সুবিধা অর্জনের জন্য বিবাহ আইনগতভাবে কার্যকর। আইরিশ সুপ্রিম কোর্টের রায়

এ,কে, আজাদ – আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আয়রল্যান্ডের সুপ্রীম কোর্ট গত ২৭শে জুলাই সোমবার একটি উল্লেখযোগ্য রায় প্রদান করেছে। পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আদালত পূর্বে হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত একটি রায়কে পুরোটাই উল্টে দেন। পূর্বে হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে বলা হয়েছিল যে, যেহেতু আইন ও বিচারমন্ত্রী এই মর্মে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে একজন পাকিস্তানী ব্যাক্তির একজন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিকের সাথে বিবাহ শুধুমাত্র সুবিধা অর্জনের (Marriage of Convenience) লক্ষ্যে করেছিলেন, তাই সেই বিয়ের কোন আইনি বৈধতা (Legal Nullity) থাকেনা। �উল্লেখযোগ্য যে, আয়ারল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী একজন পাকিস্তানী বংশদ্ভূত ব্যাক্তি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একজন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মহিলা নাগরিকের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর এপ্রিল মাসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রেসিডেন্স কার্ডের জন্য আবেদন করলে অক্টোবর মাসে তার আবেদন গৃহীত হয় এবং তাকে রেসিডেন্স কার্ড প্রদান করা হয়। ২০১১ সালের মার্চ মাসে ঐ দম্পতি আলাদা হয়ে যান এবং ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তার এক সন্তান হয়, ঐ স্বামী পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করেন। পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ব্যাক্তি পরে দাবী করেন যে, তাদের পূর্বে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি এবং তারা ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে পুনরায় বিবাহিত জীবন যাপন শুরু করেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে যখন তিনি দ্বিতীয়বার রেসিডেন্স কার্ডের জন্য আবেদন করেন তখন জাস্টিস মন্ত্রী ঐ বিবাহকে সুবিধা অর্জনের জন্য বিবাহ (Marriage of Convenience) হিসেবে গণ্য করে ঐ কার্ড প্রদান রহিত করেন। পুনর্বিবেচনার পর ২০১৭ সালে তাকে আয়ারল্যান্ড থেকে নির্বাসনের (Deportation) আদেশ প্রদান করা হয়।

Portuguese woman suspected of involvement in hundreds of sham ...

