আমার চোখে তোমার নেশা


লেখক- রহমান ফাহমিদা- (৪র্থ পর্ব): একদিন বিকেলে অপূর্ব ঘুম থেকে উঠে দেখল, মধুমিতা ছাদে কবুতরগুলোকে খাবার দিয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করছে। নীল একটি জর্জেটের শাড়ি পড়ে আছে ,দু’হাতে কাঁচের রেশমি চুড়ি ,কপালে বড় একটি লাল টিপ এবং ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপিষ্টিক। অসাধারণ লাগছে দেখতে। অপূর্ব দরজার কাছে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। মধুমিতা ওকে ডেকেই যাচ্ছে, কিন্ত ওর কানে যাচ্ছেনা সেই ডাক। হঠাৎ করে বৃষ্টি নামলে মধুমিতার মা যখন মধুমিতাকে নিচ থেকে ডাক দিল তখন অপূর্বর ঘোর ভাঙল। অপূর্ব অবাক হয়ে দেখল, মধুমিতার মুখটা বৃষ্টিতে ভিজে আরও স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে, সেখানে এক মুগ্ধতা বিরাজ করছে। ওর দেহপল্লবের ভাঁজে ভাঁজে ভরা যৌবনের পূর্বাভাস জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল, পৌরণিক প্রেমের আবেগ। বৃষ্টির পানি যেন ওকে আবিষ্ট করে নিচ্ছিল। আর এদিকে অপূর্ব কোন এক অজানা নেশায় ডুবে যাচ্ছিল।
মধুমিতা অপূর্বকে বলল, এই কি দেখছো এমন করে?
তোমাকে, আমি তো তোমার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম।
যাহ্‌! কি যে বল না।
নিচ থেকে মধুমিতার মায়ের ডাক আবার শোনা গেল, মিতু তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আয়, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হবে।
মধুমিতা বলল, আমি নিচে যাই, পরে কথা হবে। কল কর। বেশি ভিজলে মা বকবে।
অপূর্ব বলল, ঠিক আছে যাও।
মধুমিতা চলে গেল। অপূর্ব যদিও বল্ল যাও কিন্ত মনে হচ্ছিল ওকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে, ওর সমস্ত স্নিগ্ধতা ও মুগ্ধতাকে নিজের করে নেয়। ভাবতে ভাবতে নিজের শরীরে এক আলোড়ন খেলে গেল। কবে যে মৌকে নিজের করে পাবে! বাইরে তাকিয়ে দেখল, অন্ধকার হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি দরজা জানালা লাগিয়ে একটি সিগারেট ধরাল। মনের মধ্যে কেমন যেন, অস্থিরতা অনুভব করছে। মধুমিতা যেন ওকে এক অভিনব নেশায় দিনের পর দিন আবিষ্ট করে ফেলছে। সারাদিন ওর কানে বাজে নূপুরের ঝংকার, আর সুবাস ছড়ায় ওর চুলের ঘ্রাণ। ভালোবাসা এমনও হয়? এ যেন পাগলপারা ভালোবাসা। কিন্ত ও মৌকে বুঝতে দিতে চায়না, নিজের এই অনুভুতি কারণ ও অপেক্ষায় আছে মধুমিতা হয়ত একদিন ওর কাছে ধরা দিবে। ও বুঝতে পারে মৌ ওকে খুব ভালোবাসে। তাই ও এমন কিছু করবে না, যে জন্য ওদের ভালোবাসার সম্মানহানি হবে। অপূর্ব মধুমিতাকে পবিত্র গ্রন্থের মত ভালোবাসে।
পড়াশোনা, আড্ডা, ঘোরাঘুরি এবং ভালোবাসার বেড়াজালে ভালই কাটছিল দিনগুলি কিন্ত একদিন সাহেদ এমন এক খবরে নিয়ে আসলো তা শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ইকবাল, ঐ যে আর্টিস্ট ইকবাল। ও নাকি সুইসাইড করেছে। ও নাকি লিখে রেখে গেছে কেন ও এই কাজ করেছে। কারণ ও অনেকদিন ধরেই জ্বরে ভুগছিল। জ্বরটা মাঝে মাঝে আসে আবার হঠাৎ চলেও যায়। তাই ডাক্তার ওকে ব্লাড টেস্ট করতে দিয়েছে। ব্লাড টেস্টে ধরা পড়েছে ওর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে এবং শেষ পর্যায় আছে। দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করেও তেমন কিছু হবেনা। যেহেতু বাবা নেই, আর ওর ওপর ভরসা করে আছে মা এবং ছোট দুটি ভাই বোন। তাই কাউকে জানায়নি। নিজের মধ্যে কষ্ট চেপে রাখতে রাখতে আর শারীরিক অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। অপূর্ব ভেবেই পেলনা এত হাসিখুশি ছেলেটা নিজের কষ্ট কাউকে না জানিয়ে কি করে চলে গেল? ইস! অপূর্ব যদি একটু জানতে পারতো, তাহলে বাবাকে বলে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যাবস্হা করতো। কিন্ত ইকবাল সেই সুযোগও দিলনা। মধুমিতাকে জানানোর পর মধুমিতার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। ও অপূর্বকে বলল, কি করে মানুষ নিজের জীবন নিজে শেষ করে দিতে পারে? আমার তো ভাবতেই ভয় হয়। যদিও জানি সবার জীবনে মৃত্যু চিরন্তন সত্য। এখন কি হবে ইকবালের মা,ভাই বোনের! ও চলে যাবার আগে তাদের কথা একটুও ভাবলোনা! So sad!!
