আমার চোখে তোমার নেশা


লেখক- রহমান ফাহমিদা (৩য় পর্ব)–মা বললেন, আয় পরিচয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে অপূর্ব । আমাদের চিলেকোঠায় থাকে। যার কারণে সেদিন ভয় পেয়েছিলি।মধুমিতা এই কথা শুনে মায়ের দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল।
মা অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, এই হল আমাদের মেয়ে, মধুমিতা। তোমার সাথেই পাস করেছে। ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
অপূর্ব বলল, হ্যালো ।
মধুমিতাও বলল, হ্যালো ।
মধুমিতার মা মধুমিতাকে বল্ল,বস। অপূর্বও ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
মধুমিতা ওর মা’র পাশের সোফায় বসলো। তারপর অপূর্বকে জিজ্ঞেস করল, কোন সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছেন?
অপূর্ব বলল, মার্কেটিং এ। বাবার ইচ্ছে, আমি যেন তাঁর ব্যবসা দেখাশুনা করি, তাই এই লাইনে। আপনি?
আমি ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপে। এই বিষয়টার প্রতি আমার খুব দুর্বলতা।
খুব ভাল সাবজেক্ট।
এর মধ্যে মধুমিতার বাবা রুমে ঢুকল। ঢুকেই অপূর্বকে দেখে বলল, কখন এলে অপূর্ব?
অপূর্ব দাড়িয়ে সালাম দিয়ে বলল, কিছুক্ষণ আগে।
বাসার সবাই ভাল আছে?
হ্যাঁ, ভাল আছে। আমি এখন যাই ।
না না, যাবে কেন? ডিনার করে যাও। রাত তো অনেক হয়েছে।
মধুমিতার মা বলল, ঠিকই তো অনেক রাত হয়েছে, এখন আর কোথাও গিয়ে কাজ নেই। আমাদের সাথেই যা আছে তা দিয়েই ডিনার কর। তারপর মধুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল, যা তো মিতু, বুয়াকে গিয়ে বল, টেবিলে খাবার দিতে।
মধুমিতা উঠে চলে গেল। অপূর্ব মধুমিতার চলে যাওয়া পথের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পরে মধুমিতার মায়ের ডাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। মধুমিতার মা বলল, চল ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসি। ওখানে খেতে খেতে গল্প করা যাবে।
খাওয়ার টেবিলে অনেক কথা হল। এক সময় মধুমিতার কাছে অপূর্ব জানতে চাইল, মধুমিতার কি কি ভাল লাগে। মধুমিতা গান-কবিতা ভালোবাসে, ছবি তুলতে পছন্দ করে। আর এখানে সেখানে ঘুরতে খুব ভাল লাগে । তাছাড়া ক্যারাটের ফিল্মগুলো ওর খুব ভাল লাগে । Jacky chan- ওর খুব পছন্দের নায়ক।
মধুমিতা অপূর্বর কাছে তার কি কি ভাল লাগে জানতে চাইলে, দেখা গেল মধুমিতার সাথে অপূর্বর পছন্দের অনেক কিছু মিলে যায়, যেমন – গান,কবিতা, ছবি কিন্ত ছবি আঁকতে অপূর্ব বেশি ভালোবাসে । ফিল্ম তেমন একটা দেখেনা তবে প্রচুর বই পড়ে।
মধুমিতার মা এতক্ষণ ওদের দুজনের কথা শুনছিল। হঠাৎ করে তিনি বলে উঠলেন, তোমরা দুজনেই ভার্সিটিতে একই সেমিস্টারে ভর্তি হয়েছ এবং একি বয়সের। তবে এত আপনি আপনি করছ কেন? যদিও সাবজেক্ট ভিন্ন, তারপরেও আপনি বলাটা কেমন যেন লাগছে। তাছাড়া তুমি বললে দুজনে অনেক কিছু শেয়ার করতে পারবে। বলা তো যায়না কখন কোন বিপদ আসে! অপূর্বকে বলল, বাবা আজ থেকে তুমি করেই বলবে । তারপর মধুমিতার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি বল? ঠিক বলেছিনা?
মধুমিতার বাবা বললেন, হুম! ঠিকই বলেছ।
অপূর্ব মনে মনে ভাবল, মধুমিতার মা কত সহজে ওর মনের আশাটি সহজ করে দিল। কারণ আপনি বলতে ওর যেন, কেমন লাগছিল। খাওয়াদাওয়া শেষ করে অপূর্ব বিদায় নিয়ে নিজের রুমে চলে এল। রুমে এসেই সোজা বিছানায় কারণ এত জার্নি করে এসেছে তারপর এতক্ষণ বসে থাকা, তাই খুব ক্লান্ত লাগছিল। বিছানায় শুয়ে মধুমিতার কথা ভাবছিল। মেয়েটা ওকে কি এক নেশায় আসক্ত করে ফেলেছে তা ও নিজেও বুঝতে পারছেনা। কারণ সারাক্ষণ ওর নূপুরের ঝংকার কানে বাজছে। এমনকি মধুমিতার চুলখুলে ওর পিঠে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে। মধুমিতার কথা চিন্তা করতে করতে তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙল সাহেদের ফোনকলে। হ্যালো বলতেই সাহেদ একটা ঝাড়ি মেরে বলল, কিরে ব্যাটা, এখনো ঘুমাস? কয়টা বাজে,খেয়াল আছে?
