অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড (আবাই) এর নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গতকাল ২০শে মার্চ ২০২২, রোববার সকাল ১১ ঘটিকা থেকে কমিউনিটি ব্যাক্তিত্ত্ব নাভান নিবাসী জনাব মোশাররফ হোসেনের আহবানে এবং পরিচালনায় জুম মাধ্যমে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জনাব মোশাররফ হোসেন সাহেব সকলকে অবগত করেন যে সম্প্রতি মিডিয়াতে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছে যে, অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ডের (আবাই) কার্য্যকরি কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ২৬শে জুন নির্ধারন করা হয়েছে। মোশাররফ সাহেব বলেন যে, আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীকে সম্পৃক্ত করে একটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নিয়েই তিনি এই মত বিনিময় সভা আহবান করেছেন।

সভায় বিভিন্ন কাউন্টি থেকে কমিউনিটি সদস্যবৃন্দ যোগদান করে তাদের মতামত প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে মোশাররফ হোসেন ছাড়াও অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন সর্বজনাব ফারুক সরোয়ার (ডাবলিন) , কামাল উদ্দিন (মেয়ো) , সাইদুর রহমান (কিলকেনী), গালিব হোসেন (কার্লো), জালাল ভুঁইয়া (ডাবলিন), শাহিন মিয়া (ডাবলিন), এম এ জলিল (ডাবলিন), এ কে আজাদ (ক্যাভান), মোঃ আজিজুর রহমান মাসুদ (ডাবলিন), ফিরোজ হোসেন (ডাবলিন), আমিনুল ইসলাম বুলবুল (ডাবলিন), বিল্লাল হোসেন (গলওয়ে) আনোয়ারুল হক (লিমেরিক), ডাঃ মোশাব্বির হোসেন (কর্ক), অলক সরকার (ডাবলিন), আব্দুস শহিদ (লিটারকেনি), মাহবুব আলম (ডাবলিন), রাসেল তালুকদার (ডাবলিন), জাহিদ হোসেন চৌধুরী (কেরিকন শ্যানন), মাহবুব হোসেন (ডাবলিন), বেলায়েত হোসেন (ডাবলিন), তামিম হোসেন (গলওয়ে), রিন্টু ভট্টাচার্য্য (ডাবলিন), রনি বড়ভুইয়া (ডাবলিন), জহিরুল ইসলাম জহির (ডাবলিন), ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার (ডাবলিন), কবির আহমেদ (গলওয়ে), রফিকুল ইসলাম (মেয়ো-ডাবলিন), জামাল বশীর (গলওয়ে) , মিজানুর রহমান জাকির (ডাবলিন), হামিদুল নাসির (ডাবলিন), সোহেল মিয়া, জাকির খন্দকার এবং শাহরিয়ার পারভেজ (ডাবলিন)। সভাটি ফেইসবুকে লাইভে প্রচারিত হলে অনেকেই ফেইসবুকে সম্পৃক্ত থেকে ও  আলোচনা উপভোগ করেছেন।

আলোচনায় উঠে এসেছে যে,
১। আবাই এর নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গেছে ২০২০ সালের ৩রা মার্চ। তাই একটি সাধারণ সভা আহবান করে এই পরিষদের মেয়াদ বর্ধিত করা প্রয়োজন। একই সাথে আলোচনায় উঠে আসে যে, নির্বাচনী পরিচালনা পরিষদের ২২ জন সদস্যদের মধ্যে মাত্র ৩ জনের উপস্থিতিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত কোনভাবেই নির্বাচন সফলতার ইংগিত বহন করেনা। তাই একটি প্রত্যক্ষ সাধারণ সভার মাধ্যমে এই নির্বাচন পরিচালনা পরিষদকে পুনর্গঠিত করা অত্যাবশ্যক। তাই এই সভা নির্বাচন পরিচালনা পরিষদকে দ্রুত একটি সাধারণ সভা আহবান করে পরিষদের মেয়াদ বৃদ্ধি, পরিষদ পুনর্গঠন, নির্বাচনী রোড ম্যাপ প্রকাশ করার অনুরোধ জানায়। যে সভায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেই সভায় নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের ৩ জন সদস্য ছাড়াও নির্বাচনী উপদেষ্টা পরিষদের ৩৭ জনের মধ্যে ১১জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে প্রকাশিত হয়।

২। ২০১৯ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর, লিমেরিকে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আবাই নির্বাচন পরিচালনা পরিষদকে সহায়তা করার লক্ষ্যে একটি নির্বাচনী উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছিলো। অনেকেই মতামত প্রদান করেন যে, এই উপদেষ্টা পরিষদের কোন প্রয়োজনীয়তা নাই আর যদি আদৌ কোন প্রয়োজনীয়তা থাকে তাহলে যেন এই উপদেষ্টা পরিষদে শুধুমাত্র সেই সকল সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যারা নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের মত কোনভাবেই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নির্বাচনে সম্পৃক্ত থাকবেন না। কেউ কেউ বলেন যে, দুটি পরিষদকে বিলুপ্ত করে একটি শক্তিশালী নির্বাচন পরিচালনা পরিষদ গঠিত হলে নির্বাচন আরও গতিশীল হবে।

