লেখক- রহমান ফাহমিদাঃ(২য় পর্ব) — যেই না এই কথা শুনছে, অমনেই মধুমিতা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এল। মধুমিতার চিৎকার শুনে ওর বাবা মা, কেয়ারটেকার ,বুয়া ,দারোয়ান সহ সবাই দৌড়ে এল। এদিকে অপূর্ব ও সাহেদ দুজনেই হঠাৎ করে মেয়ের গলার চিৎকার শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। ওরা দুজনেই দরজা খুলে বের হয়ে দেখল নীচের ফ্ল্যাটে চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে। ওরা ভাবল বাড়িতে ডাকাত পড়েছে নাকি! সাথে সাথে দুজনে মিলে ছাদে দুটি লম্বা রড ছিল তা নিয়ে নীচে নেমে এল। বাড়িওয়ালার বাসায় চিৎকার হচ্ছে আর একটি মেয়ের কান্না শোনা যাচ্ছে। অপূর্ব দেখল সারা বাড়ির মানুষ একসাথে জড় হয়েছে তাই ফ্লাটে ঢুকবে কিনা বুঝতে পারছেনা।
সাহেদ বলল, চল ভেতরে গিয়েই দেখি কি ব্যাপার!
অপূর্ব বলল, যাবি? ঠিক আছে, চল যাই।
ওদের দেখে মেয়েটি আরও জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলো, বাবা মা, ওরা কারা? রড হাতে আমাদের দিকেই আসছে।
বাড়িওয়ালা খান সাহেব ওদের দুজনকে দেখে, অপূর্বকে দেখিয়ে মেয়েটিকে বলল, ওর নাম অপূর্ব। আমাদের চিলেকোঠা ভাড়া নিয়েছে। তারপর দুজনকে বলল, বাবারা আসো । ওরা দুজন ঘরে ঢুকলে বলল, কিছু মনে করোনা, ও সকালে ছাদে গিয়ে ভয় পেয়েছে।
অপূর্ব বলল, কি হয়েছে?
তারপর ওরা যা শুনল, তা শুনে ওদের হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবার যোগার। কারণ যে মেয়েটি ভয়ে কাঁদছে সে এই বাড়ির ছোট মেয়ে, যার কথা ভাড়া নিতে আসার সময় অপূর্ব কেয়ারটেকারের মুখ থেকে শুনছিল। মেয়েটির নাম মধুমিতা । মধুমিতার অভ্যাস ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছাদে পায়চারী করা। তাই আজকে সকালে যখন ও ছাদে পায়চারী করছিল তখন ও শুনে যে, কারা যেন বলছে, বাঁচাইয়া রাখুম, না মাইরা ফালামু। সাহেদ তো এই কথা শোনার পর আর হাসি থামাতে পারছেনা । অপূর্ব দেখল মেয়েটির ফর্সা মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে তখন অপূর্ব ইশারা করে সাহেদকে হাসি থামাতে বলল। মধুমিতা যা শুনে ভয় পেয়েছে তা ছিল সাহেদ আর অপূর্বর গলার আওয়াজ।
সাহেদ তখন সবাইকে ঘটনাটি খোলাসা করে বলল। সাহেদ বলল, যেহেতু ওরা ফ্লোরিং করে সেহেতু সকালে উঠে দেখে একটি তেলাপোকা ওদের বিছানায় ঘোরাঘুরি করছে। সাহেদ ওটাকে দেখে অপূর্বকে ওই কথা বলেছে, বাঁচাইয়া রাখমু না মাইরা ফালামু এবং অপূর্ব যেহেতু তেলাপোকাকে ঘেন্না করে ও তাই বলেছে, না, এমন করে মারিস না। এই বলে সাহেদ আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। মধুমিতা ঘটনা শুনেই লজ্জায় আর রাগে দৌড়ে ভেতরের রুমে চলে গেল। তা দেখে সবাই হেসে উঠলো। অপূর্ব সাহেদ ওদের রুমে চলে এল।
সাহেদ অপূর্বকে বলল, দোস্ত , মাইরি বলছি মেয়েটা দেখতে কিন্ত দারুণ! আমিই প্রেমে পড়ে যেতাম কিন্ত শোভা জানলে আমারে কচুকাটা করবে। এই বলেই সাহেদ হো হো করে হেসে উঠলো।
অপূর্ব বলল, চুপ কর, ওরা শুনতে পাবে। কোন মেয়েকে নিয়ে এভাবে কথা বলতে নেই। তুই পারিসও বটে!