অপূর্ব বলল, কয়টা বাজে?
কয়টা বাজে মানে? তোর কাছে ঘড়ি নাই? নয়টা বাজে শা-লা, তাড়াতাড়ি উঠ। তারপর ফ্রেস হয়ে বের হ, একসাথে নাস্তা করব। আমি তোর জন্ন টিএসিতে ওয়েট করব। নীলক্ষেত থেকে আগে বই কিনব তারপর ভাববো কোথায় যাব। কারণ কালকের থেকে ক্লাস শুরু হবে, তাই বইটা এই মুহূর্তে জরুরী। অবশ্য আমার চেয়ে তোর বেশি জরুরী, আমি তো আর তোর মত ছাত্র না, যে কিনা সারাক্ষণ মুখবুজে বই পড়ে! এই বলে হাসতে লাগল।
অপূর্ব ফোন রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হল। সিঁড়িতে মধুমিতা আর ওর বাবার সাথে দেখা। অপূর্ব মধুমিতার বাবাকে সালাম দিয়ে মধুমিতাকে বলল, Good morning. মধুমিতাও হাসি দিয়ে Good morning বলল। অপূর্ব মধুমিতার হাসির রেশ নিয়েই বেরিয়ে পড়ল। মনে মনে ভাবল, দিনটি মনে হয় আজকে ভালই যাবে।
ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। অপূর্বর সাথে মধুমিতার প্রায়ই সিঁড়িতে, ছাদে, ভার্সিটিতে, কখনো কখনো টিএসিতে দেখা হয়। মাঝে মাঝে বাসায় গানের ক্যাসেট, কবিতার বইও আদানপ্রদান হয়। এইভাবে দুজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব এবং ভাললাগা তৈরি হয়। মধুমিতা সারাক্ষণ নদীর কলকল ধ্বনির মত কথা বলেই যায়। আর অপূর্ব মন্ত্রমুগ্ধর মত ওর কথা শুনে। কখনো কখনো অন্যমনস্ক হয়ে গেলে মধুমিতা ওকে ধমক দিয়ে ওঠে, এই কি ভাবছ? তারপর কি হল শোনো, এই বলে ওর বাকী গল্প শেষ করে।
মধুমিতার বন্ধু রবিনের সাথে অপূর্বর পরিচয় হয়েছিল এইভাবে, একদিন অপূর্ব ওর রুমে বসে গান শুনছে আর গল্পের বই পরছে। এমন সময় মধুমিতা একটি ছেলেকে প্রায় টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে আসল। অপূর্ব দেখল মোটামুটি হাইটের ছেলেটি। ছেলেটির হাতে একটি গীটার । কালো জিন্সের প্যান্ট আর হালকা গোলাপি কালারের একটি টিসার্ট পড়া। সার্টের কলারটা একটু উচু করে উঠানো। চুলগুলো বম্বের আশিকি সিনেমার নায়ক রাহুলের মত করে কাটা। এহাতে ঘড়ি আর অন্য হাতে নানান রকম কয়েকটি ব্যান্ড পড়া।
মধুমিতা রুমে ঢুকেই বলল, অপূর্ব দেখো, কাকে ধরে এনেছি। এই হল আমার জিগিরি দোস্ত, রবিন। খুব সুন্দর গান করে। আজকে নিশ্চয়ই ওর গান শোনাবে তোমাকে। কিরে রবিন, শুনাবিনা?
রবিন বলল, তুই কি থামবি, মিতা? তুইই সব বলবি? আগে আমাদের দুজনের পরিচয় পর্বটা তো সেরে নিতে দিবি,না বকবক করেই যাবি?
