আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ অবৈধ অভিবাসী ইস্যুতে ‘নিরাপদ’ ১৭ দেশের তালিকা করেছে ইতালি। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী অভিবাসীদের উৎস দেশগুলো তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য কতটুকু নিরাপদ, তা পর্যালোচনার ভিত্তিতে একটি তালিকা করেছে ইতালি সরকার।
এ তালিকায় বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশকে প্রত্যাবাসিত অভিবাসীদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে এসব দেশ থেকে আগত অবৈধ অভিবাসীরা এখন থেকে ইতালিতে রাজনৈতিক বা কোনো ধরনের আশ্রয় পাবেন না। ইতালীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইতালির অভিবাসন আইন ২০০৮-এর ২৮ নম্বর ধারার ২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গেজেটে থাকা এসব ‘নিরাপদ দেশের’ নাগরিকদের মধ্যে যারা অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করবে তাদের থাকার অনুমতি না দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ইউরোপীয় অভিবাসন নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব দেশে গৃহযুদ্ধ বা অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে, সেসব দেশের নাগরিকরা ইউরোপের যেকোনো দেশে থাকার অনুমতি পাবেন। এ ক্ষেত্রে ইতালির তালিকাভুক্ত বাংলাদেশসহ এই ১৭টি দেশে এ মুহূর্তে কোনো যুদ্ধ নেই কিংবা কোনো নাগরিকের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। তাই এসব দেশকে ইতালি ‘নিরাপদ দেশের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে জর্জা মেলোনি সরকার।
এই গেজেটের বরাত দিয়ে দেশটির মূলধারার গণমাধ্যম ‘ইল জার্নাল’ বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবৈধভাবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রবেশের বিভিন্ন রুট নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সে সঙ্গে তারা বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে তালিকাভুক্তির প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এশিয়ার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি নাগরিক ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করছে। দেশটিতে থাকা কিছু এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে তারা আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের দেশ লিবিয়া ও তিউনিসিয়ায় থাকা মানব পাচারকারীদের সহায়তায় ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোতে অবস্থান নেয়। তারপর সময় বুঝে মানব পাচারকারীদের আরেক গ্রুপের সহায়তায় ভূমধ্যসাগরে অভিবাসী উদ্ধারকারী জাহাজের কাছে পৌঁছায়। এভাবে তারা ভাগ্যবদলের আশায় ইতালির ভূখণ্ডে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আসছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘সম্প্রতি এক বাংলাদেশি নাগরিকের টিকটকে প্রকাশিত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশি কয়েকজন নাগরিক লিবিয়া থেকে সমুদ্রপথে ছোট নৌকায় করে ইতালিতে আসার সময় উল্লাস করছে আর হাতে থাকা বাংলাদেশের একটা পাসপোর্ট ছিঁড়ে সমুদ্রের পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এ সময় ওই বাংলাদেশি লিবিয়ান ভাষায় বাংলাদেশ ও লিবিয়াকে কটূক্তি করে ইতালিতে পৌঁছানোর উল্লাস প্রকাশ করে।’
গত সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে ইতালির রাজনৈতিক দল ‘ফ্রাতেলি-দি ইতালিয়ার’ নেতা ফ্রাঞ্চেস্কো ললোব্রিজিদা বাংলাদেশের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে অবৈধ অভিবাসী নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় তারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধপথে অভিবাসীদের যাত্রা কীভাবে বন্ধ করা যায় এবং ইতালিতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশ থেকে বৈধপথে ইতালিতে দক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আসে।
চলতি মাসে ইতালিতে প্রকাশিত গেজেটের মধ্যে বাংলাদেশসহ আরও ১৭টি দেশের তালিকা করে এদের ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব দেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ করবে, তাদের ইতালি থেকে আলবেনিয়ায় পাঠানোর কথা বলা হয়। শিগগির আলবেনিয়ায় তিনটি মাইগ্রেশন সেন্টার চালু করা হবে বলে ঘোষণা দেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিও মেলোনি।
উল্লেখ্য, ইতালির করা এ তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও ক্যামেরুন, কলম্বিয়া, মিসর, পেরু ও শ্রীলংকার মতো দেশের নাম রয়েছে। এসব দেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুরসংখ্যক অবৈধ অভিবাসী ইতালিতে প্রবেশ করছেন। বিশেষ করে প্রচুর বাংলাদেশী অভিবাসনপ্রত্যাশী এখন উত্তর আফ্রিকা উপকূল থেকে নৌপথে ইউরোপের দেশটির উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ ভূমধ্যসাগরের বিপৎসংকুল নৌপথ পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারাও যাচ্ছেন অনেকে। উদ্ধারও হচ্ছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ইতালি সরকারের করা তালিকাগুলোয় অবৈধ অভিবাসীর উৎস দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সামনের সারিতে।
অভিবাসন সংস্থাগুলো বলছে, মূলত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের জন্য ইতালিকে অনেকেই ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। লিবিয়া, তিউনিসিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে দেশটিতে গেছেন অনেকেই। তবে সবার গন্তব্য যে ইতালি এমনটি নয়, অনেকে পর্তুগাল, জার্মানি, গ্রিস ও ডেনমার্কের মতো দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন।