১৬ই অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার; আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ মধ্য এশিয়ার একমাত্র গনতান্ত্রিক দেশ কিরগিস্তানের প্রেসিডেন্ট সুরনবাই জিনবেকভ অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। ৪ঠা অক্টোবর সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন জিনবেকভ। গতকাল বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করে তিনি বলেছেন যে দেশে রক্তপাতকারী একজন ব্যক্তি হিসাবে ইতিহাসে নাম লিখানোর কোন ইচ্ছা তাঁর নেই।
মধ্য এশিয়ার এই দেশটি অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই সংকটে পতিত হয় যখন জিনবেকভের অনুগত দলগুলিকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হলে বিরোধীরা কারচুপি ও ভোট বানিজ্যের কথা বলে ফলাফল বর্জন করে।
রাজধানী বিশকেকে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে একজন মারা গেছেন এবং এক হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা সরকারী ভবনে হামলা চালিয়ে জেল থেকে বিরোধী দলের আইনপ্রণেতা সাদির জ্যাপারভকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন, পরে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জ্যাপারভকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়।
নতুন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জিনবেকভও পদত্যাগ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে বিক্ষোভকারীরা তার তৎক্ষণাৎ তার পদত্যাগের দাবি অব্যাহত রাখেন।
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে বলেn, “আমি ক্ষমতা আঁকড়ে নেই; আমি রাষ্ট্রপতি হিসাবে কিরগিজস্তানের ইতিহাসে রক্তপাতকারী ও গুলি চালানোকারী হিসাবে নাম লিখাতে চাইনা। আমি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন: “আমার জন্য, কিরগিস্তানের শান্তি, দেশের অখণ্ডতা, মানুষের ঐক্য এবং সমাজে শান্তি অন্য যে কোনও কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক কর্মী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন রক্ষায় অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য। এক্ষেত্রে রক্ত ঝরবে। এটা অবশ্যম্ভাবী। আমি উভয় পক্ষকেই অনুরোধ করছি যেন উস্কানিতে না ডুবে যান। ”
জিনবেকভ ভোটের প্রথম থেকেই নমনীয় মনোভাব প্রদর্শন করছেন, এতে করে অনেকেই অবাক হচ্ছিলেন যে আসলে কে দেশ চালাচ্ছে। তিনি রাজধানীতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন যা মঙ্গলবার সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল।
রাজধানী বিশকেকে সপ্তাহান্তে কর্তৃপক্ষ সেনা মোতায়েন করে এবং সান্ধ্য আইন জারী করে। এই পদক্ষেপ রাজধানীতে উত্তেজনা কিছুটা লাঘব করে, বাসিন্দারা আগের মত পুনরায় শহরে লুটপাটের আশঙ্কায় সম্পত্তি রক্ষার জন্য সতর্ক দল গঠন করতে শুরু করেছিলেন। গত সপ্তাহে বন্ধ হওয়া দোকান এবং ব্যাংকগুলি আবারও চালু হয়েছে।
স্বাধীনতার তিন দশকের বেশিরভাগ সময় ধরেই কিরগিস্তান রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করেছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ৬৫ লক্ষ জন অধ্যুষিত এই দেশটি ইতিমধ্যে তিন জন রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করল।
সাম্প্রতিক কয়েকটি মিত্র দেশে বিশৃঙ্খলা ও বিবাদ রাশিয়াকে চিন্তিত করেছে। নির্বাচনের পরবর্তী বিক্ষোভে বেলারুশ ও উত্তপ্ত , নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজান ও আর্ফমেনিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিনের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ, দিমিত্রি কোজাক এই সপ্তাহে উড়ে এসে জিনবোকভ এবং জ্যাপারভের সাথে আলোচনা করে দ্রুত এই বিশৃঙ্খলা অবসানের জন্য জোর তাকিদ দেন।”
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আলমাজব্যাক আতম্বায়েভের পছন্দের উত্তরসূরি হিসাবে জিনবেকভ ক্ষমতায় আসেন, তিনি সম্ভবত আশা করেছিলেন যে পর্দার আড়াল থেকে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন এবং কিন্তু নতুন রাষ্ট্রপতি জিরবেকভ তার প্রাক্তন পরামর্শদাতাকে পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করেন এবং তাকে ১১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আতম্বায়েভকে এই মাসে বিক্ষোভকারীরা মুক্ত করে দেয়ার পুনরায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।