মধুমিতা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ঠিক আছে তোরাই কথা বল, আমি আর কিছু বোলবনা। এই আমি চুপ করলাম।
রবিন বলল, বাঁচালি! তারপর অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল, আমি রবিন। মিতা মানে মধুমিতার সাথে একই সাবজেক্টে ভর্তি হয়েছি ঢাকা ভার্সিটিতে।
অপূর্ব বলল, আমি অপূর্ব। রাজশাহী থেকে এসেছি। আমি মার্কেটিং- এ ভর্তি হয়েছি ঢাকা ভার্সিটিতে।
রবিন বলল, জানি। খালাম্মার কাছ থেকে সব শুনেছি। ভালোই হল, সবাই মিলে আড্ডা দেয়া যাবে। আমি যেহেতু মিতা I mean মধুমিতার বন্ধু , সেই সুত্রে আমি তোমারও বন্ধু। তোমার যে কোন সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব।
অনেক ধন্যবাদ, অবশ্যই জানাব।
রবিন মধুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল, কিরে প্যাঁচার মত মুখ করে আছিস ক্যান? আমাদের পরিচয়ের পালা শেষ এবার তুই ইচ্ছেমত বকবক করতে পারিস।
মধুমিতা গাল ফুলিয়ে বলল, আমি আবার কি বলবো? তোরাই বকবক কর। আমি নীচে যাই।
রবিন মধুমিতার হাতটি ধরে বলল, আরে তুই যাবি কোথায়? তুই না থাকলে তো গল্পই জমবে না। তাছাড়া তুই না আমার গান শুনবি? তুই চলে গেলে তো, আমার গলায় অসাধারণ গান শুনে অপূর্ব যখন ফিট হয়ে যাবে তখন ওকে সামলাবে কে? এই বলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।
অপূর্ব দেখল, মধুমিতাও হেসে উঠল। তবে রবিন যখন মধুমিতার হাত ধরে টানছিল, তখন অপূর্বর মনে মনে রাগ হচ্ছিল। তবে সাথে সাথেই নিজেকে সাম্লিয়ে নিয়েছে এই ভেবে যে, রবিন মধুমিতার ছেলেবেলার বন্ধু আর অপূর্ব তো মধুমিতার কিছুইনা। তাই রবিনের ওপর ওর রাগ করা সাজেনা। এই সময় বুয়াখালা, নাস্তা নিয়ে এল। ওরা চা নাস্তা খেল তারপর রবিন মধুমিতাকে বলল, তোর যদি কোন অসুবিধা না হয় তবে একটি সিগারেট ধরাব। অবশ্য তুই না বললেও শুনছে কে? এটা একটি ভদ্রতা তাই বলা! তারপর অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল, কি ব্রাদার অভ্যাস আছে তো?
অপূর্ব বলল, তেমন না, তবে যখন খুব টেনশন হয় তখন।
মধুমিতা বলল, এসব ছাইপাস গিলে কি হয়, পেট তো ভরে না!
রবিন বলল, তুই কি বুঝবি? কোন এক সময় টেনে দেখিস, কি মজা।
আমার বয়েই গেল! তোদের এসব ছাইপাস গিলার জন্য। মধুমিতা রবিনকে বলল, দেরি না করে নে এখন গান ধর। ঐ গানটা!
কোনটা? রবিন বলল।
Modarn Talking এর You are my heart, you are my soul. তোর গলায় গানটি খুব ভাল লাগে।
রবিন অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল, কি ভাই ওর দিকে তাকিয়ে কি ভাবছ? আমি গান গাইব? তবে গান গাওয়ার আগে তোমার বন্ড সইটা নিয়ে নেয়া দরকার। তার মধ্যে লেখা থাকবে, আমার গান শুনে তোমার কিছু হলে আমি দায়ী না।
অপূর্ব আসলেই মুগ্ধ হয়ে মধুমিতাকে দেখছিল। মধুমিতাকে দেখলে ওর যে কি হয়! রবিনের কাছেও ধরা পড়ে গেল। অপূর্ব বলল, কি যে বল না। তারপর বলল, মধুমিতার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে তুমি খুব ভাল গাও। অবশ্য যারা ভাল গান করে তারা এই হেঁয়ালিটুকু করে আনন্দ পায়, আমার তা মনে হয়। অতএব নির্দ্বিধায় চালিয়ে যেতে পার।
রবিন ভাবল, অপূর্বকে দেখলে মনে হয় কথা বলতে জানে না কিন্ত ভালোই তো বলল।
মধুমিতা বলল, আর কত অপেক্ষা করবি এবার গান ধর।
রবিন গীটারে গান ধরল- You are my heart, you are my soul…..
