আজ বিশ্ব বাবা দিবস

এ,কে, আজাদ – আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বাবা, দুটো অক্ষরের নাম জেতার মানে এক বিশাল সমুদ্র বা তার থেকেও বেশি। তবে আমরা কিন্তু বেশিরভাগ মানুষরাই বাবার থেকে মায়ের স্থানটাই আগে রাখি। বাবা ঠিক মা নয়। একটু দূরের। বাইরে বাইরেই বেশি থাকেন। কঠিন চেহারা। শক্ত চোয়াল। অত সহজে হাসেন না। বাবার সঙ্গে কথা বলতে হয় মেপে। ভুলচুক হলেই বকা খাওয়ার ভয়। চারপাশে দেয়াল তুলে রাখা এই বাবাকে কোনো না কোনো সময় ঠিক চিনে ফেলে সন্তান। বাইরে তিনি যত কঠিন, ভেতরে ততটাই কোমল। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য নিজের বর্তমানকে হাসিমুখে উৎসর্গ করা এই বাবাদের আজ আলাদাভাবে স্মরণ করার দিন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্ভরতার জায়গা বাবা। বাবা, সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসাতো সবসময়ই। তবে বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের একটি অন্যতম দিন বাবা দিবস।
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার এই দিবসটি উদযাপন করা হয়। সে হিসেবে আজ রবিবার (২১ জুন) বিশ্ব বাবা দিবস। পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপিত হবে।হ্যাঁ, প্রতিদিনই বাবার জন্য ভালবাসা। তবে আজ বিশেষ দিবস। মুখ ফুটে ‘ভালবাসি’ বলার দিন। আজ বাবাকে নিয়ে কেক কাটা হবে। ফুল, নতুন জামা, প্রিয় বই উপহার দেওয়া হবে বাবাকে। আর যারা নিজেরাও বাবা হয়েছেন তারা ফিরে যাবেন শৈশবে। পুরনো স্মৃতি থেকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন বাবাকে। প্রয়াত বাবার কথা ভেবে নীরবে চোখ মুছবেন অনেকে। বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায়…। এই দেখা আর হবে না। নিজের শিশু সন্তানকে বুকে টেনে নিয়ে কষ্ট ভোলার চেষ্টা করবেন কেউ কেউ।


আজ ফেসবুক টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ঘুরে ফিরেই আসবেন বাবা। পিতার ছবি খুঁজে নিয়ে পোস্ট করবে সন্তান। নিজের ভেতরে বাবাকে নিয়ে যত আবেগ, লিখে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করবে। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে শব্দগুলো সবার আগে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তার অন্যতম হচ্ছে বাবা। এ যেন সন্তানের কাছে চিরন্তন আস্থার প্রতীক। কোনো শিশু যখন এই শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে তখন বাবার মন পুলকে ভরে যায়। বাবা বলে ডাকতে পারাতে বাবার হাস্যোজ্জ্বল অনুভূতি যেন সেই অবুঝ শিশুর হৃদয়কে মুহূর্তেই আন্দোলিত করে তোলে।
বাবার প্রতি সন্তানের সেই চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। তারপরও পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিনকে বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। যেমনটা মায়ের জন্য করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাবা দিবসের প্রচলন। সন্তানের কাছে বাবা পথপ্রদর্শক ও বন্ধুর মতে। অনেকেই বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। অনেক দেশে কার্ড উপহার দেওয়া হয়। অনেকেই বাবাকে নিয়ে বাইরে খেতে যায় নিয়ে যায় সিনেমা দেখতে, উপহার দেয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী। যাদের বাবা বেঁচে নেই, তাঁরা হয়তো আকাশে তাকিয়ে অলক্ষ্যে বাবার স্মৃতি হাতড়ায়।

বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারগুলোর নিঃসন্দেহে একটি। সন্তানের সকল বায়নাই মায়ের কাছে। এটা চাই।ওটা দাও। মা এসব আবেদন নিবেদন শোনেন। আর বাস্তবায়ন করেন বাবা। দিন-রাত পরিশ্রম। খাটুনি। এর সামান্যও নিজের জন্য নয়। বরং সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর সব চেষ্টা করেন তিনি। বাবাদের ভেঙে পড়তে নেই। কাঁদতে মানা। কারণ বাবা কাঁদলে বাবা ভেঙে পড়লে সন্তানদের আর আশা থাকে না কোন। কবির ভাষায় : ‘ঝিনুক নীরবে সহো/ঝিনুক নীরবে সহো,/ঝিনুক নীরবে সহে যাও/ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তা ফলাও!’ কবি আবুল হাসানের সেই ঝিনুকটিই যেন বাবা। সব কষ্ট একা বুকে বয়ে বেড়ান। সন্তানকে বুঝতে দেন না।
প্রসঙ্গত, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গীর্জায় সর্বপ্রথম বাবা দিবস উদযাপিত হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। পাশাপাশি সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্র মহিলার মাথাতেও বাবা দিবসের চিন্তা আসে। ১৯০৯ সালে ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা তিনি জানতেন না। ডড এই ধারণা পান গীর্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে। সেই পুরোহিত মাকে নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথা বলছিলেন। তখনই তার মনে হয়, বাবাদের নিয়েও কিছু করা দরকার। পরে তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর ১৯১০ সালের ১৯ জুন থেকে বাবা দিবস উদযাপন শুরু করেন। কালক্রমে এসেছে বাংলাদেশেও।

শুধু বাবা দিবসে বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করাটা একেবারের উচিত নয়। আমাদের বাবাগুলো যেন প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহুর্ত সম্মানিত হোন। আল্লাহকে সন্তষ্ট রাখতে চাইলে অবশ্যই পিতাকে সন্তষ্ট রাখতে হবে।

SHARE THIS ARTICLE