��এই দম্পতি এবং মহিলার সন্তান আদালতের স্মরনাপন্ন হলে হাইকোর্টের বিচারপতি মিঃ রিচার্ড হামফ্রে ২০১৮ সালে প্রদত্ত এক রায়ে প্রসঙ্গত উল্লেখ করেন যে, সুযোগ সুবিধা অর্জনের জন্য আয়োজিত বিবাহের কোন বৈধতা নেই এবং সেই বিবাহের সূত্রে কোন প্রকার অধিকার অর্জিত হতে পারেনা। এরপর উচ্চ আদালত এ ব্যাপারে ঐ দম্পতিকে বিশেষ লিপফ্রগ অর্থাৎ সরাসরি আপিলের সুযোগ প্রদান করা হয়। আইনগত বিষয়ে কোর্টকে সহায়তাকারী আইরিশ হিউম্যান রাইটস এন্ড ইকুয়ালিটি কমিশন, সুবিধা অর্জনের বিবাহকে অবৈধ ঘোষণা করা কোর্টের ভুল ছিল বলে উপস্থাপন করেন। আপিলের আর্জিতে সুপ্রিম কোর্টকে বলা হয় যে, ঐ দম্পতি কোন রকম অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে একত্রে বসবাস করছিলেন না বরং তার অভিবাসন সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে তিনি কাজ করার সুযোগ পাবেন সেটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মিঃ মেক কেনি তার রায়ে বলেন যে, হাই কোর্টের ঐ রায়ে সাধারণ জনগুরুত্ত্বপূর্ন বিষয় উঠে এসেছে, বিশেষ করে এই রায় হাই কোর্টের অপর একটি রায়ের সাথে দ্বান্দিক হয়ে গেছে। যতটুকু বোঝা যায়, উচ্চ আদালত পরোক্ষভাবে মন্ত্রীর গৃহীত সুবিধা অর্জনের বিবাহ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে কিন্তু তাই বলে ঐ বিবাহ আইনতভাবে অকার্য্যকর হয়ে গেছে কিংবা ঐ বিবাহ সম্পর্কিত সকল অধিকার রহিত হওয়া সঠিক নয়। মন্ত্রীর ঐ রকম ঘোষণা দেবার কোন ক্ষমতা নেই এবং প্রকৃতপক্ষে মন্ত্রী ঐ রকম সুদূরপ্রসারী কোন ঘোষণা প্রদানের উদ্দেশ্য কোথাও ব্যক্ত করেন নি। তিনি তার রায়ে বলেন যে, ঐ কার্য্যপ্রনালীগুলি অভিবাসন প্রসঙ্গে উত্থাপিত হয়েছে এবং উচ্চ আদালতের বিবাহ সম্পর্কিত কোন সংশ্রব না থাকায় হাই কোর্টের সম্মানিত মিঃ হামফ্রে প্রদত্ত অভিমত আইনকে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করেনি। এব্যাপারে সঠিক আইনগত অবস্থান এমন ক্ষেত্রে সমাধান করতে হবে, যে ক্ষেত্রে বিষয়টি যথাযথভাবে উত্থাপিত হয়। তিনি তার রায়ে বলেন যে, হাই কোর্ট আরো ভ্রান্ত হয়েছেন, কেননা এই বিয়েটি সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে হয়েছিলো তাই তাকে নির্বাসন প্রদানের ব্যাপারে কোন ব্যাক্তিগত কিংবা পারিবারিক অধিকার বিবেচনার জন্য উত্থাপিত হয়না। সকল বিবেচনায় ইউরোপিয়ান কনভেনশন ফর হিউম্যান রাইটস (EHCR) এর অনুচ্ছেদ ৮ এ প্রদত্ত অধিকারগুলো ভারসাম্যপূর্ন হওয়া কাম্য। তিনি আরো বলেন, এই দম্পতি তাদের ঐ বিবাহ, সুবিধা অর্জনের নয় বলে তাদের দাবী অব্যাহত রেখেছেন এবং এটি অবশ্যই প্রক্রিয়া পরিস্থিতির একটি সাধারণ অপব্যবহার বলে মনে হয় না। বর্তমান রায়ে বলা হয়, অভিবাসন কার্যক্রমে কোন সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে বিবাহের ব্যাপারে মন্ত্রীর সন্ধানের উপর নির্ভর করা যেতে পারে তবে এটি বিবাহটিকে “আইনগত অকার্য্যকর কিংবা অবৈধ” করে দেয়না না।� আপিলের মূল বিষয় ছিল, ঘটনা ও পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সিভিল রেজিস্ট্রেশন আইন ২০০৪ এর অধীনে, বিবাহ আইনানুগ কিনা এবং সুবিধা অর্জনের বিবাহ বিষয়ক নির্বাহীর পরবর্তী সিদ্ধান্তের ফলে বিবাহ থেকে আইনি অধিকার সেই পুরুষ, মহিলা ও সন্তান এখনও প্রাপ্ত হয় কিনা। সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি উইলিয়াম ম্যাককেইনি উপসংহারে বলেন, ইউরোপীয়ান কমিউনিটির ২০১৫ সালের (মুক্ত চলাফেরার) আইনের অধীনে লোকটির আবাসিক আবেদনের প্রসঙ্গে মন্ত্রীর গৃহীত নির্বাসনের (Deportation) সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করা যেতে পারে তবে এই সিদ্ধান্ত তাদের বিবাহকে অবৈধ করে দেয়না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সুবিধা অর্জনের জন্য বিবাহ হয়েছে নির্ধারন করা হলে মন্ত্রীকে একমাত্র ঐ নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে বিবাহকে উপেক্ষা করার অধিকার দেয়। নির্বাসন প্রক্রিয়া সন্ধানের সুবিধার্থে পূর্বের বিবাহ প্রসঙ্গ আমদানির অধিকার মন্ত্রীর আছে তবে মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপীয় কনভেনশনের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে আবেদনকারীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অধিকারের ক্ষেত্রে অবশ্যই এই প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমনটি করা হয়নি বলে মনে করেন তিনি। অনুসন্ধানের ভিত্তিতে, আদালত এই দম্পতি এবং শিশুটির পক্ষ থেকে ঐ পুরুষের জন্য করা ২০১৭ সালের নির্বাসন আদেশের বিষয়ে আংশিকভাবে আপিলের অনুমতি দিয়েছে।��সিনট সলিসিটরের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয় যে, “বিগত কয়েক বছরে সিনট নাগরিক ইমিগ্রেশন সলিসিটাররা শত শত সিদ্ধান্ত পেয়েছেন যেখানে মন্ত্রী এমন পরিস্থিতিতে বিবাহকে বৈধভাবে অকার্যকর ঘোষণা করেছেন যেখানে মন্ত্রীর অভিমত যে বিবাহটি একটি সুবিধার ভিত্তিতে এবং “অভিবাসন সুবিধা” অর্জনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমরা এই ক্লায়েন্টদের পক্ষে উচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমাদের অনেক ক্লায়েন্ট যারা তাদের ইইউ স্বামী কিংবা স্ত্রীর সাথে সত্যিকারের সম্পর্কে যুক্ত হন তাদের সুবিধা অর্জনের বিবাহে হিসাবে বিবেচনা প্রায়ই অন্যায়ভাবে বিভিন্ন আদেশ জারি করা হয়। আমরা তাদের সাথে হাইকোর্টের কাছে বিচারিক পর্যালোচনা অ্যাপ্লিকেশন গুলি অনুসন্ধান করে চ্যালেঞ্জ করার জন্য মন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া এবং আবেদনপত্র প্রস্তুত করতে কাজ করে যাচ্ছি।” এই ওয়েব সাইটে আরও জানানো হয় যে, এই সম্পর্কিত কোন আবেদন কিংবা মামলার ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সহায়তা করবেন। � সূত্রঃ আইরিশ টাইমস, ডিসিসিস, সিনট.আই ই

SHARE THIS ARTICLE