
লেখক- রহমান ফাহমিদা- (৫ম পর্ব বা শেষ পর্ব): এর মধ্যে পরপর কয়েকদিন রবিনের সাথে কমলাপুর রেলস্টেশন,কাঁটাবন,নীলক্ষেত ও আজিমপুর বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখল অনেক নারী পুরুষ বিভিন্নভাবে গাঁজা, চরস নির্জন জায়গায় বসে বিক্রি করছে। আবার কখনো কখনো নিজেরাও ঐগুলো ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের বর্ডার ক্রস করে ফেন্সিডিল নামক এক প্রকার লিকুইট ওষুধ প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এগুলোকে ছেলেমেয়েরা ডাইল নাম দিয়েছে। ছেলেমেয়েরা দেদারছে তা গিলছে এবং নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে আছে। এসব জায়গাগুলোতে যেমন খুব সহজে পাওয়া যায় আবার পুলিশের ঝক্কিও আছে। থিসিসের জন্যে সরজমিনে দেখতে গিয়ে, মধুমিতা ও রবিনও আরেকটু হলে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যেত। রবিন টান মেরে বাইক নিয়ে ওখান থেকে বের না হলে তখন খবর হয়ে যেত। বড় বাঁচা বেঁচে গেছে ওরা।
এদিকে অপূর্ব’র মোটেও ভালো লাগছে না, রবিনের সাথে মধুমিতার ঘোরাঘুরি। তাই একদিন মধুমিতাকে অপূর্ব বলল, তুমি জানো রবিন নিজেই এখন নেশায় আসক্ত গেছে আর তার সাথে তুমি নেশার আখড়াগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছো! এটা কি ভালো দেখাচ্ছে?
মধুমিতা বলল, তাতে কি হয়েছে? রবিন তো তেমন নেশাখোর না। বন্যা ওকে এড়িয়ে চলছে তাই একটু আধটু খেয়েছে। তাছাড়া ও আমার ছেলেবেলার থেকে ভালো বন্ধু।
অপূর্ব বলল, আমি তোমার ভালো চাই তাই ভালোর জন্যেই কথাগুলো বললাম। তাছাড়া তোমার ভাইয়া বলে গিয়েছিল, আমি যেন তোমাকে দেখে রাখি। যাক,এসব তোমার ব্যাপার!
মধুমিতা দেখল, অপূর্ব রেগে আছে। তাই আর কথা বাড়ালও না। যারা একটু চুপচাপ থাকে তারা রেগে গেলে আর রক্ষা নেই! শেষ পর্যন্ত অপূর্বর কাছে মধুমিতা প্রমিজ করলো, আর যাবে না এসব জায়গায়। মনে মনে ভাবল, যা দেখেছি তাতেই আমার থিসিসের কাজ অনেকখানি হয়ে গেছে।
দু’দিন পর মধুমিতা অপূর্বকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যে, অপুর্বর দেয়া নাকে নথ ও পায়ে নূপুর পড়ে এবং লাল শাড়ির সাথে বড় একটি লাল টিপ দিয়ে ও ম্যাচিং করে দুহাত ভরে লাল চুড়ি পড়ে অপূর্বর ঘরে গেল। অপূর্বও ওকে দেখে থ’ বনে গেল!
মধুমিতা বলল, এই কি হল? অমন করে কি দেখছ?
অপূর্ব বলল, আমার ঘরে একটি অপ্সরী নেমে এসেছে তাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছি, চোখ ফেরাতে পারছি না।
মধুমিতা লজ্জা পেয়ে বলল, যাহ! কি যে বলনা। তারপর অপূর্বর হাতে একটি প্যাকেট দিয়ে বলল, দেখ পছন্দ হয় কিনা।
অপূর্ব প্যাকেট খুলে দেখল, সাদা পোলো টি সার্ট।
মধুমিতা বলল, যাও, কালো জিন্স দিয়ে পড়ে আসো। আমার খুব পছন্দ কালো জিন্স আর সাদা সার্ট।
অপূর্ব বলল, তার আগে একটা কাজ বাকি আছে। এই বলে একটি গোলাপের তোড়া মধুমিতার হাতে দিল।তারপর বলল, দাড়াও একটু, আর একটি কাজ বাকি আছে। তারপর গোলাপের তোড়া থেকে একটা বড় লাল গোলাপ নিয়ে মধুমিতাকে বলল, ঘুরে দাড়াও। মধুমিতা ঘুরে দাঁড়ালে ওর চুলে ফুলটা আটকিয়ে দিল। তারপর চুলগুলি সরিয়ে ওর ঘাড়ে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল।
মধুমিতা বলল, এই কি করছ?