ভার্সিটির ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার পর কেমন করে যেন সময়গুলো পার হয়ে যাচ্ছিল। মাঝে মাঝে সাহেদ এসে অপূর্বর সাথে থাকে। টিএসির আড্ডায় মাঝে মাঝে সাহেদ, দিদার ইকবালের সাথে এখন রবিন, বন্যা ও মধুমিতাও যোগ হয়েছে। একসাথে সবাই মিলে কনসার্ট দেখে, কখনো কখনো মধুমিতা সিনেমা হলে গিয়ে ভাল ইংলিশ মুভি আসলে তা দেখে এমনকি বেইলি রোডের নাটক পাড়াও বাদ যায়না।
এর মধ্যে, মধুমিতার ভাইয়া এক মাসের ছুটিতে লন্ডন থেকে দেশে এসেছিল। মধুমিতার ভাইয়া, ভাবী ও তাদের পিচ্চি ছেলে বিল্টু অপূর্বকে খুব পছন্দ করেছে। বিশেষ করে বিল্টু তো অপূর্বকে ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইত না। ঘুম থেকে উঠেই অপূর্বর রুমে গিয়ে হাজির হত। আঙ্কেল আঙ্কেল ডেকে অস্থির করে ছাড়ত। প্রতিদিন অপূর্বর কাঁধে চড়ে পুরো ছাদ চক্কর মারত। অপূর্বর সাথে বল খেলবে আর অপূর্বর শখের রংতুলি দিয়ে আঁকাআঁকি করবে। অপূর্ব যদিও বাচ্চাদের সাথে তেমন কথা বলতে বা খেলতে পারেনা তবুও বিল্টুটা কেন যে ওকে এত পছন্দ করেছিল তা বুঝতে পারছে না। তবে যে একমাস মধুমিতার ভাইয়া দেশে ছিল, সময়টা ভালোই কেটেছে।
মধুমিতার ভাইয়া, যাবার সময় অপূর্বকে বলে গেল, তুমি যেহেতু আমাদের বাসায় আছো এবং আব্বা আম্মাও তোমাকে ছেলের মতই দেখে তাই তোমার কাছে অনুরোধ, তুমি তাদের দিকে একটু খেয়াল রেখো। আমি আবার কবে ছুটি পাই! তবে যখনি ছুটি পাব তখনি আসতে চেষ্টা করব কারণ আব্বা আম্মার তো বয়স হয়েছে। যদিও মধুমিতার ভাই, প্রথমে অপূর্বকে নিয়ে ওর বাবা মায়ের সংগে অনেক রাগারাগি করেছে এইজন্যে যে, সে বাড়ি নেই এবং মধুমিতা একজন সোমত্ত্ব মেয়ে বাসায় আছে কি দরকার ছিল চিলেকোঠা ভাড়া দেয়ার। কিন্ত অপূর্বর সাথে কথা বলে আর ওর সাথে মিশে ওকে খুব ভাল লেগেছে। তাছাড়া ও একটি ভাল বংশের ছেলে তাই এমনকিছু নিশ্চয়ই করবে না, যার জন্য ওর বাবামায়ের সম্মানহানি হয়।
এদিকে যতই দিন যাচ্ছে অপূর্ব মধুমিতার প্রতি কেমন যেন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। মধুমিতার সব কিছুই ওর ভাল লাগে। কিন্ত মধুমিতাকে বুঝতে পারেনা ও কি চায়? কারণ সবসময় দেখে ও শুধু হৈচৈ করে বেড়াচ্ছে। এতই চঞ্চল, সারাটি বাড়ি গমগম করে রাখে। মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে, দেখলে মনে হয় কোন কান্না কখনই ওকে স্পর্শ করতে পারবে না। অপূর্ব ওকে যতই দেখে ততই মুগ্ধ হয়। তাই রাত জেগে মধুমিতার পোট্রেট আঁকার চেষ্টা করে। তবে ও মধুমিতাকে ওর মনের ভাবনায় যেভাবে লালন করেছে তা থেকে।কারণ ও তো আর প্রফেশনাল আর্টিস্ট না, শখে ছবি আঁকে। ছোট বেলায় খুব সুন্দর ছবি আঁকত বলে মা ওকে আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল, সেই থেকে ছবি আঁকে। অবসরে ছবি আঁকা আর গান শোনা এটাই ওর হবি। তাই মাঝে সাঝে ইকবালের সাথে দেখা করতে আর্ট কলেজে গেলে, ও কলেজের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ঘুরে দ্যাখে। ওখানে কি সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকে ছেলেমেয়েরা, ওর তা দেখতে খুব ভাল লাগে। অনেক সময় আর্ট কলেজের পুকুরের রহস্যটা ওকে ভাবায় কারণ এত বড় পুকুর কিন্ত পানি নেই, অবাক কাণ্ড! পানি কেন নেই তা এখনো জানা হলনা। বিভিন্ন জন বিভিন্ন গল্প বলে।