সাহেদ বলল, আরে, তোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তুই গেছিস!পুরোই ডুবে গেছিস। আমার আর কিছু বলার নাই। Best of luck. এই বলে অপূর্বর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
অপূর্ব সাহেদের কথা শুনে লজ্জা পেল। আসলেই সে মেয়েটির রুপে ডুবে গিয়েছে। নামটা খুব সুন্দর, মধুমিতা। অসাধারণ দেখতে। গায়ের রঙটা ফর্সা যেন দুধে আলতায় মিশে আছে। চুলগুলো সিল্কি কোমর পর্যন্ত নামানো, টানাটানা দুটি চোখ, তার অসাধারণ চাহুনি। তেমনি নাক, নাকে একটি নথ পড়লে আরও সুন্দর লাগতো। তবে ওর কাছে একটি ব্যাপার খুব ভাল লেগেছে তা হল দুপায়ে দুটো নূপুর পড়ে আছে। পা দুটোতে নূপুর দুটো খুব মানিয়েছে। যদি কখনো সুযোগ পেত তাহলে মধুমিতার একটি পোট্রেট আঁকত। ভাবতে গিয়ে ওর খুব বড় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হয়ে গেল। সাহেদের ডাকে চমকে উঠল।
সাহেদ অপূর্বকে আস্তে ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে, কি ভাবছিস? এত বড় দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছিস।
অপূর্ব বলল, নাহ! কিছুনা। চল ফ্রেস হয়ে বের হই।
সাহেদ বলল, চল।
এদিকে মধুমিতা ভাবছে কি একটি বিশ্রী ব্যাপার হয়ে গেল। ইস! ছেলেটি কি ভাবল ওকে? একটা বেকুফ ছাড়া কিছুই না কিন্ত ওর আর কি করার ছিল? বাবা মা তো একবারও তাকে কিছু বলেনি যে, বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। তাই ঘুম থেকে উঠেই যদি ছাদে গিয়ে এরকম ঘটনা শুনে, তাহলে তো যে কেউ ভয় পাবেই। খাবার টেবিলে বসে বাবা মায়ের কাছ থেকে ছেলেটির কথা সব জানতে পারল যে, ছেলেটি ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। ভাগ্যিস ওর ডিপার্টমেন্টে না। তাহলে খুব লজ্জা পেত একসাথে ক্লাস করতে। যাক এর মধ্যে ও আর ছাদে যাবেনা, যতদিন ছেলেটি ঘটনা ভুলে না যায়। আবার ভাবল, ছেলেটির জন্য নিজেদের ছাদে যাবনা কেন? আলবৎ যাব। এটা তো ঐ ছেলেটির কেনা ছাদ না। মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে, মা ওকে আগে জানালো না কেন? মধুমিতা ওর মায়ের রুমে গেলো এবং মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো। মধুমিতা মাকে বলল, মা, তুমি কেন আগে জানাওনি যে আমাদের চিলেকোঠায় ভাড়াটিয়া এসেছে। একবার হলেও তো আমাকে জানাবে! তাহলে তো এত লজ্জায় পড়তে হত না?
মা বলল, তোর সাথে সেরকম কথাই বা কখন হল? যখনি তোকে কল করেছি তখনি তুই শাপলা আর সাব্বিরের বউয়ের সাথে বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। আবার যখন কথা বলেছিস তখন এত ব্যস্ত যে, কথা বলতে গেলেই, হয় তুই মার্কেটে যাচ্ছিস নয়তো সিনেমা দেখতে যাচ্ছিস। তাহলে?
মধুমিতা ভাবল আসলেই তো তাই, খালার বাসায় শাপলা আপু আর ভাবীর সাথে এত মজা করেছে যে বাবা মা’র সাথে তেমন একটা কথা হয়নি। এমনকি ভাইয়াও লন্ডন থেকে কল দিয়েছিল তার সাথেও কথা হয়নি। ইস! পিচ্চিটাকে কতদিন দেখিনা। মধুমিতা মাকে জিজ্ঞেস করলো, মা, ভাইয়ারা কবে দেশে আসবে?
বলেছে তো এবারের শীতে ছুটি আছে, তখন আসবে।
এবার আমি আমার জন্য একটা DSLR ক্যামেরা আনতে বলব। আমার খুব সখ।
ঠিক আছে বলিস। এখন তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নে, তানাহলে তো চুল শুকাবেনা আবার ঠাণ্ডা লাগবে। আরেকটা কথা, এখন থেকে ভোর বেলায় একা একা ছাদে যাবিনা। বুয়াকে সাথে করে নিয়ে যাবি। কারণ এখনো তো ছেলেটিকে ভাল করে চিনিনা। মিতু, কথাটি মনে থাকবে?