কিছুনা, তোমার চুলের মিষ্টি গন্ধে আমি পাগল হয়ে একটু আদর করে দিলাম।
মধুমিতা বলল, যাও তো এখন। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো, আজকে বাইরে ঘুরতে যাব। বাসার থেকেই তোমার বাইকে চড়ে যাব। কারণ মা বাবা খালার বাসায় বেড়াতে গেছেন। আমি আমার ব্যাগ নিয়ে নীচে নামছি, তুমি আসো।
সেদিন অপূর্ব আর মধুমিতা বাইকে করে অনেক ঘোরাঘুরি করল। রাতের খাবার খেয়ে তারপর বাসায় আসলো।
মধুমিতা কিছুদিন ধরে রবিনকে কল করছে কিন্ত রবিন ফোন রিসিভ করছেনা। ভারসিটিতেও ওকে ক্লাস করতে দেখেনা। ওর বন্ধুবান্ধবের কাছে জানতে চেয়েও কোন সঠিক উত্তর পায়নি। তাই খুব চিন্তায় পড়ে গেল। অপূর্বকে বললে, ও বলল, হয়তো দেশের বাড়ি গেছে। তুমি থিসিস নিয়ে বিজি তাই হয়তো বলে যেতে পারেনি।
মধুমিতা চিন্তামুক্ত হতে পারেনি। তাই বিকেলের দিকে রবিনদের বাসায় গেল। রবিনের মা, যা বলল, তা ও আশা করেনি। রবিন নাকি বেশ কিছুদিন ধরে খুব সকালে বাইরে যায়, বাড়ি ফেরে অনেক রাতে আবার কখনো কখনো ফেরেওনা। খাওয়াদাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে। যতখন বাসায় থাকে দরজা আটকিয়ে পরেপরে ঘুমায়। মধুমিতা বুঝল, Something wrong! বন্যার সাথে হয়তো কিছু একটা হয়েছে। মধুমিতা রবিনকে কল করলো আবার, এবার রবিন কল রিসিভ করলো। বলল, মিতা তুই কই?
মধুমিতা বলল, আমি তোদের বাসা থেকে বের হচ্ছি। তুই কই?
আমাদের বাসায় গিয়েছিস কেন?
তোর কোন খোঁজ না পেয়ে। তুই তো কল রিসিভ করছিস না এমনকি কোন যোগাযোগও করছিস না। কি হয়েছে তোর? খালাম্মার কাছ থেকেও তো ভাল কোন রিপোর্ট পেলাম না!