মধুমিতা যখনতখন অপূর্বর রুমে নক করে তাই অপূর্ব নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে মধুমিতার যে ছবি আঁকছে তা লুকিয়ে রাখে, দরজা খোলার আগেই। মধুমিতা এখনি ছবিটা দেখুক তা অপূর্ব চায় না। অনেক সময় ভাবে মধুমিতাকে বলবে যে, তোমাকে আমার মৌ বলে ডাকতে ইচ্ছে করে। কিন্ত লজ্জায় বলা হয়না। কে জানে ও কখন কি বলে বসবে? যেই দস্যি মেয়ে। তাই মনে মনে মৌ বলে ডাকে। মধুমিতাকে দেখা মাত্রই অপূর্বর যত্তসব অঘটন ঘটে। হয়তো বা হাত থেকে খাতাবই পড়ে যায়, নয়তো সিগারেট ধরাতে যেয়ে ভুলে কলম মুখে দিয়ে ফেলে। আর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় কারণ মধুমিতা যদি বুঝে ফেলে অপূর্ব ওকে ভালবাসতে শুরু করেছে, তাহলে তো সর্বনাশ! এ বাড়িতে থাকাই যে অসম্ভব হয়ে যাবে! শেষমেশ ঢাকা শহরে এত কষ্টে পাওয়া ঠিকানাটাও হারাবে। তারচেয়ে নিজেকে সংযত করে চলাই ভাল। ওদের বাসায় ওকে সবাই ভালো জানে তাইই যথেষ্ট। এমনেতেই মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারেনা, তার মধ্যে ওকে দেখলেই সব উল্টাপাল্টা হয়ে যায়, কেন যে এমন হয়। ও তো এমন ছিলনা! এখন মনে হচ্ছে কারো প্রতি এমন দুর্বলতাকেই হয়তো ভালোবাসা বলে। সাহেদ তো ওকে ধরেই ফেলেছে। প্রায় বলে, প্রজাপতির খবর কি? মনের ঘরে হানা দিল, না মনের আশেপাশেই রঙ ছড়াচ্ছে? সাহেদকে নিয়ে আর পারা গেলনা, সবসময় ভয়ে থাকতে হয় কখন যেন, মধুমিতার সামনেই হুট করে কিছু বলে বসে। তাহলে মহা বিপদ হবে। নিজে তো ডুবেডুবে পানি খাচ্ছে, এখন আছে শুধু কখন কার পানি ঘোলা করবে এই চিন্তায়।
মধুমিতা ভাবছে, এতদিন হয়ে গেল কিন্ত অপূর্বকে বুঝতে পারলনা। সবসময় চুপচাপ থাকে। কথা খুব কম বলে। মধুমিতা এত বকবক করে কিন্ত কোন বিরক্ত হয়না বরং মাঝেমাঝে ওর কথায় সায় দেয়। নিজে কিছু বলে না। গানের খুব পাগল। যতখন ঘরে থাকে ক্যাসেট প্লেয়ারে গান বেজেই চলে। বাংলা, হিন্দি ইংলিশ কোনটাই বাদ নেই। তবে গানের চয়েজ খুব ভাল। মধুমিতা মাঝে মধ্যে ওর কাছ থেকে ক্যাসেট নিয়ে এসে গান শুনে। সেজন্য এবারের জন্মদিনে মধুমিতাকে মধুমিতার কিছু প্রিয় শিল্পীদের ক্যাসেট কিনে দিয়েছে।অবশ্য তার আগে জেনে নিয়েছে মধুমিতা কার কার গান পছন্দ করে।
মধুমিতার পছন্দের সাথে অপূর্বর পছন্দের অনেক মিল আছে। রবিন যখন আসে তখন ওরা তিনজনে খুব আড্ডা দেয়। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রবিন আর মধুমিতার মধ্যে ঝগড়া হয় তবে ফুটবল খেলা নিয়ে রবিন আর মধুমিতার মধ্যে ঝগড়া বেশী হয়। যখন চরম পর্যায় চলে যায় তখন সেই ঝগড়া অপূর্বই থামায়। ঝগড়াটা এইজন্য লাগে কারণ রবিন সাপোর্ট করে মোহামেডানকে আর মধুমিতা আবহনীর সাপোর্ট করে।
অপূর্বও আবহনীর সাপোর্ট করে তাই রবিন অপূর্বকে বলে, আবহনীর সাপোর্ট তো মেয়েরা করে, তুমি কর কেন? অবশ্য তুমি তো অনেকটাই তেমনি নিরীহ আর গোবেচারা।
মধুমিতা তখন রবিনের কথায় প্রতিবাদ করে উঠে, নিরীহই ভাল, তোর মত গোঁয়ার হবে নাকি?
আমি গোঁয়ার?
তা নয়তো কি?
ঠিক আছে এই বিষয়ে তোর সাথে ঝগড়া পরে হবে কারণ এখন আর এনার্জী নেই।
রবিন দেখে যখনি অপূর্বর রুমে আসে তখনি মান্নাদের গান বাজতে থাকে। রবিন অপূর্বকে বলে, কি ভাই, তুমি এত দুঃখের গান কেন শোন? কারো কাছে ছ্যাঁকাট্যাকা খেয়েছো নাকি।
অপূর্ব মধুমিতার দিকে তাকিয়ে বলে, কারো সাথে এখনো প্রেমই করলাম না আর ছ্যাঁকা !