মা মাঝেমাঝে আদর করে মধুমিতাকে মধুমিতার মিতা থেকে মিতু ডাকে। বাবা অবশ্য মধু বলে ডাকে, তবে বেশী রেগে গেলে পুরো নাম ধরেই ডাকে। মধুমিতা নামটি বাবাই রেখেছে। আর ভাইয়া! ভাইয়া তো যখন যা মনে আসে ,তাইই ডাকে।
মধুমিতা বলল, ঠিক আছে মা। এখন তবে যাই। এই বলে মধুমিতা চলে গেলো।
মধুমিতা বাথরুমে ঢুকে Shower ছেড়ে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো সকালের ঘটনা। ছেলেটি কি ওকে ডরপুক ভাবল? আবার নিজেই মনে মনে চিন্তা করলো, না তা ভাববে কেন। এরকম তো যে কারো সাথেই হতে পারে। তবে এত ঘটনার মধ্যেও ও আড়চোখে ছেলেটির আপাদমস্তক দেখে নিয়েছে। দেখতে ছেলেটি খারাপ না। সুদর্শন বলা চলে। নামটাও সুন্দর অপূর্ব। বাবা মা বুঝেই নামটি রেখেছে। হাইটে লম্বা আছে। প্রায় ছয় ফুট হবে। গায়ের রঙ শ্যামলা, মাথা ভর্তি চুল ঘাড় পর্যন্ত নামানো। ছেলেটি স্টাইল জানে। ব্যবহারও ভাল মনে হল।
তবে অপূর্বর সাথে যে ছেলেটি এসেছিল, কি যেন নাম! একদম একটা বিচ্ছু। কেমন করে হাসছিল, মনে হয় জীবনে কখনো যেন কাউকে ভয় পেতে দেখে নাই। ঐ ছেলেটির জন্যই ওর আরও বেশী লজ্জা লাগছিল। মধুমিতা মনেমনে ভাবল, আজকের এই ঘটনা রবিকে না বললেই নয়। তাই তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নিল।
রবি হল মধুমিতার Best Friend. ওরা দুজন একই সাথে কো-এডুকেশনে পড়ালেখা করেছে স্কুলে। তখন থেকে ওদের দুজনের বন্ধুত্ব এখনো অটুট আছে। রবি মধুমিতাদের একজন বান্ধবীকে School life থেকেই ভালোবাসে। নাম বন্যা। বন্যাও রবির জন্য পাগল। রবির হাইট ওত বেশী না। গায়ের রঙ কালোই বলা চলে। চুলগুলো হিন্দি আশিকি সিনেমার নায়ক রাহুলের মত করে কাটা। তবে খুব Fashioneble এবং সৌখিন একটি ছেলে। একহাতে ঘড়ি আরেক হাতে কয়েকটি ব্যান্ড পরে। সবসময় গলায় একটি সোনার চেইন পড়ে। চেইনের মধ্যে R লেখা একটি লকেট থাকে। ওকে যদি বলা হয়, কিরে মানুষ তো প্রেমিকার নাম গলায় ঝুলায়, তুই বন্যার B না ঝুলিয়ে নিজের নাম গলায় ঝুলিয়ে ঘুরছিস যে! ও মজা করে বলে, আরে R দিয়ে আমার নাম Robin Rock Star এবং Jems Bond-এর নায়ক Rojar Moor-কেও বুঝায়, দেখিস একদিন আমিও….এই বলে হো হো করে হাসে। রবি নিজেকে কখনো কখনো Rock Star, Jems Bond এর নায়ক Rojar Moor বলে দাবি করে। রবি খুব ভাল গীটার বাঁজায়। গানের পাগল বলতে যা, ও তাইই। কোথায়ও Concert হবে শুনলে ওকে আর পাওয়া যায়না। এমনকি ওরা কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে খুলনায় একটি ব্যান্ড গঠন করেছে, মাঝে মাঝে ওখানে যেয়ে Stage Show করে। রবি মাঝেমাঝে স্কুলে নাটকও করত। স্কুলের নাটকগুলোতে নির্দ্বিধায় অভিনয় করে যেত। মধুমিতারা ওকে ভবিষ্যতের উঠতি নায়ক বলে খেপাতো। রবি কথা বলে খুব মজা করে। মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে। আর যখন তখন মজার মজার জোকস বলে। এই জন্যই রবিকে ওদের সব বন্ধুবান্ধব খুব পছন্দ করে ও ভালোবাসে।
মধুমিতা তাড়াতাড়ি গোসল করে বেড় হয়ে ওর রুমে গেল। চুল আঁচড়িয়ে ফিটফাট হয়ে চার্জার থেকে মোবাইল খুলেই রবিকে কল দিল। রিং হচ্ছে কিন্তু রবি কল ধরছেনা কেন? কেটে দিয়ে আবার কল করল। এবার রবি কল ধরেই ওকে ঝারি মারল। রবি মধুমিতাকে মিতা বলেই ডাকে।
রবি বলল, কিরে মিতা, ঠিকমত প্রাকৃতিক কাজও করতে দিবি না? রবি এভাবেই কথা বলে, কোন লজ্জাশরম নেই ওর মধ্যে।
মধুমিতা বলল, তুই কি করে জানলি যে, আমি কল করছি?