এর মধ্যে অনেকদিন চলে গেল। টিএসিতে আড্ডা তেমন আর জমে না। সবাই ইকবালকে খুব মিস করে। তারপরেও মানুষের জীবন তো কারও জন্য থেমে থাকেনা। জীবন চলে জীবনের মত করে। একদিন অপূর্ব ঘুম থেকে উঠার পর এ বাড়ির ড্রাইভার কুদ্দুসের ডাকে রুম থেকে বাইরে এল। বলল,কি ব্যাপার, কি হয়েছে? কুদ্দুস জানাল অপূর্বর বাবা বাইক নিয়ে একজন লোক পাঠিয়েছে। অপূর্ব তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসে দেখল, অপূর্বর বাবার অফিসের ম্যানেজার ওর বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে। অপূর্বর তার কাছ থেকে বাসার খবর নিল এবং বাইকের চাবি নিয়ে লোকটিকে বলল, ওয়েটিংরুমে ওয়েট করার জন্য তারপর মধুমিতাকে কল করে নীচে নামতে বলল।
মধুমিতা বলল, তুমি থাকো ছাদে, নীচে নেমে কি করবো?
আরে আসো তো।
মধুমিতা নীচে নেমে এল, দেখল অপূর্ব একটি লাল রঙের Honda-110 নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মধুমিতা ভীষণ খুশি হল। বলল,ভালোই হল এখন থেকে তোমার বাইকে বেড়ানো যাবে।
অপূর্ব মধুমিতার এই আনন্দ দেখে নিজের কাছে খুব ভাল লাগলো। বলল, অবশ্যই।
এরপর থেকে ওরা চার জন মানে অপূর্ব আর মধুমিতা অপূর্বর বাইকে এবং রবিন আর বন্যা রবিনের বাইকে চড়ে, নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। বাইকে অপূর্বকে যখন মধুমিতা পেছন থেকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকতো তখন অপূর্ব মধুমিতার স্পর্শে এক সর্গ সুখ অনুভব করত আর মনে মনে বলতো মধু, তুমি আমাকে এভাবেই সারাজীবন ধরে থেকো। মাঝে মাঝে অপূর্ব আর মধুমিতা দেখত, রবিন আর বন্যার মধ্যে কি নিয়ে যেন ঠাণ্ডা একটি লড়াই চলছে! যা কিনা অপূর্ব আর মধুমিতাকে বুঝতে দিত না, তবে ওরা তা বুঝতে পারত কিন্ত যেহেতু রবিন বা বন্যা কিছু বলছে না, তাই ওরাও ওদের কাছে জানতে চেয়ে বিরক্ত করতনা।
রবিন আর বন্যার এই ঝগড়াঝাঁটি দেখে মধুমিতার মন খারাপ হয়। তাই অপূর্ব মধুমিতাকে বলে মৌ, আমি কোথায় যেন একটি লেখা দেখেছি, লেখার কথাগুলো এরকম ছিল, “ সাতটা রঙ না মিশালে যেমন রংধনু হয়না, তেমনি হাসি, কান্না, রাগ, বিশ্বাস, অভিমান, স্বপ্ন, কষ্ট এই সাতটা জিনিস না মিশালে ভালোবাসা হয় না!”