রবিন বল্ল,প্রেম কর নাই ভালই করছ তা না হলে আমার মত চড়কীনাচ নাচতে হত। দেখ না বন্যার প্রেমে আমি ভেসে যাচ্ছি, এইবলে হো হো করে হেসে উঠল।
মধুমিতাও ওর সাথে হেসে উঠে বলল, তুই পারিসও। বন্যা জানলে তোর খবর আছে।
রবিন বলল, জানবে ক্যামনে। তুই না বললেই হয়।
কি বললি, তার মানে আমি কথা লাগাই?
আরে আমি কি তাই বলছি? আমি এইজন্যে বলছি, এখানে তো তুই ছাড়া আর কেউ নাই আর অপূর্বর সাথে তো বন্যার তেমন কথা হয়না। অতএব একমাত্র তুইই আছিস ওর জিগিরি দোস্ত ।আমি কি মিথ্যা বললাম?
হুম্ম! বুঝলাম।যা মাফ করে দিলাম।
রবিন বলল, তোকে রাগিয়ে দিয়েছিলাম তাই তোকে একটা জোকস বলে হাসিয়ে দিয়ে যাই। জোকসটা হোল- একটি ছোট ছেলে তাঁর মাকে বলছে, মা আমি তিনটি বিয়ে করবো। তাহলে আমার তিনটি বউ থাকবে।
মা বলল, তিনটি বউ দিয়ে কি হবে?
ছেলেটি বলল, একজন ঘর পরিস্কার করবে, আরেকজন রান্না করবে অন্য জন টাকা কামাই করবে।
মা বলল, কিন্ত তিন বউ নিয়ে ঘুমাবে কেমন করে?
ছেলেটি বলল, আমি তো ওদের সাথে ঘুমাব না।
মা বলল, তাহলে কার সাথে ঘুমাবে?
ছেলেটি বলল, তোমার সাথে ঘুমাব।
মায়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। মা ভাবল ছেলেটি তাকে এত ভালোবাসে! মা, তখন বলল, আলহামদুলিল্লাহ্‌! কিন্ত বাবা, ওরা তাহলে কারসাথে ঘুমাবে?
ছেলেটি বলল, বাবার সাথে।
ছেলেটির বাবা, পাশেই বসা ছিল। তার চোখ দিয়েও খুশীতে পানি গড়িয়ে পরল। সেও তখন বলল, আলহামদুল্লিলাহ!
রবিনের জোকস শুনে ওরা তিনজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
অপূর্ব আর মধুমিতার সাথে বাসায় তো দেখা হতই তাছাড়া বাইরেও ভার্সিটিতে দেখা হত। অনেক সময় দেখা না হলে রাতে ফোনে কথা হত ঘুমাতে যাওয়ার আগে। সেই কথায় অপূর্ব আর মধুমিতার ছোটবেলার প্রসঙ্গসহ বর্তমানের নানান বিষয় চলে আসত। এভাবে ওদের দুজনের প্রতি দুজনের অনেকটা দুর্বলতা চলে এসেছে কিন্ত কখনো দুজনে কেউই সেইভাবে কিছু প্রকাশ করে নাই। একদিন মধুমিতার খুব শখ হল জানতে, অপূর্ব কাউকে ভালোবাসে কিনা? তাই অপূর্বকে একরাতে ফোনে জিজ্ঞেস করল।
অপূর্ব, তুমি কি কাউকে পছন্দ কর?
অপূর্ব ওর কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। একটু সময় নিল।
কি চুপ করে আছো কেন? কাউকে পছন্দ কর বা ভালোবাসো?
অপূর্ব বল্ল, হ্যাঁ ,পছন্দ করি তবে সে এখনো জানেনা।
মধুমিতা মনে মনে বুঝল, ওর কথাই বলছে কিন্ত এত চালাক যে, ধরা দিবেনা। তাই বলল, মানে কি? তাকে জানাও।
সময় হলে জানাব। তারপর অপূর্ব মধুমিতাকে বলল, তুমি কাউকে পছন্দ কর?
মধুমিতা জানতো অপূর্বও এখন ওর কাছে জানতে চাইবে। তাই ও যে অপূর্বর প্রতি দুর্বল তা আর সরাসরি না বলে একটি গল্প বানাল। বলল, হ্যাঁ, একজনকে ভাল লাগে তোমাদের ডিপার্টমেন্টের।
অপূর্ব মনে খুব কষ্ট পেলো কিন্ত প্রকাশ করল না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, তাই?
হ্যাঁ, দুই তিনদিন দেখেছি কিন্ত কথা হয়নি এমনকি ছেলেটির নামও ঠিক জানিনা। তুমি যদি একটু সাহায্য কর!