আরে বুদ্ধু, তোর মাথাটাথা ঠিক আছে তো? এটাও ভুলে গেছিস! মোবাইলে তোর নাম্বার উঠছে।
ওহ! সরি।
রাখ তোর সরি। তোর কিছু একটা হয়েছে। কি হয়েছে? তাড়াতাড়ি পেট থেকে বের করে ফ্যাল। তোর তো আবার আমাকে সব কথা না বললে, ভাত হজম হবেনা। একমাত্র বাথরুমের কথা ছাড়া, ওটা তো আবার হজম হয়েই বের হয়। এই বলে রবি হো হো করে হাসতে লাগল।
মধুমিতার ভীষণ রাগ হল। ও রেগে গিয়ে বলল, রবি, তুইকি আমার কথা শুনবি নাকি শুধু শুধু বকবক করে যাবি।
তোর কথা তো শুনবো কিন্তু তার আগে বল, খালার বাসা থেকে কখন এসেছিস।
অনেক রাতে এসেছি।
এসে কল দিলিনা যে?
কি করে দিব, খুব ঘুম পাচ্ছিল। বাবা মায়ের সাথেও তেমন কোন কথা না বলেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
হুম্ম! বুঝলাম। এবার ঝেড়ে কাশ, আসল ঘটনা কি?
মধুমিতা সকালে অপূর্ব আর সাহেদকে নিয়ে যে ঘটনা হয়েছিল তার সব ঘটনা, রবিকে খুলে বলল। তারপর রবিকে বলল, তুইই বল, কি রকম একটা বিশ্রী ঘটনা ঘটে গেল। ছেলেগুলো আমাকে কি ভাবল ?
রবি বলল, ছেলেগুলো কি ভেবেছে তা জানিনা, তবে তুই যে ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে যাচ্ছিস, তা আমি ঠিক বুঝতে পারছি।
যাহ্! তোকে বলছে, তুই একটু বেশীই বুঝিস।
তা নয়তো কি? তোরা মেয়েরা একটা ঘটনা নিয়ে এত প্যাঁচাতে পারিস, তা দেখে আমার মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়।অথচ আমরা ছেলেরা কিন্ত একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তা নিয়ে অত মাথা ঘামাইনা। বাদ দে ওসব।
বাদ দিব মানে? তোকে আমি বললাম, আর তুই সব শুনে বাদ দিতে বলছিস?
ঠিক আছে, বাদ দিস না। তোকে কথা দিলাম, আমি একদিন গিয়ে চিজগুলোকে দেখে আসব। এবার শান্তি? এখন বল, খালার বাসায় কেমন মজা করলি?
খালার বাসায় খুব মজা হয়েছে। সারাদিন ঘুরাঘুরি আর খাওয়াদাওয়া। আরও অনেক মজার ঘটনা আছে। এত কথা ফোনে বলা যাবেনা। তুই কবে আমাদের বাসায় আসবি? আজকে বিকেলে আয়।
নারে, আজকে আসতে পারবোনা কারণ কালকে ভরে টাঙ্গাইল যাচ্ছি মা’র সাথে। বিকেলে বন্যার সাথে দেখা করতে হবে।
কবে ফিরবি?
দুই একদিনের মধ্যেই ফিরব আশা করি। জমিজমার ব্যাপারে কি কাজ আছে তাই মা’র সাথে আমাকেও যেতে হচ্ছে। ফিরেই তোর সাথে দেখা করবো। তুই ঘুরে এসেছিস এবার আমিও ঘুরে আসি, কাটাকাটি! বলেই রবি হাসতে লাগল।
বন্যার খবর কি? কেমন আছে?
ওর কথা আর বলিস না।
কেন, কি হয়েছে?
কি আবার হবে। সারাদিন ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান । এটা করবেনা, ওটা করবেনা, অসহ্য। মনে হয় পারলে পায়ে বেড়ী পড়াত। বেশী বড়লোকের মেয়ে হলে যা হয়। আমি বাবা কারো ধার ধারিনা। স্বাধীনভাবে চলতে চাই, তা না, ওর কথামত চলতে হবে। এজন্যেই অচেনা মানুষের সাথে প্রেম করতে হয়, স্কুল থেকে প্রেম তো, তাই বেশী জেনে ফেলেছে সেই কারণে এত বাঁধা।
তোর ভাবখানা এমন, তুই থোড়াই কেয়ার করিস ওকে?