মধুমিতা বলল, অসাধারণ কথাগুলো। সত্যি তাই।
এদিকে দেশের মধ্যে মাদক এক ভয়াবহ রুপ নিয়ে আবির্ভাব হয়েছে। অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের জন্য Anti Draugs Society’র স্পন্সরে Societyr’র কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্যে বিশ্বভ্রমণের জন্য মধুমিতাদের ডিপার্টমেন্ট “Dhaka Universiti’র International Relationship (IR)থেকে চারজন আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজন সিলেক্ট হল। ফলে ভার্সিটির টিচাররা যারা মাদক বিষয়ে থিসিস লিখছে তাদেরকে থিসিস জমা দেয়ার জন্য তাড়া দিতে লাগলো। মধুমিতার থিসিস জমা দিতে হবে তাই খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রতি রাতে অবশ্য অপূর্বর সাথে কথা হয় নানান বিষয়ে। বিশেষ করে রবিন আর বন্যার ব্যাপারটা নিয়ে মধুমিতা খুব চিন্তায় আছে। কারণ আজকাল রবিন ওকে এড়িয়ে যাচ্ছে এমনকি বন্যাকে কল করলেও ও কল ধরেনা। মাঝে মাঝে রবিন আসে ওদের বাসায়।
রবিন মধুমিতার সাথে ঠাট্টা করে বলে, শুনলাম তুই মাদক নিয়ে থিসিস তৈরি করছিস কিন্ত মাদকের স্বাদ কি গ্রহণ করেছিস? বাস্তবে সেবন না করে মাদকদ্রব্য নিয়ে লিখবি কিভাবে। সবকিছু তো বাস্তবসম্মত হওয়া চাই! তুমি কি বল, অপূর্ব?
অপূর্বর রবিনের কথায় খুব রাগ হয় তবে তা প্রকাশ না করে বলে, আমি আর কি বলবো? তবে সব কিছুর বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই।
মধুমিতা বুঝতে পারে অপূর্ব রবিনের কথা পছন্দ করে নাই তাই প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে, রবিন, একটা গান ধরত।
রবিন সাথে করে গীটার নিয়ে আসে ঠিকই কিন্ত সেই ভাবে গান করে না ।কখনো কখনো গীটারের টুংটাং ধ্বনি শুনিয়ে চলে যায়। ওর মধ্যে আগের মত সেই উচ্ছলতা নেই। কিছু একটা বিষয় নিয়ে রবিন আর বন্যার মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে, তাতো মধুমিতা বুঝতে পারছে, কিন্ত বিষয়টা কি? মধুমিতা ভাবনায় পড়ে গেলো।
একদিন অপূর্ব মধুমিতাকে ওর রুমে আসতে বলল। মধুমিতা রুমে এলে ওর হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিল। মধুমিতা অবাক হয়ে বলল, হঠাৎ এটা কি?
এখন খুলবে না, তোমার রুমে গিয়ে খুলবে। তারপর আমাকে জানাবে, তোমার কেমন লাগল।
মধুমিতা মাথা নেড়ে বলল, ঠিক আছে, আমি তাহলে যাই।
এখনি যাবে? একটু বসে গেলে হতো না!
কেন? আর কিছু বলবে? আমি আমার থিসিস লিখছিলাম। মধুমিতা দেখল, অপূর্ব ওর দিকে একপলকে তাকিয়ে আছে, কোন কথা বলছেনা। এই কি হল? শুনেছো, কি বললাম?
অপূর্ব যখনি মধুমিতাকে দেখে তখনি কি এক নেশায় অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। অপূর্ব থতমত খেয়ে বল্ল, হ্যাঁ শুনেছি। তারপর ওকে জরিয়ে ধরে আলতো করে ওর কপালে চুমু খেলো। মধুমিতার সারা শরীরে ভালোবাসার শিহরণ বয়ে গেল। মধুমিতা ফিসফিস করে বলল, এবার আমি যাই।
ঠিক আছে যাও, তবে প্যাকেটটি খুলে দেখে আমাকে জানাবে কিন্ত, কেমন হল?
মধুমিতা ওর রুমে এসে প্যাকেট খুলে দেখল, একটি নাকের নথ আর এক জোড়া পায়ের নূপুর। খুব সুন্দর জিনিসগুলো। ও অপূর্বকে কল করে জানাল, খুব সুন্দর হয়েছে সব কিছু কিন্ত আমি তো নাক ছিদ্র করিনি! নথ পরবো কি করে?
এখন পরবে কেন? পরে কখনো পড়বে। কারণ আমার খুব পছন্দ। আমি তো আছিই, তোমার সাথে।
তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শুধুই ধন্যবাদ!
যাহ্‌! কিযে বলনা? আমি এখন ফোন রাখলাম। রাতে কথা হবে। এই বলে মধুমিতা ফোন কেটে দিল।
পরেরদিন মধুমিতা ওর থিসিসের পেপারগুলো গোছাচ্ছিল এমন সময় রবিনের ফোন কল এল। মধুমিতা হ্যালো বলতেই রবিন বলল, মিতা কি করিস?
আমার থিসিসের পেপারগুলো ঠিক করছি, কেন?