বাদ দে, এখন টিএসিতে আয়, অনেক কথা আছে।
মধুমিতা টিএসিতে গিয়ে রবিন এর অবস্থা যা দেখল, তা ও কল্পনাও করেনি। এই কয়েকদিনে, ওর গালচাপা ভেঙ্গে পড়েছে। বড় বড় চোখ দুটি কোটরে ঢুকে গেছে। অনবরত সিগারেট টানছে, চেইন স্মোকারদের মত। এ এক অন্য রবিন। গীটারে সুর তুলেই যাচ্ছে, মধুমিতা যে এসেছে সেই দিকে নজর নেই। ওর পাশের ছেলেটি যখন বলল, তখন ও তাকাল। তারপর বলল, এসেছিস, আয় বস। মধুমিতা দেখল ওর কথাও কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে। আজকে মধুমিতার একটু ভয় ভয় লাগলো। মনে মনে ভাবল, একা আসা ঠিক হয়নি, অপূর্বকে সাথে করে আসা উচিত ছিল। তারপরেও আশেপাশে অনেক ছেলেমেয়ে দেখে সাহস হল।
রবিন পাশের ছেলেটিকে বলল, টিটু যা তো, পিচ্চিকে দিয়ে দুই কাপ লাল চা পাঠিয়ে দে। আমি ওর সাথে কথা বলি তুই ততক্ষণ ঘুরে আয়। ছেলেটি চলে গেল। রবিন তারপর মধুমিতাকে বলল, কেমন আছিস? মধুমিতার উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলল, আমি ভাল নেইরে। বন্যা আমাকে বন্যার মত ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেছে আকাশের সাথে। তাই তোদেরকে আর মুখ দেখাতে চাইনি। সেইজন্যে যোগাযোগ করি নাই। একদিন বন্যা, হঠাৎ করেই খবর দিয়ে বলল, আকাশ আর ওর আকদ হয়ে গেছে। তাই ও আমার সাথে দেখা করতে পারবেনা। ইন্টার্নি এর পর ওরা দুজন দেশের বাইরে চলে যাবে। কিবরিয়া অবশ্য বলেছিল, তুলে নিয়ে আসার জন্য কিন্ত আমি বলেছি, যার মনেই আমি নেই, তার দেহ দিয়ে কি করব? তাই ও আর কিছু বলে নাই। আমি ঠিক বলেছিনা, মিতা? আবার মিতার উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই বলতে লাগল, আমি অনেক খারাপ হয়ে গেছিরে মিতা, তুই আর আমার সাথে দেখা করবি না? কারণ তুই আমার অনেক ভালো একজন বন্ধু আমি তোর কাছে খারাপ হতে চাইনা। তুইও আমার সাথে একটু নেশা করবি? দেখবি অনেক দুঃখ ভুলিয়ে দিবে।
মধুমিতা রেগে গিয়ে বলল, চুপ কর! এবার আমার কথা শোন। বন্যা তো ওর জীবন বেছে নিয়ে সুখে আছে, তুই কেন ওর জন্য ধ্বংস হয়ে যাবি? তোর মায়ের কথা, বড় ভাইয়ার কথা ভাববি না? এসব ছাড় আর বাস্তবে ফিরে আয়। পৃথিবীতে তোর এখনো অনেক কিছু করার আছে। এভাবে ধুকে ধুকে মরার কোন মানে হয় না। মধুমিতা দেখল রবিন ওর কোন কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনল না, বারবার গীটারে সুর তোলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আমার বাসায় আয় একদিন তখন খুব আড্ডা মারা যাবে আর নতুন কি কি গান গীটারে তুলেছিস তা শোনাবি। আমি তোর অপেক্ষায় থাকব। আজকে তাহলে আসি।
রাতে যখন অপূর্বর সাথে কথা হল, অপূর্ব জানতে চেয়েছে, মধুমিতা সারাদিন কোথায় ছিল। মধুমিতা অপূর্বকে রবিনের সব কথা খুলে বলল। অপূর্ব মধুমিতাকে বলল, রবিন এখন অন্য লাইনে চলে গেছে, তোমার উচিত এখন ওকে Avoid করা।
কিযে বোলো না। আমরা সবাই ওকে Avoid করলে হিতেবিপরীত হবে ওর জন্য। সেটা খুবই খারাপ হবে বরং ওকে বুঝিয়ে ঐ পথ থেকে সড়াতে হবে।
ঠিক আছে বাদ দেও, আমি তোমাকে জরুরি কথা বলার জন্য কল দিয়েছি, তা হোল আমি কয়েকদিন পর রাজশাহীতে যাব। সাহেদ আমার সাথে যাবে।
মধুমিতা বলল, কতদিন থাকবে?
