বৈরুতে বিস্ফোরণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ৪ জন বাংলাদেশীর প্রাণহানি

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গত ৪ঠা আগস্ট মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে যে দুটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে তাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৩৫ জনে এসে দাঁড়িয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ৫ হাজারের বেশী বলে লেবাননের রেড ক্রসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিস্ফোরনের লাইভ ভিডিওতে দেখা যায় যে বিশাল বিল্ডিং প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরিত হচ্ছে। শহরের অধিবাসীরা জানান এই প্রচণ্ড শব্দ পুরো শহর জুড়েই আতংক সৃষ্টি করে এমনকি এই বিস্ফোরনকে অনেকে প্রচণ্ড ভূমিকম্প বলে অনুভব করেন। বিস্ফোরণের এই প্রচন্ড শব্দ এমনকি ২০০ কিলোমিটার দূরবর্তী পার্শবর্তী দেশ সাইপ্রাস থেকেও শোনা যায়। নিহতদের লাশের ছড়াছড়ি আর আহতদের আর্তনাদ ছিল মর্মান্তিক। শহরের প্রায় প্রতিটি ইমারৎ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এমনকি দূরবর্তী ইমারতের কাঁচের জানালা দরজা ভেঙ্গে পড়ে। শহরের প্রায় সকল হাসপাতাল এই বিস্ফোরণে কিছুনা কিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে বেডের স্বল্পতার এই সময়ে আহতদের সেবা করা কিংবা ভর্তি দেয়া নিয়ে চিকিৎসক এবং সেবাকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছিলেন। রক্তের প্রয়োজন ছিল প্রচুর।

খৌরি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত একজন চিকিৎসক জানান, তারা ইতিমধ্যে ৩০০ জনের বেশী আহতদের চিকিৎসা করেছেন এবং হাসপাতালের ৬টি অপারেশন থিয়েটারের প্রতিটিতেই সারা রাতব্যাপি জরুরী অপারেশন চলছিল। হাসপাতালের সকল চিকিতসাকর্মীরা একযোগে কাজ করেও সেবা দিতে হিম শিম খাচ্ছিলেন। লেবাননের রেড ক্রসের এক প্রতিনিধি বলেন, “এটা একটা বিশাল বিপর্য্যয়” । সারা লেবানন জাতি শোকে মুহ্যমান। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব এক টেলিভিশন ভাষণে সারা বিশ্বকে তাদের বিপদে সাহায্য করার আহবান জানিয়ে বলেন, “একটি ছোট জাতি হিসেবে আমরা একটি মারাত্নক বিপর্যয়ের সম্মুখীন” তিনি সারা দেশে আজ বুধবার থেকে ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন।

এছাড়া ২ সপ্তাহের জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। ইতিমধ্যে ইরান, স্পেন, টার্কি, কাতার, ই ইউ, ফ্রান্স, রাশিয়া, তিউনিসিয়া সহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ সাহায্যের হাত বাড়াতে তাদের প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছে। এদিকে ৫৫ জন উদ্ধারকারী নিয়ে ফ্রান্সের তিনটি উড়োজাহাজ সহসা বৈরুত পৌঁছুবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সাথে চিকিৎসা সরঞ্জামসহ ৫০০ শয্যার মোবাইল হাসপাতালও প্রেরণ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মেক্রোন নিজে বৈরুত আসার কথাও ব্যাক্ত হয়েছে। এদিকে লেবাননে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং অন্যান্য দায়িত্বশীল তথ্য থেকে জানা গিয়েছে যে, লেবাননে কর্মরত প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের মধ্যে ৯৯ জন বাংলাদেশী আহত হয়েছেন তার মধ্যে ৪ জন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন আর বেশ কয়েকজন মারাত্নক আহত অবস্থায় এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সম্মানিত রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে, দূতাবাসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা কার্য্যক্রম অব্যাহত আছে।

ভিডিওঃ নিউজ ২৪

এদিকে বৈরুত নৌ বন্দরে অবস্থানরত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বি এন এস বিজয় এই বিস্ফোরণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জাহাজের ১৮ জন নাবিক এই বিস্ফোরণে আহত হন যার মধ্যে ১ জন মারাত্নক আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। �সর্বশেষ প্রাপ্ত সংবাদে যতটুকু জানা গিয়েছে এই বিস্ফোরণের মূল কারন হচ্ছে বৈরুতের নৌবন্দরের হ্যাঙ্গারে জমা করে রাখা প্রায় ২৭৫০ টন এমোনিয়াম নাইট্রেট। যতটুকু জানা গিয়েছে ৬ বছরেরও বেশী সময় ধরে বৈরুত বন্দরের ১২ নাম্বার হেঙ্গারে প্রচণ্ড বিস্ফোরক এই এমোনিয়াম নাইট্রেট সংরক্ষিত ছিল। এই এমোনিয়াম নাইট্রেট জৈবিক সার এবং বিস্ফোরক হিসাবে ব্যাবহৃত হয়ে থাকে।

ভিডিওঃ যমুনা টিভি

২০১৩ সালে মালদোভিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ রসাস, রাশিয়া থেকে মোজাম্বিক যাবার পথে যান্ত্রিক গোলযোগের কারনে বৈরুত আসে এবং সেই জাহাজ বৈরুত বন্দরে আটক করা হয়, পরবর্তীতে জাহাজটি পরিত্যাক্ত হলে সকল এমোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুত বন্দরে রাখা হয়। পরবর্তীতে এব্যাপারে কর্তৃপক্ষের মধ্যে কয়েকদফা চিঠি চালাচালি হলেও এর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় এই প্রচুর বিস্ফোরক বন্দরেই থেকে যায়।

� এদিকে লেবানন সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্য্যন্ত বন্দরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দী রাখার আদেশ কার্য্যকরী করা হয়েছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যাবস্থা করা হবে বলে তার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন। লেবাননের রাষ্ট্রপতি মিশেল আউন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মোকাবেলায় ব্যার্থতাকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন এবং দায়বদ্ধ সকলের জন্য “কঠোরতম শাস্তির” প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে, এবং কমিটি তার ফলাফল পাঁচ দিনের মধ্যে বিচার বিভাগে প্রেরণ করবে।��সূত্রঃ আল জাজিরা, বি বি সি, সি এন এন, বাংলাদেশ দূতাবাস, বৈরুত

SHARE THIS ARTICLE