তোর কি একটু সময় হবে আমার সাথে দেখা করার? অনেক কথা আছে।
মধুমিতা বুঝতে পারল,রবিনের মনের অবস্থা। কয়েকদিন ধরেই রবিনের মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে। আগের মত তেমন হৈচৈ করেনা। তাছাড়া একটি ছেলের কাছে জানতে পেরেছে যে, রবিন এখন সেসব ছেলেদের সাথে মিশছে, যারা নেশার জগতে বিরাজ করছে। ভালই হল, রবিন নিজের থেকে ওর সাথে দেখা করতে চাচ্ছে, এবার ও রবিনের কাছ থেকে জেনে নিবে, কেন রবিন এসব করছে? ও তো সইবসময় এই জগতটাকে ঘৃণা করতো! তাই মধুমিতা বলল, কখন? কোথায় দেখা করতে চাস? বন্যা কি তোর সাথে আসবে? তাহলে আমি অপূর্বকে নিয়ে আসব।
না, বন্যা আসবেনা আর তোরও অপূর্বকে নিতে হবেনা। আমি এসে তোকে নিয়ে যাব। কারণ কথাগুলো আমার একান্তই ব্যাক্তিগত। তাই আমাদের দুজনের মাঝে কোন তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি চাচ্ছিনা।
মধুমিতা বলল, ঠিক আছে। কখন আসবি?
কালকে বিকেলে ঠিক চারটায় রেডি হয়ে থাকবি। তাহলে এখন ফোন রাখি। কাল দেখা হবে। আল্লাহ্‌ হাফেজ। এই বলে রবিন ফোন রেখে দিল।
রাতে অপূর্ব কল করলে মধুমিতা রবিনের সাথে যে কথা হয়েছে, সব কথা খুলে বলল। তারপর বলল, আমার খুব টেনশন হচ্ছে রবিনকে নিয়ে।
অপূর্ব বলল, টেনশন করো না, মনে হয় বন্যার সাথে মান ভিমান চলছে। তাই বন্যার মান ভাঙ্গাতে তোমাকে ডাকছে। ওরা দুজনই তো তোমার কথা শুনে। তুমি নিশ্চিন্ত মনে গিয়ে ওদের ঝামেলা মিটিয়ে দিয়ে আসো।
মধুমিতা বলল, তাহলে তো ভালই হত। কিন্ত আমার চিন্তা হচ্ছে রবিনকে নিয়ে। কারণ ইদানিং রবিনের চলাফেরা ভাল লাগছে না। তাছাড়া ওকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছে। তুমি দেখ না, আজকাল আর ও আগের মত নেই!
তাতো বুঝলাম কিন্ত কিরকম কথা বলছে ওকে নিয়ে?
তোমাকে তো আগেই বলেছিলাম কিবরিয়ার কথা, মনে আছে?
ঐ ছেলেটা, যে তোমাদের স্কুল জীবন থেকেই ঊচ্ছৃংখলভাবে চলাফেরা করতো। যার বাবা বড় একজন শিল্পপতি?
হ্যাঁ, সেই ছেলেটাই। তার সাথে রবিনের এখন অনেক ভাব। শুনলাম ছেলেটি এমন কোন জিনিষ নাই যার নেশা করেনা। একজন মাদক আসক্ত। এই কয়েকদিনে এমন কি হল যে, রবিনের ওর সাথেই বন্ধুত্ব করতে হল!আমার মাথাতেই আসছে না। আমার খুব ভয় হচ্ছে ওকে নিয়ে।
অপূর্ব মধুমিতার টেনশন কমানোর জন্য একটু মজা করল।বলল, আমিও তো এক নেশায় আসক্ত।
মধুমিতা রেগে গিয়ে বলল, কি বললে?
তাইই তো! আমিতো তোমার নেশায় আসক্ত। তুমি তো তোমার নেশায় আমাকে আবিষ্ট করে রেখেছো। আমি তো তোমাকে ছাড়া কিছুই বুঝতে চাই না, মৌ। তুমি যে আমার সব।
ঠিক আছে, বুঝলাম। এখন হেয়ালি রেখে বল, আমি কি করব?
কি আর করবে, রবিনের সাথে গিয়ে ওর কথা শুনবে এবং ওর সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করবে। তাছাড়া আরেকটি দায়িত্ব তোমাকে পালন করতে হবে তা হল, ওকে সরাসরি নেশার কথা বলবে না। যতক্ষণ ও নিজে থেকে না বলে। যদি বলে তখন ওকে বোঝাবে যে, নেশা কত খারাপ! তোমাকে আমি কেন উপদেশ দিচ্ছি, তুমি তো নিজেই এই বিষয়ে থিসিস লিখছ!
