আইসিইউতে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ইউএনও ওয়াহিদা কথা বলেছেন

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম জ্ঞান ফেরার পর কথা বলেছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

ওয়াহিদা খানমের বড়ভাই শেখ ফরিদ উদ্দীন জানান,গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় ওয়াহিদা খানম হাসপাতালে তার স্বামী মেসবাউল হোসেনের সাথে কথা বলেছেন। জ্ঞান ফিরেই ওয়াহিদা খানম তার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করেন, কেমন আছো? এসময় স্বামী মেসবাউল হোসেন তার স্ত্রীর স্মৃতি ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করার জন্য জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমি কে?’

উত্তরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ওয়াহিদা খানম বলেন, ‘আদিয়াতের বাবা।’

বড়ভাই শেখ ফরিদ বলেন, বোন কথা বলতে পেরেছে এতে আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

বর্তমানে তার হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক আছে। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও এখনো শঙ্কামুক্ত বলার মতো পর্যায়ে আসেনি। এর আগে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের যুগ্ম-পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। রাতেই তার জ্ঞান ফিরেছে। তিনি বর্তমানে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনই তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসেনি। আজ শনিবার) এ বিষয়ে আমাদের মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা বসবেন, এরপর এ বিষয়ে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে তার শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ৬ সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করে। অস্ত্রোপচার শেষেই তাকে ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। তাৎক্ষণিকভাবে তার সেরে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী হলেও তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানানো হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় অস্ত্রোপচার শেষে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় ভাঙা হাড়ের সাত-আটটা টুকরা ছিল, সেগুলো আমরা জোড়া দিয়েছি। জোড়া দিয়ে হাড়গুলোকে জায়গামতো বসিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি যে আরো ছোট ছোট কাটা ছিল, সেগুলোর সবই রিপেয়ার করা হয়েছে।

আমরা আশাবাদী কিন্তু এটা হেড ইঞ্জুরির ব্যাপার, তার মাথার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং মস্তিষ্কে আঘাত লেগেছে। মস্তিষ্কের ওপর একটা চাপ ছিল, সেটা আমরা রিলিফ করেছি। তবে এখনই ক্লিয়ারলি আমরা বলতে পারব না যে রোগী ভালো হয়ে যাবেন।

স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছেন ইউএনও ওয়াহিদা

তিনি বলেন, ইট উইল টেক টাইম। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আমরা তার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। আমরা আশাবাদী রোগী ভালো হয়ে যাবে, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তার ডান পাশটা যে অবশ ছিল, প্যারালাইজড ছিল। আশা করি সেটা রিভার্স হয়ে যাবে, সচল হয়ে যাবে। তবে কিছুদিন সময় লাগবে। এর আগে রাত ৯টায় তাকে অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার আগে তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। প্রেশার চেক করে অবস্থা স্বাভাবিক পেয়ে তার অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।

এরও আগে চিকিৎসকরা জানান, ওয়াহিদার মাথার বাঁ দিকটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাথার কিছু অংশ ভেঙে মস্তিষ্কে প্রেশার তৈরি করছে। সেটি অপসারণ করা গেলে অবস্থার উন্নতি হবে এমন আশা থেকে তার অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত হয়।

গত বুধবার রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ইউএনওর মাথায় গুরুতর আঘাত এবং তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।

পরে ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

SHARE THIS ARTICLE