তা না, তবে কত ভাল লাগে বল? সারাক্ষণ এত সিগারেট খেওনা, লিভার নষ্ট হবে। চা কফি কম কম খাও। বাসায় এত রাত করে ফের কেন? কোথায় গেছিলে আমাকে না বলে ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝে মাঝে মনে হয়, ও একজন ডাক্তার আর আমি রুগী। নয়তো আমি আসামী আর ও উকিল, তাই জেরা করছে।
মধুমিতা হেসে বলে, তুই পারিসও। মেয়েটা তোকে অনেক ভালবাসে। তাই…
রবি মধুমিতাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, আর আমি? আমি ভালবাসিনা? আমি কি ওর সাথে এরকম করি? মিতা জানিস, মাঝে মাঝে মনে হয় ওর মন বুঝা মুশকিল। ও কখন কি যে চায়, নিজেও মনে হয় বুঝেনা। আমি এখন রাখি, আমার খুব খিদে পেয়েছে।
ঠিক আছে যা। মাও আমার জন্য খাবার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। ভাল থাকিস আর টাঙ্গাইল থেকে ফিরে এসে কল দিস। আল্লাহ হাফেজ।
রবিও বলল, আল্লাহ হাফেজ।
এদিকে, সাহেদ চলে গেল কারণ কালকে ওরা দুজন একসাথে রাজশাহী যাবে। ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হওয়ার আরও ১০/১২ দিন বাকী আছে। অপূর্বর বাবা কল করেছে যে, সে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসেছে তাই এর মধ্যে বাসায় এসে অপূর্ব যেন দেখা করে যায়। তাছাড়া অপূর্বর বোন ও মা ওকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে। অপূর্ব গোছগাছ করে, ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল কারণ সকাল ৮ টা ৩০ মিঃ ট্রেন ছাড়বে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। শুয়ে শুয়ে অপূর্ব চিন্তা করল, সেদিন এবাড়ির যে মেয়েটিকে নিয়ে এত কাণ্ড হল, তাকে তো এই দুদিন আর ছাদে আসতে দেখেনি! তাহলে কি আমার জন্য ছাদে আসা বন্ধ করে দিল। আবার ভাবল, ধুর!তা হবে কেন? ওদের ছাদ, ওরা যেমন খুশী তেমন নেচেগেয়ে বেড়াবে, সেখানে আমার বলার কি আছে? অপূর্ব মনে মনে লজ্জা পেল এই ভেবে যে, আমি কেন ঐ মেয়েটির কথা ভাবছি! কখন তো এমন হয়নি। কোন মেয়ের জন্য এমন করে ভাবিনি বা কোন মেয়ের প্রতি এমন ভাললাগা অনুভব করিনি, তবে এখন কেন ভাবছি?
অপূর্বর মনে পড়ছে স্কুল জীবনের কথা, যখন ও নবম দশম শ্রেণীতে পড়ে। তখন নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করল। কণ্ঠস্বর ভারি হয়ে আসলো। নাকের ঠিক নিচে গোঁফের রেখা দেখা দিল এবং নানাভাবে শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিল। এখন বুঝতে পারে যে, তখন হরমন জনিত কারণে হয়তো মনে মনে অনেক মেয়েকে ভালো লেগেছিল কিন্ত লজ্জায় কখনো কাউকে কিছু বলতে পারেনি। তাছাড়া তখন সে ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল ফলে লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ বেশী ছিল অন্যদিকে অতটা নজর দিতে পারেনি। তবে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সেই বয়সে সিগারেট ধরা শিখেছিল। বন্ধুরা সারাক্ষণ বলতো, সিগারেট না খেলে নাকি ম্যানলী লাগেনা। মনে আছে প্রথম যেদিন সিগারেট ধরায় সেদিন কাশতে কাশতে দম বের হয়ে যাবার অবস্থা! বাসায় আসার সময় বন্ধুরা মুখের গন্ধ দূর করার জন্য কতগুলো মিষ্টি পান ধরিয়ে দিল যেন,বাবা মা টের না পায়। বাসায় এসে দেখল বাবা আর মা ডাইনিং টেবিলে বসে গল্প করছে। তাদের মুখোমুখি হতে খারাপ লাগলো। কিন্ত মা ওকে দেখেই বলল ,কিরে অপু (মা ওকে আদর করে অপু ডাকে), তোর কি শরীর খারাপ? জ্বর আসছে? চোখমুখ এমন লাল দেখাচ্ছে। যা ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খাবার খেতে আয়।ও তাড়াতাড়ি ওর নিজের রুমে চলে গেল এবং রুমে ঢুকেই বাথরুমে ঢুকে গেল। খুব ভাল করে একটা সাওয়ার নিল। তারপরেও ওর কেন যেন মনে হল গা থেকে সিগারেটের গন্ধ বের হচ্ছে। নিজের কাছে খুব অপরাধবোধ হল। ডাইনিং টেবিলে ভালো করে বাবা মায়ের সাথে কথাও বলতে পারলনা। কোনরকমে খেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে গেল।