কালকে দেখি গিয়ে কি বলে।
হুম্! তবে তুমি নিজের প্রতি খেয়াল রেখো, লক্ষ্মীটি । তোমার কিছু হলে কিন্ত আমি মারা যাব।
ধেৎ! বালাই ষাট। আমার কি হবে? কোন চিন্তা করোনা। রবিন আমার সাথে তেমন কিছু করবেনা। এই বিশ্বাস আছে আমার ওর প্রতি।
বিশ্বাস থাকলেই ভাল। ঠিক আছে অনেক রাত হল, ভালো থেকো। শুভ রাত্রি, মধু। অপূর্ব মধুমিতাকে কখনো মৌ কখনো মধু বলে ডাকে।
মধুমিতা বলল, শুভ রাত্রি অপু ।
রবিন বিকেল চারটার কিছু আগেই মধুমিতাদের বাসায় বাইক নিয়ে চলে আসলো। তারপর মধুমিতাকে নিয়ে সংসদ ভবনের মাঠে গিয়ে বসল। তারপর রবিন যা বলল, তা শুনে মধুমিতা থ’ বনে গেল। রবিন বলল, বন্যা নাকি বেশ কিছুদিন ধরে রবিনকে এড়িয়ে যাচ্ছে এবং রবিন খোঁজ নিয়ে জেনেছে যে, রবিনের বন্ধু আকাশের সাথে বন্যা এখন ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছে মানে নতুন করে আকাশের প্রেমে পড়ছে। রবিনই একসময় আকাশের সাথে বন্যার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল কারণ রবিন ভেবেছিল, বন্যা যেহেতু ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে আকাশও একই মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে এবং আকাশ খুব ভাল ছাত্র। তাই রবিন ভেবেছে বন্যাকে আকাশের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে, বন্যা ওর কাছ থেকে লেখাপড়ার বিষয়ে অনেক Help পাবে। কিন্ত এই পরিচয়ের ব্যাপারটা রবিনের জন্য হিতেবিপরীত হয়ে গেল। ও কি তখন বুঝতে পেরেছিল যে, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে! আকাশ বড়লোকের একমাত্র ছেলে এবং বন্যাও তাই। যেহেতু ওরা একসাথে পড়ে তাই ওদের দুজনের বাসায় দুজনের অবাধ যাতায়াত ছিল এবং মাঝে মাঝে আকাশ ওর পাজেরো গাড়িতে বন্যাকে বাসায় লিফট দিত ফলে দুজনের মধ্যে আন্তরিকতা বেশী বেড়ে গিয়েছিল।
যেহেতু রবিন একটু বেশীই ভবঘুরে তাই বন্যার সাথে ওর Timing টা মিলতো না, সেকারণে ওদের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল। আর সেই সুযোগে আকাশ বন্যার মনে বাসা করে নিয়েছে। রবিন বলে উঠলো, আমি এখন কি করবো, মিতা? আমিতো বন্যাকে ছাড়া বাঁচবোনা এই বলে কেঁদে ফেলল।
মধুমিতা ওর কান্না দেখে হতভম্ভ হয়ে গেল কারণ রবিনের মত এত শক্ত মনের মানুষ এভাবে কাঁদছে তা দেখে ওর ভীষণ খারাপ লাগলো। ওকে কিভাবে সান্ত্বনা দিবে তা বুঝতে পারছেনা। রবিনকে বলল, বন্যার সাথে কথা বলেছিস?
না, বন্যা জানেনা আমি ওদের ব্যাপারটা জানি।
তুই যে ছেলেটির কাছ থেকে জেনেছিস সেতো ভুল Informetion দিতে পারে। তুই এত Sure কি করে হলি?
বন্যা আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে, তা বুঝতে পারি এবং যার কাছ থেকে খবর পেয়েছি সে মিথ্যা বলবে না। সে ওদের বাড়িরই একজন। তার নামটা তোকে বলতে চাচ্ছি না কারণ আমি তার সাথে Promise করেছি।
আমি কি বন্যার সাথে কথা বলব?
না, কোন লাভ নেই। আমি ওর সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, ও ওর ছোটবেলায় যেমন করে ওর খেলনাগুলোর সাথে খেলে তারপর ফেলে দিত, সেভাবেই আমাকে ফেলে দিয়েছে। বড়লোকের সন্তানদের যেরকম খেয়াল!
তুই ওর সাথে সরাসরি কথা বল।
ওকে বলেছি দেখা করার জন্য, ও বলেছে এখন সময় নেই কারণ ওর পরীক্ষা চলছে। সাতদিন পর দেখা করবে। জানি লাভ নেই, তবুও …
মধুমিতা বলল, দেখ কি বলে। হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। তারপর রবিনকে বলল, তোকে একটা কথা বলব?
রবিন বলল, বল।
একজনের কাছে জানতে পারলাম, তুই নাকি কিবরিয়ার সাথে মিশছিস? যেই ছেলেটাকে তার অস্বাভাবিক চলাফেরার জন্য Avoid করতি, তার সাথে তোর এখন কি কাজ?
