ডাঃ মোঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার, এনেসথেশিয়া ও ইনটেন্সিভ কেয়ার কনসালট্যান্ট ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড: আয়ারল্যান্ড বেঁচে থাকবার জন্য খুব জরুরী একটি উপাদান হচ্ছে অক্সিজেন। বাতাসে এই অক্সিজেনের পরিমাণ ২১%। এর চেয়ে কম অক্সিজেন হলে মানুষ কেন, কোন জীবই বেঁচে থাকতে পারত না। আর বেশি থাকলে? বেশী থাকলে কি সুবিধা হত? না অসুবিধা হত? কোভিড-১৯ এর এই মহামারীতে যখন শুনছি অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন প্রশ্নটা মনে জাগা স্বাভাবিক। সৃষ্টিকর্তা কেন আরেকটু বেশি অক্সিজেন বাতাসে দিয়ে রাখলেন না। এই কেনোর উত্তর হয়তো আমরা কখনোই জানতে পারব না, তবে বেশি থাকলে কি সমস্যা হত, সেটা আমরা জানি। বলছি সেটা। প্রথমে বলি, এই অক্সিজেন উপাদানটা কেন দরকার? সোজা উত্তর, এই উপাদানটির অভাবে শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষই কাজ করতে পারে না। কেউ অক্সিজেন ছাড়া একেবারেই চলতে পারে না, কেউ কিছুক্ষণ চলতে পারে। তবে দিনশেষে সবারই অক্সিজেন লাগে। এর অভাবকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘হাইপোক্সিয়া’। শরীরে এই অবস্থা অর্থাৎ ‘হাইপোক্সিয়া’ হলে, বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়, যা দেখে চিকিৎসকরা সন্দেহ করেন, শরীরে কোন কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। শরীর তখন আপ্রাণ চেষ্টা করে যেন কোনভাবে যেমন বেশি বেশি নিঃশ্বাস টেনে, অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করার। আর তা করতে গিয়ে কখনো শ্বাসযন্ত্র ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় ‘রেসপিরেটরি ফেইলিওর।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কি কি লক্ষণ দেখে চিকিৎসক সন্দেহ করবেন, রুগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে।
ঐ যে বললাম, বেশি বেশি অক্সিজেন নেয়ার চেষ্টা করবে। ফলে প্রতি মিনিটের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস বা ‘রেসপিরেটরি রেট’ স্বাভাবিক ১২ থেকে বেড়ে ২০ কিংবা ৩০, এমনকি ৪০ এও উঠে যেতে পারে। এছাড়া ঠোঁট, নখ, জিহ্বা নীলাভ হয়ে যেতে পারে। পরের প্রশ্ন হচ্ছে, সিম্পটম দেখে চিকিৎসক সাহেব সন্দেহ তো না হয় করলেন, কিন্তু এই উপসর্গ গুলো যে রুগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য হয়েছে, তা তিনি নিশ্চিত হবেন কি করে। সোজা উত্তর, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মেপে নিয়ে। যেটা ক্ষুদ্র একটি যন্ত্র, নাম ‘পালস অক্সিমিটার’, এই যন্ত্র দিয়ে সহজেই মাপা যায় রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ। সাধারনতঃ রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা থাকে ৯৮-১০০%। এই মাত্রা কমতে থাকলেই বুঝতে হবে সমস্যা হচ্ছে, তবে ৯০% এর নীচে চলে আসলে বুঝতে হবে, মারাত্নক অক্সিজেন স্বল্পতায় ভুগছেন রুগী। আর এই অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে শরীরের কোষগুলো ঠিকমত কাজ করে যেতে পারে না। চিকিৎসক মশাই তো নাহয় বুঝে গেলেন, শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে তিনি রুগীর এই অক্সিজনের অভাব পূরণ করবেন? সোজা উত্তর, অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে। এই তো। হ্যাঁ। এই অতিরিক্ত অক্সিজেনকে বলা হয় ‘সম্পূরক অক্সিজেন’। এই সম্পূরক অক্সিজেন নিয়ে বেশ কিছু তথ্য জানার আছে। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, কি উপায়ে দেয়া হয় এই অক্সিজেন? অবশ্যই শ্বাসনালী দিয়ে। তবে সেখানেও বেশ কিছু প্রকারভেদ আছে। দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, এই অক্সিজেন সংরক্ষণ করা হবে কিভাবে? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর দেব ২য় পর্বে।