প্রায় ১৫/২০ দিন। খুবই জরুরী কাজে যাচ্ছি,ওখান থেকে ফিরে তোমাকে সব বলব।
মধুমিতা এর মধ্যে ওর থিসিসের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। দু’একদিনের মধ্যেই জমা দিবে। রবিনের সাথে যখনি দেখা হয়েছে, রবিন বারবার ওকে রিকোয়েস্ট করেছে ওর সাথে নেশায় সঙ্গ দিতে, কেননা মধুমিতা নেশা নিয়ে লিখছে আর একটু তা ব্যাবহার করে দেখবে না! কেমন লাগে বা অনুভূতিটা কেমন। প্রতিবারই মধুমিতা এড়িয়ে গেছে।
অপূর্বর ভাল লাগছিল না, বন্যার সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর মধুমিতার রবিনকে নিয়ে এই বাড়াবাড়ি। একদিন সাহেদ তো টিটকারি দিয়ে বলেই ফেলল, কিরে অপূর্ব, তোর প্রজাপতি তো উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। এখনো সময় আছে নিজের ঘরে নিয়ে আয়। অপূর্ব বলল, এবার রাজশাহী থেকে ফিরেই একটা কিছু করব। আগামীকাল ভোরে অপূর্ব, রাজশাহীতে রওনা হবে তাই মধুমিতাকে বলল, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত রবিনের সাথে দেখা করোনা। বলা তো যায় না, কখন কি হয়।
মধুমিতা বলল, তাই কি হয়! অপূর্ব আমার ছেলেবেলার বন্ধু, ও এমন কিছু করবে না। তুমি নিশ্চিন্ত মনে যেতে পারো। কিছু হলে মোবাইল তো আছেই, আমি তোমাকে তখন কল করব।
ঠিক আছে, লক্ষ্মীটি সাবধানে থেকো। আজকে আর বেশী কথা বলবো না। শুধু এতটুকুই বলব, খুব শীঘ্রই আমি তোমাকে আমার করে নিব। ভালো থেকো সারাদিন সারাবেলা। অনেক অনেক ভালোবাসা।
তুমিও ভাল থেকো। আর যদি পার তবে তাড়াতাড়ি চলে এসো। তোমার জন্য আমার ভালোবাসা সর্বক্ষণ। এখন ঘুমাও, খুব ভোরে উঠতে হবে। আল্লাহ হাফেজ।
রাজশাহীতে গিয়ে সাহেদের বিয়ে নিয়ে এক ঝামেলার সৃষ্টি হল কারণ শোভার ভাইয়েরা দুবাইতে চাকরী করে এমন একটি ভালো পাত্র পেয়েছে শোভার জন্য তাই তাদের ইচ্ছা শোভাকে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিবে। যদিও তারা জানে সাহেদের সাথে শোভার একটা সম্পর্ক আছে তবুও তারা ঐ ছেলের সাথেই বিয়ে দিতে চায় কারণ সাহেদ মাত্র ফাইনাল দিল। কবে রেজাল্ট বের হবে আর কবে চাকরী করবে! কোন নিশ্চয়তা নাই। এরকম প্রেম তো জীবনে বহুবার হয়ে থাকে। এদিকে শোভা সাহেদকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবেনা, তাই খবর পাঠিয়েছে। রাতদিন কান্নাকাটি করছে, খাবারদাবারও খাচ্ছেনা। সাহেদ অপূর্বকে জানালে অপূর্ব বলল, কোন চিন্তা করিস না। চাকরীর একটি ব্যাবস্হা বাবাকে বলে তার অফিসে করা যাবে। তাই অপূর্ব ওর মাকে সব খুলে বলল, সাহেদ আর শোভার ব্যাপারটা। অপূর্বর মা, সাহেদকে নিজের ছেলের মতই দেখে তাই সে বলল, সে শোভাদের বাড়ি গিয়ে ওর ভাইদের বোঝাবে এবং সে তাইই করলো। শোভার ভাইদের বুঝিয়ে সাহেদের সাথে শোভার বিয়ে দিয়ে দিল। সাহেদ যখন চাকরীতে যোগ দিবে তখন ওকে তুলে নিয়ে যাবে। প্রায় অনেকদিন কেটে গেল এই সমস্যার সমাধান করতে। তারপরেও ভাল লাগছে এই ভেবে, সাহেদ আর শোভার প্রেম সার্থকতা লাভ করলো। সাহেদ বলল, এবার তোর পালা। এই বিয়ের ঝামেলায়, মধুমিতার সাথে তেমন কোন কথা হয়নি। প্রায় এক মাস হয়ে গেল, রাজশাহীতে এসেছে। দু’একদিনের মধ্যে রেজাল্ট বের হবে, তাই ঢাকায় ফিরে যেতে হবে। ঢাকায় গিয়েই মধুমিতাকে সব ঘটনা বলবে। মধুমিতা কি করছে এখন কে জানে?