রবিন বলল, কিবরিয়া আমাকে বাঁচিয়েছে ওর সাথে থেকে আমি কিছুক্ষণের জন্যে হলেও সব কিছু ভুলে থাকতে পারছি।
ঐ সব ছাইপাঁশ খেয়ে সব ভুলে থাকতে চাইছিস? কিন্ত তোর মা, খালাম্মার কি দোষ? সে বেঁচে থাকতে দেখবে যে, সে একটা বখাটে ছেলে জন্ম দিয়েছে। জানতে পারলে তাঁর কি কষ্ট হবে, ভেবে দেখেছিস একবার? এসব ছেড়ে দে, বন্যা যদি সত্যি আকাশকে ভালোবাসে তবে তার জন্য তুই কেন নিজের জীবন শেষ করবি?
চল মিতা, এসব কথা আর ভাল লাগছেনা। কোথাও বসে কিছু খেয়ে বাড়ি যাই।
মধুমিতা বুঝল, রবিন এখন আর কোন কথা শুনবেনা তাই বলল, চল।
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। মা বলল, অপূর্ব কয়েকবার এসে খোঁজ নিয়ে গেছে, মধুমিতা এসেছে কি না। এদিকে মোবাইল খুলে দেখল, অপূর্ব ওকে কয়েকবার কল করেছে। যেহেতু মোবাইল সাইলেন্স করে রেখেছিল তাই রিংটোন শুনতে পায়নি। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে অপূর্বকে কল করতে হবে। রাতে অপূর্বকে কল করে সব জানালো।
অপূর্ব বলল, তোমার আসার দেরি দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারপর সব শুনে বলল, তোমার আর কিছু করার নেই, এবার রবিনের ব্যাপার, কি করবে। তুমি তো ওকে বুঝিয়েছ।
মধুমিতা বলল, বুঝিয়েছি তা ঠিক আছে কিন্ত রবিন কারো কথা শুনবে বলে মনে হয় না। ভয় লাগছে এই ভেবে যে, ও যেই পথে পা বাড়িয়েছে সেই পথটা সঠিক না।
অপূর্ব বলল, থাক এসব কথা। তারপর দুষ্টুমি করে বলল, আমি আর তোমাকে আমার কোন ফ্রেন্ডের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিব না। আমি রবিনের মত নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে চাই না।
কিযে বোলো না। সবসময় সিরিয়াস ব্যাপারের মধ্যেও দুষ্টুমি। যাও ঘুমাও, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আমার আবার বেশী টেনশন পেলে ঘুম আসে। শুভ রাত্রি। অপূর্ব শুভরাত্রি বলার পর ফোন রেখে দিল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মধুমিতা দৈনিক খবরের কাগজে দেখল, চোরাকারবারিদের মাধ্যমে আশেপাশের দেশ থেকে বাংলাদেশে অবাধে মাদকদ্রব্য ঢুকে যাচ্ছে। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা এই নেশায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে, বিশেষ করে সস্তা দামের ফেন্সিডিল নামক একপ্রকার লিকুইট ঔষধ নেশার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া ম্যানডেক্স নামক একপ্রকার ট্যাবলেট সেই সাথে গাজা চরস আর সিরিঞ্জের ব্যবহার অহরহ হচ্ছে। প্রশাসন তৎপরতা চালালেও তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এই সকল চোরাকারবারির ব্যবসায়ীরা অগাধে তাদের ব্যবসা করে যাচ্ছে।খবরের কাগজে আরও লেখা আছে এই যুব সমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়ে আলোচনায় বসবে, পাবলিক লাইব্রেরীর অডিটোরিয়ামে। মধুমিতা মনে মনে ঠিক করলো, ও অপূর্বকে নিয়ে ঐ আলোচনায় উপস্থিত হবে কারণ তাহলে ও ওর মাদক বিরোধী লেখা থিসিসের জন্য অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। ওর রবিনের সেদিনের কথা খুব মনে পড়ে গেল, রবিন বলেছিল কোন কিছু নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে আগে সেই সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। মধুমিতা ভাবল, রবিন ঠিকই বলেছিল। এমন সময় রবিনের ফোন কল আসলো।
রবিন বলল, মিতা তুই কি করছিস? আমি কি আসব, তোর বাসায়।
কখন আসবি? কারণ আমি বিকেলে একটি অনুষ্ঠানে যাব।
এখন আসি, কারণ আমার ভাল লাগছেনা।
আয়, আমি এখন বাসায়ই আছি। দুপুরে আমাদের সাথেই লাঞ্চ করবি।
ঠিক আছে, আসছি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রবিন চলে আসলো। মধুমিতা দেখল রবিনের চোখমুখ লাল হয়ে আছে, মনে হয় সারারাত ঘুমায়নি। মধুমিতা বলল, চল আমার রুমে।
কেন, অপূর্ব বাসায় নাই? ওর ওখানে গিয়ে বসি।
ঠিক আছে তুই অপেক্ষা কর, আমি মাকে বলে আসি। এই বলে মধুমিতা ঘরের ভেতর চলে গেল। মাকে বলে, কিছুক্ষণ পর এসে বলল, চল।
অপূর্ব রুমেই ছিল। মধুমিতা আর রবিনকে দেখে বলল, আসো। একটু বসও, আমি হিটারে চায়ের পানি বসিয়ে আসি।
মধুমিতা বলল, তুমি বস আমি চা বানাচ্ছি। তারপর তিন কাপ চা বানিয়ে সবাইকে দিয়ে মধুমিতা নিজে এসে অপূর্বর পাশে বসলো। মধুমিতা রবিনকে বলল, আমি আর অপূর্ব পাবলিক লাইব্রেরীতে যাবো বিকেলে, তুই কি যাবি, আমাদের সাথে?
