সময় কিংবা আল্লাহর জিকির করার সময় শাহাদাত আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করতেন।
অনাবৃষ্টি দেখা দিলে ও বৃষ্টির প্রয়োজন অনুভব করলে তিনি খুতবাতেই বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন। মসজিদে লোকেরা একত্র হলেই তিনি বের হয়ে আসতেন। মসজিদে প্রবেশ করেই সালাম দিতেন। মিম্বারে আরোহণ করে উপস্থিত মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে আরেকবার সালাম দিতেন। তারপর মিম্বারে বসতেন। এরই মধ্যে বেলাল (রা.) আজান দেওয়া শুরু করতেন। আজান শেষ হলে তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা শুরু করতেন। খুতবা প্রদানকালে তিনি লাঠি বা ধনুকের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। তাঁর মিম্বারে তিনটি সিঁড়ি ছিল। মিম্বার নির্মাণের আগে তিনি খেজুরগাছের একটি গোড়ার ওপর দাঁড়াতেন। মসজিদের মাঝখানে মিম্বার স্থাপিত হয়নি; বরং পশ্চিম পাশে স্থাপিত হয়েছিল। মিম্বার ও দেয়ালের মধ্যে মাত্র একটি ছাগল চলাচলের দূরত্ব ছিল।
তিনি যখন জুমা ছাড়া অন্য সময় মিম্বারে বসতেন কিংবা জুমার দিন খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বারে দাঁড়াতেন, তখন সাহাবিরা তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। তারপর সামান্য সময় বসতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবা দিতেন। খুতবা শেষ করলেই বেলাল (রা.) ইকামত দেওয়া শুরু করতেন। তিনি মুসলিমদের খুতবার সময় ইমামের নিকটবর্তী হওয়ার আদেশ দিতেন এবং চুপ থাকতে বলতেন। তিনি বলতেন, জুমার দিন খুতবার সময় যে ব্যক্তি তার পাশের ব্যক্তিকে বলবে, চুপ থাকো, সে অনর্থক কাজ করল। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করবে তার জুমা বাতিল হয়ে যাবে (মর্যাদা ও সওয়াব নষ্ট হবে)। জুমার নামাজ শেষে তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ করতেন এবং দুই রাকাত জুমার সুন্নত নামাজ আদায় করতেন। তিনি জুমার নামাজের পর চার রাকাত সুন্নত পড়ারও আদেশ দিয়েছেন।
জাদুল মাআদ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর