আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার কৃতি সন্তান, সিলেটের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট সংগঠক, শিক্ষানুরাগী, সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী জনাব ইউছুফ জুলকারনাইন জায়গীরদার (কর্ণেল সাহেব) গতকাল শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০ স্থানীয় সময় আনুমানিক ভোর ৫:২০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তিনি ২০শে অক্টোবর কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আই সি ইউ তে তিন সপ্তাহ কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সাহায্যে থেকে রোগের সাথে যুদ্ধ করে পরজগতে পাড়ি দিলেন। যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসেন না। তিনি অল বাংলাদেশী এসোশিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড এর সম্মানিত সভাপতি , ডা: জিন্নুরাইন জায়গীরদার সাহেব এর বড় ভাই। ডা: জিন্নুরাইন জায়গীরদার আইরিশ বাংলাপোষ্টকে বলেন, আগামী কাল সোমবার মরহুমের নামাজের জানাজা যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় সম্পন্ন হবে। তিনি তার ভাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। সকলের নিকট উনার সকল ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
জনাব ইউছুফ জুলকারনাইন জায়গীরদার একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের অন্যতম ডাইরেক্টর, সিলেট শহরের হাউজিং এস্টেট নিবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবী ও ব্যাংকার।
কর্ণেল ভাই নামে খ্যাত ইউসুফ জুলকারনাইন জায়গীরদার মানবতার নিরব সেবক। পরিচিত বন্ধু কিংবা অপরিচিত কেউ কোনো অসুবিধায় পড়লে তিনি সবার আগে। নিজের সমস্যার মত জড়িয়ে পড়েন অন্যের সমস্যা মোকাবেলায়। অর্থনৈতিক সংকট হলে সাধ্যমত সহায়তা করেন। নিরবে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েও সাহায্য করেন।
১৯৯৭ সালে সিলেটে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে কয়েক জন বন্ধু মিলে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বৃটিশ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (বিবিআইএস)।
সমাজের উন্নায়ন ও ভালো কাজে সহায়ক শক্তি হিসেবে যারা সরব ছিলেন জুলকারনাইন জায়গীরদার তাদের অন্যতম। আঁধারে আলো ছড়ানো এমন একজন স্বেচ্ছাসেবী ও স্বার্থহীন পরোপকারী মানুষ আজকাল খুবই কম আছেন।
আমেরিকান প্রবাসী জুলকারনাইন জায়গীরদারের গ্রামের বাড়ী সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুর বাজার ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে। তার পিতা মানবিক আইনজীবী ও জেলা ফুলকুড়ির সভাপতি লুৎফুর রহমান জায়গীরদারও ছিলেন একজন সুনামখ্যাত সামাজিক ব্যক্তিত্ব। তিনি কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে পড়ালেখা করেছেন। সেখানে ছাত্র সংসদে তিনি ফাইন্যান্স মিনিস্টার ছিলেন। তখন মালেক নেয়াজ খান ছিলেন প্রাইম মিনিস্টার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সোসিয়েল মিনিস্টার।
লুৎফুর রহমান জায়গীরদার এমসি কলেজে অধ্যয়নকালে আজান দিয়ে নামাজ পড়ার কারণে তাকে বহিস্কার করা হলে আন্দোলন শুরু হয়। সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হোসাইন আহমদ এ আন্দোলনে যোগদানকে ‘ওয়াজিব‘ রায় দিলে আন্দোলনের তীব্রতা এতই বেড়ে যায় যে, ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। কিন্তু ছাত্র জনতার প্রতিরোধে তা ভঙ্গ হয় এবং কর্তৃপক্ষ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।
জুলকারনাইন জায়গীরদারের দাদা আব্দুল খালিক জায়গীরদার অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তিনি জেলা পরিষদ সদস্য থাকাকালে আম্বরখানা হাউজিং এষ্টেট প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ ছিলেন। দীর্ঘদিন অল-আসাম মুসলিম লীগের প্রচার বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জনাব ইউছুফ জুলকারনাইন জায়গীরদার জালালাবাদ এসোসিয়েশন সহ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও ছিলেন সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত। কানাডার টরন্টো থেকে প্রকাশিত জালালাবাদবার্তা.কম এর একজন সম্মানিত উপদেষ্টা হিসেবে তিনি সর্বদাই বিভিন্ন ধরনের উপদেশ ও পরামর্শ দিয়ে এই অনলাইন নিউজ পোর্টালটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন অনেক দূর।
জালালাবাদ বার্তা’র এই উপদেষ্টার মৃত্যুতে জালালাবাদবার্তা.কম পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক জনাব আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টা জনাব দেওয়ান শোয়েব আফজাল, উপদেষ্টা জনাব দেওয়ান আব্দুল গফরান চৌধুরী, উপদেষ্টা ছাদ চৌধুরী, উপদেষ্টা লায়েকুল হক চৌধুরী, উপদেষ্টা মীর লিয়াকত আলী এবং বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান সাইফুল ইসলাম।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বলিষ্ট ভূমিকা পালনকারী জায়গীরদার পরিবারের সদস্য কর্মবীর জুলকারনাইন জায়গীরদার আজ আর নেই। আল্লাহ উনাকে দয়া করুন, মার্জনা করুন আর জান্নাতে স্থান দিন। আমিন।