রবিন বলল, ওখানে কেন?
মাদক বিষয়ে আলোচনা হবে তা শুনতে। তুই তো জানিস আমি এই বিষয়ে থিসিস লিখছি।
ঐসব আলোচনা শুনে কি হবে বরং নিজের চোখে যা দেখবি তা লিখতে সুবিধা হবে। তুই চাইলে আমি তোকে সরাসরি এসব দেখাতে পারবো।
মধুমিতা বলল, তাহলে তো ভাল হয়। ঠিক আছে,আমি যাব তোর সাথে। কবে যাবি?
তুই যেদিন বলবি সেদিন।
মধুমিতা অপূর্বর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি বল? যাবে আমাদের সাথে?
অপূর্বর মধুমিতার এই বিষয়টা একদম ভাল লাগেনি। কারণ রবিন এখন নিজেই নেশা করে আর মধুমিতা কিনা ওর কথায় রাজী হয়ে গেল! তাই অপূর্ব মধুমিতাকে বলল, তোমার দরকার তুমি যাও। আমি তো আর এ বিষয়ে থিসিস লিখছি না।
ওদের আড্ডার মাঝে একসময় বুয়াখালা এসে খবর দিয়ে গেল, খাবার দেয়া হয়েছে টেবিলে। মধুমিতার মা, ওদের নীচে খেতে ডাকছে। মধুমিতা অপূর্বকে বলল, চল।
অপূর্ব বলল, তোমরা যাও আমি সাহেদের জন্য অপেক্ষা করছি। ওর সাথে বাইরে যাব, কাজ আছে।
মধুমিতা, রবিন, মধুমিতার মা আর বাবা একসাথে খেতে বসলো। মাথার ওপর ফুল স্পীডে ফ্যান চলা সত্ত্বেও রবিন খুব ঘামছিল। রবিন ওর খাবারটাও ঠিকভাবে মুখে নিতে পারছিলনা। কথাবার্তাও কেমন জরিয়ে আসছিল। মধুমিতা দেখল, ওর বাবা মা একজন আরেকজনকে ইশারা করে রবিনকে দেখাচ্ছিল।
মধুমিতা রবিনকে বলল, কিরে তোর কি খারাপ লাগছে?
রবিন বলল, হ্যাঁ ,শরীরটা ভাল লাগছেনা। তারপর মধুমিতার মা’র দিকে তাকিয়ে বলল, দুঃখিত! খালাম্মা, আমি আর খেতে পারব না।
মধুমিতার মা বলল, ঠিক আছে বাবা, তুমি বাড়ি যেয়ে বিশ্রাম নেও।
মধুমিতা রবিনকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল, বলল, যেতে পারবি? কুদ্দুস কি তোকে নামিয়ে দিয়ে আসবে?
না, পারব। তুই আমাকে জানাস কবে আমার সাথে বের হবি? মাদকের আখড়াগুলো দেখতে। আমি এখন মোটামুটি সব জায়গা চিনি। এখন তাহলে আসি, আমার জন্য দোয়া করিস। তারপর বাইকে চড়ে স্টার্ট দিল।
মধুমিতা ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ছারল। ফ্লাটে ঢোকার পর মধুমিতার মা বলল, তুই খাবিনা? তোর খাবার যে পড়ে রইল।
মধুমিতা ডাইনিং টেবিলে মায়ের মুখমুখি বসল। অল্প একটু ভাত খেয়ে উঠে যাবার সময় মা আরও ভাত নিতে বললে ও তখন বলল, না মা আর খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। এক কাপ কফি খাব। মাথাটা অনেক ধরেছে।
মা বলল, এখানে একটু বস। তোর সাথে কথা আছে। তোর বাবা বলল, রবিন নাকি নেশা করেছে? এটা কি সত্যি?