অপূর্ব বলল, কেমন দেখতে, যদি বল তাহলে খুঁজে বের করতে সুবিধা হবে।
অপূর্ব যেমন দেখতে, মধুমিতা ঠিক তেমনি বর্ণনা দিল কিন্ত অপূর্ব ধরতে পারল না।
ওহ! ঠিক আছে, অপূর্ব বলল, আমি খুঁজে বের করে তোমাকে তার নাম ঠিকানা সব জানাব।
মধুমিতা এপাশ থেকে বুঝতে পারল, অপূর্ব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছে। ওর খুব মজা লাগলো আবার অপূর্বর কথা ভেবে খারাপও লাগলো। তাই ও বলল, এত তাড়াহুড়ো নেই। তুমি তোমার সময় বুঝেই খোঁজ নিও। তবে নিজের লেখাপড়ার ক্ষতি করে নয়!
ঠিক আছে, অসুবিধা নেই। দেখি কি করা যায়।
মধুমিতা মনে মনে চিন্তা করল, অপূর্ব ছেলেটা এত বোকা আর সরল কেন? রবিন হলে তো কখন বুঝে যেত।
এরই মধ্যে অনেকদিন চলে গেল। যাকে মধুমিতা পছন্দ করে সেই, ছেলেটিকে খুঁজে দিতে বলার পর থেকে অপূর্ব আর তেমন কথা বলেনা মধুমিতার সাথে। শুধু বলে একটু বিজি আছি পড়া নিয়ে। সেই ছেলেটিকে এখনো পাইনি, পেলে জানাব। মধুমিতা বুঝতে পারছে, অপূর্বর খুব হিংসে হচ্ছে ছেলেটিকে। তাই একদিন দুপুরের দিকে ছাদে গিয়ে অপূর্বর দরজায় নক করল। বাইরে থেকে শুনতে পেল, মান্নাদের গান বাজছে। অপূর্ব দরজা খুলে দিল। মধুমিতা দেখল ওর হাতে একটি বই, মনে হয় বই পড়ছিল।
মধুমিতা অপূর্বকে দেখে বলল, কি ব্যাপার! আজ কোথাও বেরুবেনা? ঘরে চুপচাপ বসে আছো, শরীর ভালো আছে?
না, কিছু হয়নি। ভালোই আছি। তোমার খবর কি?
মধুমিতা একটু রহস্য করে বলল, আমার খবর তো তোমার কাছে। আমি তোমাকে একটা কাজ দিলাম কিন্ত তুমি ফোনও ধরছনা আবার দেখাও করছনা। হল কি তোমার? মন ভাল আছে তো!
অপূর্ব বলল, সবকিছুই ভালো আছে। আসলে আমি তোমার কাজটি এখনো করতে পারিনি। মানে আমার ডিপার্টমেন্টে তোমার বর্ণনা অনুযায়ী কোন ছেলে খুঁজে পাইনি। তাই তোমার মুখোমুখি হতে লজ্জা লাগছে, তাই…
মধুমিতা হেসে বলল, এইটা কোন ব্যাপার হল? তুমি খুঁজে পাওনি বলে আমি কি তোমাকে শূলে চড়াবো? ভয় পাওয়ার বা লজ্জা পাওয়ার কি আছে।
তা নয়। তুমি এই প্রথম একটা কাজ দিলে আর আমি ওটা করতে পারলাম না। মানে ছেলেটিকে খুঁজেই পেলাম না।
থাক আর মানে মানে করতে হবেনা। খুঁজে পাবে কি করে। তবে একটু বুদ্ধি খাটালেই খুঁজে পেতে। তুমি যে একটা বুদ্ধু এটা তোমাকে এখন স্বীকার করতেই হবে!
অপূর্বর খুব রাগ হল। ওকে বুদ্ধু বলছে মেয়েটা তাও অন্য একটি ছেলের জন্য, এও কি সম্ভব! আজ পর্যন্ত কেউ ওর সাথে এভাবে কথা বলেনি। ও ঠাণ্ডা মাথায় বলল, এটা ঠিক না, কাউকে খুঁজে না পেলে আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলবে।
মধুমিতা দেখল, অপূর্বর মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে। সেই কারণে ও অপূর্বকে বলল, তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াও।
অপূর্ব বলল, দাঁড়িয়ে কি হবে?
বললাম তো, দাঁড়াও।
অপূর্ব উঠে দাঁড়ালে, মধুমিতা অপূর্বর হাতটি ধরে এক প্রকার জোর করে দেয়ালের আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড় করাল।তারপর বল্ল,আমি যাকে খুঁজছি তাকে আয়নায় দেখা যাচ্ছে, বুঝেছ?