৩। সার্বজনীন এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ভোটার তালিকাকে আরও বিস্তৃত এবং ব্যাপক করা প্রয়োজন। অনেকেই মনে করেন আয়ারল্যান্ডে ১০-১২০০০ প্রবাসী বাংলাদেশী থাকার কথা। এমতাবস্থায় ন্যুনতম ৫০০০-৬০০০ মানুষ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হলে এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা হবেনা। তাই বর্তমান এই ভোটার তালিকাকে আরও বর্ধিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি কাউন্টিতে গণসংযোগ করা প্রয়োজন এবং সকলকে উদ্বুদ্ধ করা অত্যাবশ্যক।

৪। নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত বর্তমান ওয়েব সাইটের কিছু দুর্বলতাকে কাটিয়ে তুলে ওয়েব সাইটকে আরও গতিশীল করে তোলা হলে সকলের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে সুবিধা হবে বলে অনেকেই মনে করেছেন। বেশ কয়েকজন বক্তা এব্যাপারে আয়ারল্যান্ডে কার্য্যরত বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আই টি বিশেষজ্ঞের কথা উল্লেখ করে তাদের সহায়তা গ্রহণের উপদেশ প্রদান করেন।

৫। নির্বাচনের প্রস্তাবিত তারিখ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেউ মনে করেছেন নির্বাচনের প্রস্তাবিত তারিখ পিছিয়ে দিয়ে সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবর মাসে করা হলে অধিকাংশ মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারবেন। মতামতে প্রকাশিত হয়েছে যে, জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে স্কুল ছুটি থাকায় অনেকেই দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে ছুটিতে যাবার পরিকল্পনা করেছেন। এমতাবস্থায় জুন, জুলাই কিংবা আগস্টে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করে সেপ্টেম্বর কিংবা অক্টোবরে নির্বাচন করার প্রস্তাব এসেছে। কেউ কেউ অবশ্য এই তারিখেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন আবার কেউ নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসার পক্ষে মত প্রদান করেন। কেউ কেউ মনে করেছেন যে, রমজানের পর পরই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।

৬। সভায় বক্তারা সভার মতামত মেয়াদোত্তীর্ন নির্বাচন পরিচালনা পরিষদ এবং নির্বাচনী উপদেষ্টা পরিষদের নিকট উপস্থাপনের পর তাদের মূল্যায়ন পুনরায় একটি সভার মাধ্যমে সকলকে অবহিত করার জন্য জনাব মোশাররফ হোসেন সাহেবকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

৭। অল বাংলাদেশি এসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (আবাই) একটি সার্বজনিন সংগঠন, তাই এই নির্বাচনে কাউন্টী ভিত্তিক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা না হলে কোনভাবেই সফল, কার্য্যকরি এবং গতিশীল সংগঠন পরিচালনা করা সম্ভব হবেনা বলে অনেকেই মনে করেছেন। এব্যাপারে আবাই এর গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হলে সফলতা আসতে পারে তবে যদি কোন ধরনের সংযোজন কিংবা বিয়োজনের অত্যাবশ্যকীয়তা দেখা যায় তাহলে সামাজিক নেতৃবৃন্দের ঐক্যমত্য প্রয়োজন বলেও মমত্বে প্রকাশিত হয়েছে।

৮। মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব উত্থাপিত হলে বিগত নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোটে তিনজন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়ে কার্য্যকরি পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন বলে প্রকাশিত হয়। এই ৩ জন সদস্য কার্য্যকরিভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও সভায় প্রকাশ করা হয়। 

কেউ কেউ অবশ্য মনে করেছেন নির্বাচনের পরে প্রয়োজনে নির্বাচিত পরিষদ মহিলা সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার বিধান রাখা যেতে পারে।

মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত ইতিবাচক এবং প্রাণবন্ত ছিল বলেই আমাদের মনে হয়েছে। সকলেই এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মোশাররফ হোসেন সাহেবকে ধন্যবাদ জানান। নির্বাচনকে সফল এবং সার্বজনীন করার লক্ষ্যে চার ঘণ্টার বেশী সময় ধরে সকল উপস্থিত সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন ধরনের মতামত প্রদান করেন। সকলেই ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠিত করা আবশ্যক। তবে সকলেই নির্বাচনকে সার্বজনিন এবং সফল করার লক্ষ্যে কিছু আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন এবং এই প্রস্তাব সমূহ বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন পরিচালনা পরিষদকে আহবান জানান। সভায় নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের প্রতি আস্থা অব্যাহত রেখে এই পরিষদকে শক্তিশালী করে একটি সফল নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের সহায়তা কামনা করা হয়।এই সভা মনে করেছে যে, তাদের মতামতকে গ্রাহ্য করে দ্রুত একটি সাধারণ সভা আহবান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের গ্রহণযোগ্যতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সমাজের সকল স্তরের জনগণের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি পাবে যার ফলে একটি সফল নির্বাচন উপহার দেয়া সহজতর হবে।

SHARE THIS ARTICLE