না, মা তেমন কিছু না। বন্যার সাথে ঝগড়া হয়েছে তাই সারারাত ঘুমায়নি। এইজন্য ওর শরীর খারাপ লাগছে হয়তো। মধুমিতা ইচ্ছে করেই রবিনের ব্যাপারটা এড়িয়ে গেল কারণ তানাহলে মা, রবিনকে খারাপ ভাববে। বন্ধু হয়ে ও তা করতে পারে না, তাই…
বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরীর মিটিং শেষে লাইব্রেরীর রেস্টুরেন্টের খাবার খেলো। তারপর বাইকে করে এদিকওদিক ঘুরে ওরা বাসায় চলে আসলো। অপূর্বর সাথে বাইকে এদিক ওদিক গেলেও, বাবা মা জানে না। কারণ তাঁদেরকে এখনো বুঝতে দেয়নি, ওর আর অপূর্বর মধ্যে আলাদা একটা রিলেশন আছে। বাবা যদি বুঝতে পারে তাহলে অপূর্বকে বাসা থেকে উঠিয়ে দিবে। তাই যখন বাইরে যায় তখন বাসা থেকে বাইকে উঠে না। গলির মোড় থেকে উঠে। তবে ওরা যে, ভাল বন্ধু তা বাবা মা জানে। যেহেতু রবিন ওদের সাথে প্রায়ই থাকে তাই কোন সন্দেহ করেনা। বাবা মাকে ফাঁকি দিতে মধুমিতার খারাপ লাগে কিন্ত কি করবে, এদিকে যে ভালোবাসার বাঁধ মানেনা।
রাতে অপূর্ব মধুমিতাকে কল করে বলল, মধু তুমি আমার দেয়া নথটা তো এখনো পড়লে না।আমার খুব শখ তুমি নাকে নথ পড়বে, দু’হাত ভরে চুড়ি পরবে,পায়ে পড়বে নূপুর। সেই সাথে লাল শাড়ি পড়বে এবং কপালে একটি বড় লাল টিপ পড়বে। লাল টিপ আমার খুব পছন্দ।
মধুমিতা বলল, পড়ব। কিন্ত তার আগে নাক তো ছিদ্র করতে হবে, মহাশয়! তানাহলে পড়ব কেমন করে? সময় পাচ্ছিনা একদম। তবে মধুমিতা ঠিক করে রেখেছে, আর মাত্র দু,দিন বাকী ওদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের দিন হতে। তখন নাকে নথ পড়ে অপূর্বকে সারপ্রাইজ দিবে।
হুম! অপূর্ব বলল, আমি ভাবছি আমাদের তো ফাইনাল পরিক্ষার দেরি নেই। ফাইনাল হয়ে গেলে আমার বাবা মাকে তোমার বাবা মায়ের কাছে পাঠাবো। কারণ রেজাল্ট বের হয়ে গেলেই তো আমাকে বাবার অফিস বসতে হবে। বাবা সে কথা বলেছে। তুমি কি বল?
না, বাবা না তা হবেনা।
অপূর্ব বিরক্ত হয়ে বলল, কেন? তুমি আমাকে তোমার করে পেতে চাও না?
তা চাই, তবে এভাবে নয়।
মানে কি? কি আবোলতাবোল বলছ?
মানে হল, তুমি তো জানো আমি খুব হিন্দি মুভি দেখি। সেখানে দেখা যায় বেশিরভাগ সময় নায়ক নায়িকা পালিয়ে বিয়ে করে। আমার খুব ভালো লাগে। আমি দেখেছি দারুন একটা অনুভুতি কাজ করে, পালিয়ে বিয়ে করার মধ্যে। তাই আমি চাই তুমি আর আমি পালিয়ে বিয়ে করব, তারপর সবাই জানলে কি রকম ক্লাইম্যাক্সের সৃষ্টি হয়, তা দেখব। ভারি একটা মজা হবে। তুমি কি বল?
অপূর্ব বলল, তোমার মধ্যে এইরকম উদ্ভট চিন্তার উদয় হয়, কোথার থেকে? আমার মাথায়ই আসে না। আমাকে কি তোমাদের ফ্যামিলি পাত্র হিসেবে গ্রহণ করবেনা? আমি এতটাই অযোগ্য বা দেখতে খারাপ? তোমার কি তাই মনে হয়?
আরে না, তুমি কি ভাবছ জানিনা। তবে বিয়ে যদি করতে হয় তবে আমি পালিয়েই বিয়ে করবো, বুঝেছ? এটা আমার একটি স্বপ্নও বলতে পারো।
অপূর্ব বুঝল, মধুমিতাকে কিছু বলে লাভ নেই। ও ওর কথা বলেই যাবে। তাই অপূর্ব বলল, ঠিক আছে যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে। এখন খুব ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাতে যাই। আল্লাহ্‌ হাফেজ, মধু। এই বলে ফোন রেখে দিল। –(চলবে)

SHARE THIS ARTICLE