আজিজ-বেনজীরের দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিতঃ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সুরে কথা বলেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চিন্তে থাকুন বেগম খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

বুধবার (২৯ মে) বিকেলে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। ব্যানারবিহীন এ সভায় জিয়াউর রহমানের কোনো ছবি দেখা যায়নি।

লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আলোচনা সভায় নেতাকর্মীদের বক্তব্য শোনেন। সভায় বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক হতাশ…আওয়ামী লীগ বোধহয় টিকেই গেলো। ভাইরে এই চোরদের দল, যেখানে সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধান চোর, দুর্নীতিবাজ… এদের সরকার যদি টিকে থাকে তাহলে সভ্যতার ইতিহাস, প্রগতির ইতিহাস মিথ্যা হয়ে যাবে। অতএব নিশ্চিন্ত থাকুন বিএনপি বাংলাদেশের জনগণের একমাত্র ভরসা। আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শধারী সেই পতাকা বহন করে ইনশাআল্লাহ ক্ষমতায় যাবো। বেগম খালেদা জিয়া আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন। আমরা এদেশ মুক্ত করতে চাই, দুর্নীতিবাজ-দুর্বৃত্তদের হাত থেকে মুক্ত করতে চাই… আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকুন।’

‘আজিজ-বেনজীরের দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনি কোন অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছেন যে, সাবেক পুলিশপ্রধানের হাজার হাজার দুর্নীতির চিত্র পত্র-পত্রিকায় বেরিয়ে আসছে। তাকে আপনি লালন করেছেন। অনেক আগে স্যাংশন দেওয়ার পরও তাকে আপনি আইজি বানিয়েছেন। আজ একইভাবে সাবেক সেনাপ্রধান, তাকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে একটা মাত্র কারণে সে বাংলাদেশে লুট করেছে, চুরি করেছে এবং নির্বাচনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দায় কি শুধু ওদের? এই দায় এই সরকারের যারা আজ জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন।’

তিনি বলেন, ‘এজন্য আমি বারবার বলছি যে, আপনাদের রিজাইন (পদত্যাগ) করা উচিত। একজন আজিজ শুধু নয়, একজন বেনজীর শুধু নয়। অসংখ্য আজিজ ও বেনজীর আপনারা তৈরি করেছেন যারা লুট করে খাচ্ছে। একটাই কাজ লুট করা। আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের মা কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে বলতেন, ছেলে ঘুমালো, পাড়া ঘুমালো বর্গী এলো দেশে। বর্গী কারা? বর্গী সেই সমস্ত লুটেরা যারা বার্মা থেকে আসতো এসে লুট করে সব নিয়ে চলে যেতো। এটাকে তখন বাংলাদেশের মানুষ ভয় পেতো। আজ তারা (আওয়ামী লীগ) বর্গীতে পরিণত হয়েছে। তাদের একমাত্র কাজ বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে সেখানে সম্পদ গড়ে তোলা।’

মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন দেন না কেন? একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছি। আমরা কখনো বলিনি যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দাও। আমরা একাই নই, ৬৩টা বিরোধী দল… বাম-ডান সবাই একসঙ্গে সেই লড়াইটা লড়ছি, আমাদের অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য লড়ছি। সুষ্ঠু নির্বা্চন দিন, জনগণ সিদ্ধান্ত নিক। তারা সেটা কোনোদিনই করবে না কারণ তারা তারা জানে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে ১০ শতাংশও আসন পাবে না।’

চলমান আন্দোলনকে জোরদার করতে সকলকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘এই যে আত্মত্যাগ, মায়ের যেই অশ্রুধারা এটা কি বিফলে যাবে? আপনারা কি সেটা বিফলে যেতে দেবেন? এখন জেগে ওঠার সময় এসেছে। জেগে উঠবে সেই তরুণ-যুবক। সমস্ত ভয়ভীতি তাচ্ছিল্য করে আমাদের দেশমাতৃকার ডাকে, আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ও তার ডাকে, আমাদের নেতা তারেক রহমানের ডাকে…. আসুন আমরা সবাই বেরিয়ে পড়ি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি একটা কথাই বলতে চাই, আজ যে আমাদের সংকট এই সংকট মহাসংকট। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।’

‘আজিজ-বেনজীরের দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত’

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সিডর, আইলা, রিমালের চাইতেও বড় আঘাত আসতে যাচ্ছে। দেশটাকে গিলে খেয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ভারতের অনেক গুণিজন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশ সরকার যাই করছে তার কোনোটাই দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে যাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস। বাংলাদেশের টাকার মান অর্ধেক কমে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘বাকশাল করে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার লাইসেন্স দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তার বিরুদ্ধেই এখন আওয়ামী লীগ বাজে মন্তব্য করছে।’

দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, মামুন আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

SHARE THIS ARTICLE