শ্রীলংকার সংসদে প্রেসিডেন্টকে বিশাল ক্ষমতা প্রদানের বিল পাশ

আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ টানা দুই দিন তুমুল বিতর্কের পর গত বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার সংসদ রাষ্ট্রপতিকে বিপুল ক্ষমতা প্রদানের পক্ষে ভোট প্রদান করলো। সংবিধানে এই পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসা সরকারী উচ্চপদে নিয়োগ এবং আইনসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন। সংসদে নির্ধারিত বিতর্কে বিরোধী দলের সদস্যবৃন্দ তার বিরুদ্ধে সংবিধানিক ‘স্বৈরশাসক’ হওয়ার অভিযোগ তোলেন।

সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্টকে এই বিপুল ক্ষমতা প্রদানের ভোট গ্রহণ করার সময় ক্ষমতাসীন এস এল পি পি দলের একজন সদস্য বিরোধী হলে প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ প্রাপ্তি অসম্ভব হয়ে পড়ে এই সময় বিরোধী দল থেকে আটজন সদস্য বিলের পক্ষে ভোট দিয়ে বিলটিকে জয়যুক্ত করিয়ে দেন।

সরকারী পক্ষ থেকে দাবী করা হয়েছে যে, রাজাপাকশার দল ‘শক্তিশালী নেতৃত্ব’ প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই বিল পাশ করার মাধ্যমে এটি অর্জিত হবে। এদিকে বিচারমন্ত্রী আলী সাবরি সংসদকে বলেন যে জনগণের দাবীর কারণে তারা রাজাপাকসাকে আরও দায়মুক্তি এবং রাজ্য সংস্থাগুলির আর্থিক তদারকি অপসারণের কয়েকটি বিল ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। 

এই বিল পাশের কারনে রাষ্ট্রপতি এখন প্রধানমন্ত্রীসহ যে কোনও মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে পারবেন এবং পাঁচ বছরের মেয়াদের আড়াই বছরের মাথায় সংসদ ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত হবেন। ২০১৫ সালে প্রবর্তিত সংস্কারের কারণে শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিপরিষদের কোন পোর্টফোলিও তার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন এবং ২২৫ সদস্যের ৫ বছর মেয়াদের সংসদ  কেবলমাত্র সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হলে বাতিল করতে পারতেন।

এখন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট উচ্চতর আদালতের বিচারক এবং অন্যান্য উচ্চ সরকারী পদে নিয়োগ দিতে সক্ষম হবেন। পূর্বে এসকল নিয়োগ স্বতন্ত্র কমিশনার অন্তর্ভুক্ত করে একটি সংসদীয় তদারকি প্যানেলের মাধ্যমে করা হত।

বিরোধী সাংসদ গজেন্দ্রকুমার পন্নাম্বলাম বলেন: ‘এই বিলটি কেবল স্বৈরাচারী শাসনকেই নয়, দেশকে একনায়কতান্ত্রিকতার দিকে পরিচালিত করবে।’ শ্রীলঙ্কার প্রধান মুসলিম দলের নেতা, রাউফ হাকিম বলেছিলেন, ‘এই আইন পাশ হলে সংসদ একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত  হবে। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘স্বৈরাচার নিঃশব্দে হামাগুড়ি দেয়।’এস জে বি দলের নেতা এস এম মারিক্কার বলেছিলেন, ‘রাজনীতির শুরুর দিনগুলিতে জার্মানির হিটলার এই একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।”

গোটাবায়া রাজাপাকশা নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং দ্রুত তার ভাই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন। গোটাবায়া প্রাক্তন সামরিক বাহিনীর জেনারেল এবং তার ভাই মাহিন্দা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে শীর্ষ প্রতিরক্ষা সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালে তামিল টাইগারদের পরাজিত করার সময়ে তিনি মূল নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শ্রীলংকায় গৃহযুদ্ধের এই রক্তাক্ত সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অন্তর্ধানের ঘটনা ব্যাপকত্ব পেয়েছিলো। ধারনা করা হয় ঐ সময়ে ৪০,০০০ হাজার তামিল মৃত্যুবরণ করেছিলো। প্রেসিডেন্টকে বিপুল ক্ষমতা প্রদান করে এই বিল পাশ করানোকে অনেকেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন এবং শ্রীলংকার গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এই পদক্ষেপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে অনেকেরই ধারনা। 

SHARE THIS ARTICLE