এদিকে প্রায় একমাস হতে চলল, অপূর্ব ঢাকায় নেই। জানতে চাইলেই বলে খুব তাড়াতাড়ি আসব। এখন ভীষণ বিজি আছি, পরে কথা বলব বলে ফোনের লাইন কেটে দেয়। কি এত ব্যস্ত যে, মধুমিতার সাথে কথা বলারও সময় নেই! রাতে কল দিলে বলে সকালে কথা বলবো আর সকালে কল দিলে বলে রাতে কথা বলবো। রাজশাহীতে গেলেই ও সব ভুলে যায়। ওর কাছে জানতে চাইলেই বলে, বুঝই তো মা,বাবা,বোন এবং বন্ধুবান্ধব সবাই ঘিরে থাকে, তাই সবার সামনে তোমার সাথে তেমন করে কথা বলতে পারিনা। মধুমিতা যদি বলে, রাতে তো ঘুমাতে যাওয়ার আগে কথা বলতে পারো? ঢাকায় তো রাত জেগে কথা বল, ওখানে গেলে ভুলে যাও কেমন করে আমাকে? অপূর্ব তখন যুক্তি দেখায়, পাশেই তো মা বাবা থাকে,তারা কি ভাববে, এত রাতে কার সাথে কথা বলছি! বুঝতেই তো পারো, এটা ঢাকা শহর না। মধুমিতা এই যুক্তির কাছে হেড়ে গিয়ে আর কিছুই বলেনা। তবে ওর খুব কষ্ট হয়, কেননা ওর সব কথা অপূর্বর সাথে শেয়ার না করলে ওর অস্থির লাগে। অপূর্ব তা বুঝতে চায় না। এটাই ওর বড় দুঃখ। তাই যখনি অপূর্ব রাজশাহী যায় তখনি ওর মনে হয়, ইস!আমিও যদি ওর সাথে সারারাত ট্রেনে করে যেতে পারতাম। মধুমিতার খুব ইচ্ছে ট্রেনে করে অপূর্বকে নিয়ে কোথাও পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবে। কারণ ওর এই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বউ সেজে বসে থাকার ইচ্ছে নেই। কয়েকদিন ধরে অপূর্বকে খুব মিস করছে।
একদিন রবিন কল করে জানাল, ওর সাথে দেখা করার জন্য। ও কেন দেখা করবে জানতে চাইলে রবিন খুব ক্ষেপে গেল। বলল, তুই কি আমাকে খারাপ ভাবছিস? আগে তো এত প্রশ্ন করতি না? বললেই চলে আসতি।
মধুমিতা বলল, না তা কেন ভাববো।
রবিন বলল, তাহলে দেরি না করে চলে আয়।
আজকাল রবিনের যেন কি হয়েছে কথায় কথায় ক্ষেপে যায়। মধুমিতা শুনেছে যারা নেশা করে তারা কারো কোন প্রশ্ন শুনতে চায়না এমনকি কোন উপদেশও তাদের ভাল লাগেনা। রবিন আর আগের মত নেই। সারাক্ষণ একঝাক ছেলেমেয়ে নিয়ে আড্ডা মারে এবং সবগুলোর চোখমুখ লাল হয়ে থাকে ওর ভাল লাগেনা। তাছারা অপূর্ব ওকে নিষেধ করে গেছে তাই ও সেভাবে রবিনের সাথে দেখা করে নাই। তবে আজকে যেতে হবে কারণ রবিন ক্ষেপে আছে আর ওর মনটাও ভাল নেই। মধুমিতা রেডি হয়ে টিএসিতে গেল। রবিন ওকে দেখে বলল, চল কনসার্ট হচ্ছে দেখে আসি। গুরুর মানে আজম খানের কনসার্ট। ওরা সবাই মিলে কনসার্ট দেখল কিছুক্ষণ। কারণ আজম খানের “অভিমানী তুমি কোথায় হারিয়ে গেছো…..”