
ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গিরদারঃ আজ সোমবার শারদীয় দূর্গোৎসবের বিজয়া দশমী। সনাতন ধর্মে দূর্গা হচ্ছেন শক্তির দেবী। হিন্দু দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত উৎসবের নাম দূর্গোৎসব কিংবা দূর্গাপূজা। দুর্গাপূজা সার্বজনীন হিন্দুসমাজেই প্রচলিত, তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব।
বিশ্বের সকল দেশেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মহা আয়োজনে এই উৎসবের আয়োজন করে থাকেন তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে এই উৎসব পালিত হয়। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে “দুর্গাষষ্ঠী”, “মহাসপ্তমী”, “মহাষ্টমী”, “মহানবমী” ও “বিজয়াদশমী” নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় “দেবীপক্ষ”। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। এই দিন হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। বাংলাদেশে আজ জাতীয় ছুটির দিন, তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই পূজা উপলক্ষে ৩ দিনের সরকারি ছুটি উপভোগ করে থাকেন।
সনাতন ধর্মে দূর্গা (“যিনি দুর্গতি কিংবা সংকট থেকে রক্ষা করেন” এবং “যিনি দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন”) হলেন শিবের স্ত্রী পার্বতীর উগ্র রূপ। তিনি কার্তিক ও গণেশের জননী ও কালির অন্যরূপ। তার অন্যান্য নামসমূহ হলো চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুর সংহারিনী নারায়ণী, মহামায়া, কাত্যায়নী ইত্যাদি। দেবী দুর্গার অনেকগুলো হাত অষ্টাদশভূজা, ষোড়শভূজা, দশভুজা, অষ্টভুজা, ও চতুর্ভূজা মূর্তি হিসাবে দেখা যায়। তবে তার দশভুজা রূপটিই বেশী জনপ্রিয়। তার বাহন সিংহ (কোন কোন মতে বাঘ) মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তীতে তাকে মহিষাসুর নামক অসুরকে বধরত অবস্থায় দেখা যায়। মৎস্যপুরাণ, মার্কন্ডেয় পুরাণ, দেবী পুরাণ, কালিকাপুরাণ ও দেবী ভাগবত এসকল পৌরাণিক গ্রন্থে দূর্গা সম্পর্কিত আলোচনা করা হয়েছে।
দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের বার্তা নিয়ে মর্ত্যে আসেন দেবী। দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পঞ্জিকা মতে, গতকাল বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে দশমী শুরু হয়ে আজ বেলা ১১টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে দশমী তিথি। এর মধ্যেই দশমী বিহিত পূজা শেষ করবেন পুরোহিতরা। পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন করা হবে। উপবাস থেকে অঞ্জলি প্রদান করবেন ভক্তবৃন্দ। এবার দেবীর আগমন ঘটছে দোলায় অর্থাৎ পৃথিবীতে মড়ক দেখা দেবে বলে বিশ্বাস সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আর দেবী বিদায় নেবেন গজে (হাতি)। দেবী গজে গমনাগমন করলে পৃথিবীতে জলের সমতা বজায় থাকে এবং শস্য ফলন ভালো হয়। সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকে মর্ত্যভূমি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেন, এ বছর ঢাকায় ২৩১টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং সারা দেশে ৩০ হাজার ২১৩টি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছর বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপ আলাদাভাবে প্রতিমা বিসর্জন করবেন। নগরীর ওয়াইজঘাট, তুরাগ, ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটে হবে প্রতিমা বিসর্জন।
এদিকে আয়ারল্যান্ডে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এবারের পূজার উৎসব অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ঘরে থেকেই পূজার অনুষ্ঠানাদি পালিত হচ্ছে। অশুভ বিনাশের প্রত্যয়ে গতকাল মহানবমী তিথিতে দুর্গতিনাশিনী দেবীর আরাধনা করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। গতকাল সকাল থেকে ভক্তরা দেবীর চরণে অর্পণ করছেন পুষ্পাঞ্জলি। এ বছর পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অঞ্জলিতে ভিড় কমাতে করা হয়েছে ভার্চুয়াল অঞ্জলির আয়োজন।
আইরিশ বাংলা পোস্টের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড এবং সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য দূর্গোৎসবের শুভেচ্ছা ও সাফল্য কামনা থাকল। এবারের বিশেষ পূজার উৎসব সকলের জন্য আনন্দের হোক এবং আমাদের সকলের জন্য নূতন দিনের সূচনার বার্তাবাহক হোক।।
সূত্রঃ
১। Article on Durga about.com Hinduism
২। www.wilkipedia.com
৩। পৌরাণিকা, প্রথম খণ্ড, অমলকুমার মুখোপাধ্যায়, ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০০
৪। পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ৪৪ থেকে উদ্ধৃত
৫। শব্দকল্পদ্রুম ৩।১৬৬৬; পূজা-বিজ্ঞান, স্বামী প্রমেয়ানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা, ১৯৯৯
৬। বাংলাদেশ প্রতিদিন