আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজনের তালিকায় স্থান পেতে যাচ্ছে ‘দুবাই এক্সপো ২০২০’। এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক রাজধানতে দুবাই এক্সপো ২০২০ এর কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। সকলের দৃষ্টি এখন দুবাইয়ের দিকে।
এই সপ্তাহে, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শো’টি ৯০ মিনিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে, যেখানে শত শত শিল্পী উপস্থিত থাকবেন। স্টার-স্টডেড লাইন-আপ বিশ্বজুড়ে শিরোনামের কাজগুলির পাশাপাশি সেরা স্বদেশী প্রতিভাকে একত্রিত করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর শুরু হবে শিল্প-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই সম্মিলন। এতে অংশ নেবে ১৯২টি দেশ।
দুবাই এক্সপোর প্রতিপাদ্য ‘কানেক্টিং মাইন্ডস, ক্রিয়েটিং দ্য ফিউচার’ তথা ‘মনসংযোগে ভবিষ্যৎ নির্মাণ’। মানবিক চেতনা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার জয়গান হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীতে।
আগামী ১ অক্টোবর শুরু হচ্ছে এই আয়োজন। পাঁচ বছর অন্তর আয়োজিত হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আন্তর্জাতিক ইভেন্ট। এবার এটি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে দুবাই। এ বছর ১৯১টি দেশ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আবিষ্কার, আলোচনা, ধারণা ও অভিজ্ঞতা ভাগ করার জন্য জড়ো হচ্ছে।
এটি শেষ হবে ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে দুর্দান্ত এই আয়োজন। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও বিশেষ দিবসে সকাল ১০টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত উপভোগ করা যাবে মেলা।
এবারের এক্সপোর লোগো লৌহযুগের প্রাচীন আংটির অনুকরণে বানানো হয়েছে, যেটি দুবাই শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাকতুমের আবিষ্কৃত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। দুবাই এক্সপোর আয়োজকরা আশা করছেন, করোনা মহামারিতে সৃষ্ট জটিলতা সত্ত্বেও ছয় মাসের এক্সপোতে প্রায় আড়াই কোটি ক্রেতা-দর্শনার্থী অংশ নেবেন।
এই এক্সপোতে সবচেয়ে বড় প্যাভিয়িলন হবে স্বাগতিক আরব আমিরাতের। ১৫ হাজার বর্গমিটারের প্যাভিলিয়নটি ডিজাইন করেছেন বিখ্যাত স্থপতি এবং প্রকৌশলী ড. সান্তিয়াগো কালাতরাভা। সৌদি আরবের ১৩,০৫৯ বর্গ মিটারের প্যাভিলিয়নটি থাকছে দ্বিতীয় স্থানে।
এক্সপোতে অংশগ্রহণকারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের দর্শকদের কোভিড-১- ভ্যাকসিন নেয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে অথবা আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ আসতে হবে। টিকা না দেওয়া দর্শনার্থীরা এক্সপো সংলগ্ন করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।
টিকিটের মূল্য:
তে একটি একক-প্রবেশের টিকিটের জন্য মূল্য হবে ৯৫ দেরহাম যা বাংলাদেশী টাকায় ২,২১৫ এবং ছয় মাসের পাসের জন্য মূল্য ১১,৫৩৫ টাকা।১৮ বছরের কম বয়সী ভিজিটর ফ্রিতে প্রবেশ করতে পারবে এবং সহপাটিরা ৫০ শতাংশ ছাড় পাবে।একাধিক এন্ট্রি পাশের জন্য ১৯৫ দেরহাম ৪,৫৮২ টাকা ৩০ দিনের জন্য সীমাবদ্ধ এন্ট্রি প্রদান করা হবে।ছয় মাসের যে কোনো সময়ের জন্যে ৪৯৫ দেরহাম ১১,৫৩৫ টাকা। https://www.expo2020dubai.com/ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট কেনা যাবে।
টিকিটের মধ্যে রয়েছে সমস্ত প্যাভিয়িলন, ইভেন্ট এবং লাইভ পারফরম্যান্স উপভোগ করার অ্যাক্সেস,এক্সপোর গতিশীল,বৈচিত্র্যময় এবং চিরকালের পরিবর্তিত বিনোদন প্রোগ্রাম উপভোগ করার সীমাহীন সুযোগ প্রদান, প্রতিদিন বিশ্ব-মানের সংগীত, নৃত্য এবং শিল্প থেকে অন্তর্দৃষ্টিযোগ্য আলোচনা ও জাতীয় দিবস উদযাপন।
আগেও হয়েছে এমন আয়োজন:
তবে এমন বৃহৎ আয়োজন এটাই প্রথম নয়। ১৮৫১ সালে লন্ডনের হাইড পার্কে বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হয়েছিল। তখন এটাকে বলা হয়েছে লন্ডনের ‘গ্রেট এক্সিবিশন’। সেই থেকে উদ্ভাবনী অর্জন উদযাপনের এমন আয়োজন জনপ্রিয়। মজার ব্যাপার হলো, ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষে প্যারিসে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলার প্রবেশপথে উন্মোচন করা হয় আইফেল টাওয়ার।
দুবাই এক্সপোতে ৫০ বছরের অর্জন তুলে ধরবে বাংলাদেশ:
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘দুবাই ২০২০ এক্সপো’তে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন তুলে ধরা হবে। ছয় মাসব্যাপী এ ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের অর্জন, পণ্য, ধারণা উদ্ভাবন, জাতীয় ব্র্যান্ড, পর্যটন এবং ইতিহাস ব্যবসায়িক পরিবেশ প্রচারের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করার চেষ্টা করা হবে।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘দুবাই ২০২০ এক্সপো’ অংশগ্রহণ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এক্সপো কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য দেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে আগামী ৩রা ডিসেম্বর ইন্টারন্যাশনাল ডে অফ পারসনস উইথ ডিজএবিলিটিস, ১৬ই ডিসেম্বর কান্ট্রি ডে, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান এবং ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন থাকবে।’
বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের এক্সিবিশন টাইটেল নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘ইন্দোমিটেবল বাংলাদেশ: টুয়ার্ডস সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট’। বাংলাদেশের দ্বিতল প্যাভিলিয়নের নিচ তলায় প্রদর্শনীর জন্য এবং দ্বিতীয় তলায় দাপ্তরিক সেমিনার ও বিজনেস টু বিজনেস সভার কাজে ব্যবহার করা হবে। এই এক্সপোর মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অগ্রগতি, সাফল্য এবং বাণিজ্য সম্ভাবনা যথাযথভাবে তুলে ধরা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।