অপূর্ব যেহেতু দেখতে অন্যান্য ছেলেদের চেয়ে একটু বেশি সুদর্শন তাই পাড়ার মেয়েরা অনেকেই ওর প্রতি দুর্বল ছিল। একদিনের একটি ঘটনায় ও নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। ঘটনাটি ছিল এইরকম, একদিন ও রাস্তা দিয়ে হেঁটে ওর বাসায় ফিরছিল, বাসার কাছাকাছি আসতেই একটি মেয়ে সম্ভবত নবম/দশম শ্রেণীতে পড়ে , ওকে ডেকে বলল – ভাইয়া , আপনার জন্য এই গোলাপটি এনেছি। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে গোলাপটি যেই দিতে যাবে অমনি অপূর্ব মেয়েটির গালে একটি চড় বসাল। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। বাসায় আসার পর অপূর্বর মা ওকে অনেক বকাবকি করল কারণ সে দোতালার বারান্দা থেকে সব দেখেছে। পরে অবশ্য অপূর্বর নিজের কাছেই খারাপ লেগেছে এই ভেবে যে, সে কাজটি ঠিক করেনি। তখন থেকেই অপূর্ব মেয়েদের এড়িয়ে চলে।
সাহেদ তো অনেক আগের থেকেই শোভার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে। সাহেদ একটু পাগলাটে জেনেও শোভা ওকে খুব ভালোবাসে। শোভা মেয়েটি খুব ভাল। অপূর্বকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকে এবং মাঝে মাঝে ওদের গাছের পেয়ারা, কুল ইত্যাদি এনে দেয়। তখন সাহেদ শোভাকে এই বলে খ্যাপায়, ভাশুরকে ভাল করে যত্নআত্তি কর কারণ আমাদের বিয়ে তো ওর সাহায্য ছাড়া হবেনা। অপূর্বর বন্ধুরা অনেকেই তখন থেকে চুটিয়ে প্রেম করছে কিন্ত ওর কেন যেন কাউকে তেমন ভাল লাগেনি। অথচ মধুমিতাকে দেখার পর থেকে ওর মনের মধ্যে কেমন যেন তোলপাড় করছে। তাহলে একেই কি ভালোবাসা বলে? এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখে পাঁচটা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে, কমলাপুর রেলস্টেশনের দিকে রওনা হল। অপূর্ব সাতটার মধ্যে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে গেল। তারপর সাহেদকে কল করল। সাহেদ জানাল ও কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। ২০মিনিটের মধ্যে সাহেদ চলে আসলো। ওরা এসি কেবিনের টিকেট করেছে। কেবিনে ঢুকে রিলাক্সভাবে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ট্রেন ছেড়ে দিল।
সাহেদ অপূর্বকে বলল, দাঁড়া শোভাকে একটা কল করি কারণ ও বলেছিল রওনা হওয়ার সময় যেন কল করি।
অপূর্ব বলল, ঠিক আছে আমিও মাকে জানিয়ে দেই।
দুজনে কথা বলে চা নাস্তা করে নিল। তারপর সাহেদ অপূর্বকে বলল, কিরে দোস্ত, ঐ মেয়েটির সাথে কি তোর আর দেখা হয় নাই?
অপূর্ব বলল, কোন মেয়েটি ?
আরে তোর বাসার ভীতু সেই মেয়েটা!
না, মেয়েটি আর ছাদে আসেনি, মনে হয় ভয় পেয়েছে।
কি বলিস, তাইই?
অপূর্ব বলল, হুম্
তোর কি মনে ধরেছে, মেয়েটাকে?
ধুর! কে বলেছে তোকে।
সাহেদ বলল, এই পর্যন্ত তো কোন মেয়েই তোকে পটাতে পারল না। তোর বইগুলোই তোর প্রেমিক হয়ে রইল। দেখ! এবার যদি তোর কিছু একটা হয়। মাইরি বলছি, মেয়েটা কিন্ত দারুণ দেখতে।
কিযে বলিস না। যার বিয়ে তার খবর নাই, পাড়াপড়শির ঘুম নাই।(কথাটা যদিও বলল কিন্তু মনে মনে ভাবল,আসলেই তো মেয়েটি আমাকে মন থেকে দুর্বল করে ফেলেছে)সাহেদের কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ল।
সাহেদ বলল, ঘুম কি করে থাকবেরে, চোখের সামনে যদি অসাধারণ প্রজাপতি ঘরে! তোর যে ঘুম হারাম হয়েছে তা বুঝতেই পারছি। দেখা যাক, এবার বাড়ি থেকে ফিরে প্রজাপতি তোর মনের ঘরে হানা দেয় কিনা। এই বলে সাহেদ হো হো করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। ট্রেনের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রইল।
