আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মেজর (অবঃ) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ৯ আসামির মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সাত পুলিশ সদস্যকে র্যাবের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিতকে সাত দিন করে রিমান্ড এবং বাকি চারজনকে কারাফটকে দুদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে হত্যা মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা র্যাবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফা শুনানি শেষে কক্সবাজারের বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন এই নির্দেশ দেন।
এর আগে বিকেলের দিকে পুলিশ সাত আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করলে তাঁদের আইনজীবী জামিনের আবেদন জানান। শুনানি শেষে বিচারক হেলাল উদ্দিন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর র্যাব-১৫ সদস্যরা এসে ফের শুনানির অনুরোধ জানান। বিচারক রাত ৮টার দিকে আবার এজলাসে এসে বসলে র্যাব প্রত্যেক আসামিকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায়।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর রাত সোয়া ৯টার দিকে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তুলে জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতেই সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানো তিনজনকে র্যাবের হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে বলে সূত্রে জানা যায়।
সিনহা হত্যা মামলার বাদীর আইনজীবী মো. মোস্তফা বলেন, ‘মামলাটির এদিনের কার্যক্রম প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার পর তদন্তকারী সংস্থা এসে আদালতকে জানায়, পুলিশ থেকে কাগজপত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আসতে তাদের দেরি হয়ে গেছে। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় পুনরায় শুনানি শুনতে রাজি হয়।’
মামলার বাকি দুই আসামি কোথায় এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী মো. জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘মামলায় যে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মো. মোস্তফা নামে কেউ কক্সবাজার জেলায় নেই।’
আদালত প্রাঙ্গণে এই মামলার কার্যক্রম চলার সময় শত শত মানুষের ভিড় ছিল। কক্সবাজার পুলিশ লাইন থেকে দুটি মাইক্রোবাসে করে পরিদর্শক লিয়াকতসহ ছয় আসামিকে হাতকড়াবিহীন অবস্থায় আদালতে আনা হয়। আর আলাদাভাবে আনা হয় প্রদীপ কুমার দাশকে। তাঁর হাতেও ছিল না হাতকড়া। আদালত প্রাঙ্গণে এ নিয়ে লোকজনকে বলতে শোনা গেছে, কিছুদিন আগে খুনের মামলার আসামি না হওয়া সত্ত্বেও ফটো সাংবাদিক কাজলকে হাতকড়াসহ পিছমোড়া করে বেঁধে আদালতে তোলা হয়। অথচ সেনাবাহিনীর একজন সাবেক মেজর হত্যার আসামিদের হাতকড়া পরানো হয়নি। প্রসঙ্গত, বুধবার কক্সবাজারে সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান ও পুলিশপ্রধান স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ড ঘটনায় জড়িতদের পক্ষে-বিপক্ষে কোনো বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে না।
রিমান্ডে পাঠানো বাকি আসামিরা হলেন কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া। করোনার সময়ের হাইকোর্ট নির্দেশিত ব্যবস্থা অনুযায়ী চারজন করে দুই দফায় আসামিদের হাজত থেকে কাঠগড়ায় আনা হয়।
আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া ও বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র মিত্র জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ বক্তব্য দেন।
পরিদর্শক লিয়াকতসহ আটজন পুলিশ সদস্য গত ২ আগস্ট থেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইনে ছিলেন। গত ৩১ আগস্ট সিনহা নিহত হওয়ার পরদিন এই আটজনসহ ২১ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে মামলার ২ নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশকে চট্টগ্রাম পুলিশ হেফাজতে রেখে কক্সবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য আনা হয়।
গত ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পাশে পুলিশের গুলিতে সিনহা নিহত হন। এই ঘটনার পর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত বুধবার আদালতে হত্যা মালাটি করেন। মামলায় সিনহার সঙ্গী ও ৩১ জুলাইয়ের টেকনাফ পুলিশের করা মামলার আসামি সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্য থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গত ৪ আগস্ট সকালে অসুস্থতাজনিত ছুটির আবেদন জানিয়ে টেকনাফ থানা ত্যাগ করেন। এ ঘটনার পর এলাকার মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়—আদৌ ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত গতকাল চট্টগ্রামে ওসি প্রদীপ আটক হওয়ার কথা জানাজানির পর মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। জানা গেছে, প্রদীপ কুমার গতকাল চট্টগ্রামে মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। এরপর সিএমপি কর্তৃপক্ষ প্রদীপকে তাদের হেফাজতে নিয়ে সন্ধ্যায় কক্সবাজারের আদালতে নিয়ে আসে।
ঢাকায় র্যাবের ব্রিফিং : গত রাত সাড়ে ৮টার দিকে র্যাব সদর দপ্তরে সিনহা রাশেদ হত্যা মামলার তদন্তের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘র্যাবের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে। আমরা সেই আস্থা বজায় রেখে মামলাটির তদন্ত করব। আমরা বিজ্ঞ আদালতে সব আসামির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করি। আদালত লিয়াকত আলী, প্রদীপ কুমার দাশসহ তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বাকি চারজনকে জেলগেটে দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, এই হত্যার অভিযোগের মামলায় সব আসামিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।