অপূর্ব আয়নায় নিজের চেহারা দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল, মধুমিতা তাহলে ওর কথাই বলেছে! আর মধুমিতার বর্ণনা শুনেও বুঝতে পারল না। আসলেইতো মধুমিতা ওকে ঠিকই বলেছে, একটা বুদ্ধু। বুদ্ধুই বটে! তা নাহলে এত সহজ কথা কেন বুঝল না। তাছাড়া বুঝবে কি করে, মধুমিতা একটি ছেলেকে পছন্দ করে এই কথা শুনেই তো ওর হিতাহিত জ্ঞ্যান ছিল না। মধুমিতার হাসির শব্দ শুনে ওর চিন্তার ছেদ পড়লো। মধুমিতা হাসতে হাসতে বিছানায় গিয়ে বসে পড়েছে। ও যে অপূর্বকে বোকা বানাতে পেরেছে, সেই খুশিতেই হাসছে। ওকে দেখতে আরও সুন্দর লাগছে। মধুমিতার প্রতি ওর প্রেম দ্বিগুণ বেড়ে গেল। মনে মনে বলল, ভালোবাসি আসলেই আমি এই পাগলী মেয়েটাকে বড় বেশি ভালোবাসি।
মধুমিতা যদিও বুঝতে পারছে অপূর্ব ওকেই পছন্দ করে কিন্ত তবুও মজা করে হাসি থামিয়ে বলল, তুমি কাকে পছন্দ কর তা কিন্ত এখনো জানা হলো না?
অপূর্ব মধুমিতাকে নিয়ে ওর আঁকা পোট্রেট দেখিয়ে মধুমিতাকে বলল, এই মেয়েটাকে।
মধুমিতা দেখল, এ যে ওর নিজের ছবি! মধুমিতা প্রস্তুত ছিল না, অপূর্ব এইভাবে তার ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। খুশিতে ওর দু’চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল। তাহলে অপূর্ব রাতের পর রাত জেগে ওকেই আঁকত। কারণ যখনি রাতে মধুমিতা কল করে বলতো, কি করছ? তখনি ও বলতো ছবি আঁকছি। ও তখন খ্যাপাত, ইস!কি আমার আর্টিস্টরে। কিন্ত এভাবে হুবুহু ওর ছবি এঁকে ওকেই সারপ্রাইজ দিবে, তা অতুলনীয়। কিন্ত কিভাবে ও হুবুহু মধুমিতার চেহারা তুলে ধরল ক্যানভাসে, তা জানতে হবে।
অপূর্ব মধুমিতাকে বলল, আমাকে বুদ্ধু বল, কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?
মধুমিতা একটু লজ্জা পেল, তারপর বলল, তুমি আমাকে না দেখে কি করে এই ছবি আঁকলে?
কে বলেছে না দেখে এঁকেছি। তুমি তো আমার মনের ভিতরে সারাক্ষণই আছো। ওখান থেকেই দেখে নিয়েছি।
সেদিন সারারাত দুজনে ফোনে গল্প করলো। দুজনের এতদিনের আবেগ অনুভূতি যা অন্তরের ভেতরে চাপা দিয়ে রেখেছিল তা আগ্নেয়গিরির অগ্নু্পাতের মত জাগ্রত হয়ে উঠল। কত যে কথা! শেষ আর হয়না।
মধুমিতা অপূর্বকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি বাইক চালাতে পারনা?
অপূর্ব বলল, কেন?
আমার খুব ভালো লাগে বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়াতে। ভাইয়া যখন ঢাকায় ছিল, তখন বাইক চালাতো আমাকে বাইকের পেছনে নিয়ে।
অপূর্ব বলল, আমার একটি স্পোর্টস বাইক আছে। বাবাকে বলেছি পাঠিয়ে দিতে কারণ ভার্সিটিতে যেতে সুবিধা হবে। ভালই হল, এখন থেকে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব, যদি তোমার আপত্তি না থাকে?
ইস! এমনভাবে বলছ, যেন এখনি পর করে দিচ্ছো?
ধুর! আমি কি তাই বলেছি? আগে বাইক আসুক তারপর দেখা যাবে।
তবে এখন একটু ভাবনায় ফেলে দিলে।
কেন? কি হয়েছে?
তেমন কিছু না, ভাবছি তোমার বাইকে চড়ার আগে, জীবনবীমাটা করে নিব।এই বলে মধুমিতা হাসতে লাগলো।
চড়েই দেখ না, তারপর বলবে আমি কেমন বাইক চালাই।
ঠিক আছে, দেখা যাবে। এখন ফোন রাখো। ঘুমাও, ভোর হয়ে এল।
হুম! ঘুমাব কিন্ত রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
তারপরেও রাখতে হবে। সকালে ক্লাস আছে না!
ঠিক আছে, Good night, Bye.
Good night, Bye. (চলবে)

SHARE THIS ARTICLE