এদিকে মধুমিতার ঠাণ্ডা জ্বর হয়ছিল। তাই ও ছাদে যায়নি। ভার্সিটির ক্লাস শুরু হতে আরও কয়েকদিন বাকী আছে তাই সবাই যার যার মত ঘুড়ে বেরাচ্ছে। সেজন্যে কারো সাথে তেমন দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছেনা। রবিনের প্রেমিকা বন্যা, একদিন ওদের বাসায় এসেছিল। অনেকক্ষণ ছিল। রবিনের নামে একগাদা নালিশ দিয়ে গেছে। মধুমিতা বন্যাকে এই বলে সান্তনা দিয়েছে যে, রবিন এলে ওকে বকা দিবে এমন কি প্রয়োজনবোধে ওকে মাইরও দিবে। বন্যা ওর কথায় আসস্ত হয়েছে কারণ রবিন এক মাত্র মধুমিতাকেই ভয় পায়। বন্যা বলেছিল ছাদে গিয়ে বসবে কিন্ত ওর ঠাণ্ডা লেগে আবার জ্বর বেড়ে যাবে তাই মা নিষেধ করেছে। একদিন বুয়াখালা, ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে বলল, খালা ছাদের লম্ফা মানুষটা বাড়ি গেছে, এখন আফনে ছাদে যাইতে পারেন ভয়ের কিছু নাই। এই বলে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসতে লাগল। মধুমিতার ভীষণ রাগ হল কিন্ত বুয়াখালাকে কিছু বলল না। কারণ মা বাবা ওদেরকে সবসময় বলে যে, বড়দের শ্রদ্ধা করতে। সে যেই স্ট্যাটাসের হোক না কেন।
আজকে জ্বরটা অনেক কম । ঘরে বসে থাকতে থাকতে আর ভাল লাগছেনা। মধুমিতা, মাকে বলে বুয়াখালাকে নিয়ে বিকেলে ছাদে গেলো। ছাদে গিয়ে দেখল ওর লাগানো টবের গাছের ফুলগুলো ভালই শোভা ছড়াচ্ছে। শীত আসতে আরও মাস খানেক বাকি। তখন কতোগুলো গাঁদা আর ডালিয়ার চারা আনতে হবে। মধুমিতা ফুল খুব ভালোবাসে তাই কখনই গাছ থেকে ফুল ছিঁড়ে না। ওর মনে হয়, গাছগুলো কষ্ট পায়। বাবা বলেছিল পাখি পোষার জন্য কিন্ত ওর খাঁচায় বন্দী পাখি দেখতে ভাল লাগেনা। তাই ছাদে কবুতরের ঘর করে কতোগুলো জালালি কবুতর পালছে। কবুতরগুলো ওদের ইচ্ছেমত আকাশে ঘুড়ে বেড়িয়ে আবার বাসায় চলে আসে। মধুমিতা। বুয়াখালাকে দিয়ে টবের আগাছা পরিস্কার করিয়ে ছাদটাকে ভাল করে ঝাড়ু দেয়ালো।
মধুমিতার কেনও যেন, চিলেকোঠার দিকে বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল আর সেদিনের কথাগুলো মনে পড়ছিল। ইস! কি একটা বিশ্রী কারবার হয়েছিল। বুয়াখালা যদি ওর মনের ভাব বুঝতে পারে, তবে আবার টিটকারি দিবে। তাই তাড়াতাড়ি নীচে নেমে এল। নিচে নামতে নামতে চিন্তা করল, বাবা কেন যে, চিলেকোঠা ভাড়া দিল! এখন তো ও আর স্বাধীনভাবে যখনতখন ছাদে আসতে পারবেনা। ছাদটা যে, ওর খুব প্রিয় জায়গা। যদিও ও কাউকে কেয়ার করেনা। ছেলেটি যদি ভাল হয় তাহলে অসুবিধা নেই কিন্ত অন্যরকম হলেই ভাইয়াকে দিয়ে বাবাকে, বলে বাসা থেকে উঠিয়ে দিবে। অবস্থা বুঝে ব্যাবস্হা।
অপূর্ব এতদিন পর রাজশাহীতে পৌঁছিলে বাড়ির মধ্যে ঈদের আমেজ তৈরি হল। সবাই নানান প্রশ্নে জর্জরিত করতে লাগল। বিশেষ করে মা, বাবা, তুই এত শুকিয়ে গেছিস কেন? খাওয়াদাওয়া কোথায় করিস? যেখানে উঠেছিস তারা কেমন? ওখানে তোর কোন অসুবিধা হচ্ছেনা তো?ইত্যাদি নানান প্রশ্ন। আর বোন অপি তো আছেই। ওর বিড়াল হারিয়ে গিয়েছিল। বিড়ালের গলার রুপার ঘণ্টাটা কে যেন নিয়ে গেছে। ওর বান্ধবী তৃনা ওর সাথে আড়ি দিয়েছে কারণ অপি ওকে ওর টিফিনের ভাগ দেয়নি, এখন ও কি করবে? নানান অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসলো। এদিকে বাবা ডেকে নিয়ে অনেক পরামর্শ দিল, এটা করবেনা ওটা করবেনা। অপূর্ব বাবার সব কথায় মাথা নেড়ে সায় দিয়ে গেল।
মধুমিতা ঘুমিয়ে ছিল রবিনের চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে ঘুম ভাংল। রবিনের এই বাসায় অঘাত স্বাধীনতা কারণ ওর বড় ভাই, মধুমিতার ভাইয়ার ক্লাসমেট ছিল। তাই ছোটবেলা থেকেই ওর এ বাসায় যাতায়াত এবং সে মধুমিতার ক্লাসমেট। ফলে রবিনকে সবাই খুব স্নেহ করে। রবিন মধুমিতার রুমের বাইরে থেকেই চিৎকার করে ডাকছে, মিতা আর কত ঘুমাবি, এইবার উঠ।
মধুমিতা বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে বলল, কিরে কখন এলি?
রবিন বলল, অনেক্ষন প্রায় ১০/২০ মিনিট।
১০/২০ মিনিট, অনেক্ষন?
তা নয় তো কি? আমার কাছে প্রতিটি মিনিটের মূল্য আছে। ১০/২০ মিনিট তো বিশাল ব্যাপার!
মধুমিতা বুঝল ওর সাথে কথা বলে পারা যাবেনা। তাই রবিনকে বলল, নাস্তা করেছিস?
না, তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
তুই গিয়ে মা’র সাথে গল্প কর আমি ফ্রেস হয়ে এখুনি আসছি।
রবিন বলল, শুধু ফ্রেস হলে হবেনা, একবারে রেডি হয়ে আয়, বাইরে ঘুড়তে যাব। বন্যাও আসবে।
ঠিক আছে আসছি।
রবিন আর মধুমিতা নাস্তা করে বের হয়ে গেল। মধুমিতা গাড়ি নিতে চাইলে রবিন বলল, আজকে গাড়ি লাগবেনা। তিন জন রিক্সায় করে ঘুড়ে বেড়াবো। তাই ওরা রিক্সা নিল। আড়ং- এর কাছ থেকে বন্যাকে রিক্সায় তুলে নিল। রবিন রিক্সার সিটের উপরে বসলো আর ওরা দুজন দু’পাশে বসল। ওরা শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়ে আড্ডা দিল। অনেকদিন পর মধুমিতার খুব ভাল লাগল। মাঝে মাঝে অবশ্য রবিন আর বন্যার ঝগড়া থামাতে হল। আর মনে মনে ভাবল, ভাগ্যিস এখনো ওর কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেনি! তাহলে তো এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ওর জন্য খুবই দুরূহ ব্যাপার হত। কারণ ও যেইই অভিমানী।
রাজশাহীতে আত্মীয়স্বজন বাসায় দাওয়াত খেয়ে আর বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দিয়ে অপূর্বর সময়টা ভালোই কাটল। এদিকে সাহেদ রাজশাহীতে এসে পরিবার আর শোভাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো যে, মাঝে মাঝে ক্লাবে এসে দেখা করত, তখন অনেক রাত পর্যন্ত ওরা আড্ডা দিত। এভাবে কখন যে ঢাকায় যাওয়ার সময় হয়ে গেল। আজকে ট্রেনে উঠে অপূর্বর খুব মন খারাপ হল। মা আর অপি অনেক কান্নাকাটি করছিল। ওদেরকে এই বলে বুঝিয়েছে, যখনি ভার্সিটি বন্ধ হবে তখনি চলে আসবে। বাবার মনটাও খারাপ দেখেছে কিন্ত সে তো আর কান্নাকাটি করতে পারছেনা ওদের মত।
ঢাকায় এসে বাসায় ঢুকেই কুদ্দুসের সাথে দেখা হল। কুদ্দুস ওকে দেখেই বলল, ভাইজান,আসছেন। বাসার সবাই ভাল আছে?
অপূর্ব বলল, হ্যাঁ ভাল আছে।
আলহামদুলিল্লাহ! আমার কাছে ব্যাগগুলো দেন, আমি উপরে দিয়ে আসি।
বুয়া এসে মধুমিতার মাকে বলল, আম্মা উফরের মামা আইছে।
মধুমিতার মা বলল, তুমি যেয়ে ওর রুমটা পরিস্কার করে দিয়ে আসো। আর কিছু লাগবে কিনা জেনে এসো।
কলিংবেলের রিং শুনে মধুমিতার মা দরজা খুলে দেখল অপূর্ব দাড়িয়ে আছে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে। অপূর্ব সালাম জানিয়ে, মধুমিতার মায়ের হাতে টিফিন বাটি দিয়ে বলল, মা পিঠা পাঠিয়েছে আপনাদের জন্য।
মধুমিতার মা বল্লেন, এত কষ্ট করে এগুলোর কি দরকার ছিল। তোমাদের বাসার সবাই ভাল আছে, বাবা?
হ্যাঁ ভাল আছে।
মধুমিতার মা মধুমিতাকে ডাকলেন, মিতু এদিকে আয় তো একটু।
মধুমিতা,ভেতরের রুম থেকে বলল, আসছি।
অপূর্ব দেখল, মধুমিতা তার চুলগুলোকে খোঁপা করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে ড্রয়িং রুমে ঢুকল। চুলগুলো আর ওর বাঁধ মানল না, মধুমিতার পিঠের ওপর ছরিয়ে পড়ল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য! অপূর্ব মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল এবং ওর সারা শরীরে একটি শিহরণ খেলে গেল।। মধুমিতা ওকে দেখে থমকে দাঁড়াল।……(চলবে)