এই গানটি শোনার পর রবিন বন্যার কথা মনে করে, কান্নাকাটি শুরু করল সবার সামনে। তাই সবাই মিলে বের হয়ে আসলো রবিনকে সাথে করে। একটি নির্জন জায়গায় সবাই মিলে বসল। মধুমিতা দেখল যে যার মত নেশারদ্রব্য খুলে বসল। কেউ গাঁজা চরস সেবন করছে কেউ আবার ট্যাবলেট খাচ্ছে।
মধুমিতা দেখল রবিন ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জে কি যেন ভরল তারপর মধুমিতাকে বলল, মিতা তোকে এটা পুশ করব কারণ সবাই নিচ্ছে তুই নিবিনা এটা কি ঠিক। শুধু আজকেই নে, আর কখনো বলব না ,দেখিস বাসায় যেয়ে তোর শান্তির একটা ঘুম হবে। আমার তো মনে হয় অপূর্ব শালা পগারপার! হয়েছে তোকে ফেলে। এতদিন হয়ে গেল আর আসছেনা। তোর দুঃখ আমি বুঝতে পারছি।
মধুমিতা ভাবল, আসলেই তো অপূর্ব ওর সাথে ঠিকভাবে কথাই তো বলছে না। রাতের পর রাত ও না ঘুমিয়ে বসে রয়েছে অপূর্বর সাথে ফোনে কথা বলবে বলে কিন্ত অপূর্ব তো পাত্তাই দিচ্ছেনা ওকে! কি নিয়ে ও এত ব্যস্ত হয়ে পরেছে, যে মধুমিতাকে বলতে পারছে না। আজকে ও আর অপূর্বর কথা মনে করবে না। রবিন ওকে অনেকদিন ধরেই বলছে ও এড়িয়ে গেছে। আজকে কি এক অভিমান ওকে গ্রাস করে ফেলল আর ও রবিনের কথামত ইঞ্জেকশন নিল। কিছুক্ষণের মধ্যে ওর ঘুমঘুম ভাব চলে আসলো। মধুমিতা বুঝতেই পারল না, ও যে নেশার জগতে সামিল হল। এই জন্য কথায় আছে, “সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস, আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ!”
রবিন বলল, চল তোকে বাসায় পৌঁছে দেই, রাত ৯টা বেজে গেছে। রবিন ওকে রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছে দিল। রবিন আর বাসায় প্রবেশ করলো না। মধুমিতাকে দেখে ওর মা বলল, এত দেরি করলি যে? ভাত বেড়ে নিয়ে বসে আছি। মধুমিতা বলল, আজকে আর খাবনা মা, বাইরে থেকে খেয়ে আসছি। খুব ঘুম পাচ্ছে, আমি এখন ঘুমাব। তুমি খাবার তুলে রাখো। এই বলে ওর রুমে চলে গেল। সারারাত আর কোন কিছু টের পেল না। কতবার যে অপূর্ব কল করেছে তা সকালে উঠে দেখল। মাথাটা খুম ঝিমঝিম করছে বুয়াখালাকে ডেকে বলল চা দিতে।
চায়ের কথা শুনে মা ওর ঘরে এসে বলল, খালি পেটে চা খাবি যে? রাতেও তো কিছু খাস নাই। আগে নাস্তা কর তারপর চা খাবি।
না মা, কিছু হবে না,নাস্তা পরে খাব। মাথাটা খুব ধরেছে।
শরীর কি খুব বেশি খারাপ লাগছে? তাহলে বিকেলে তোর বাবার সাথে গিয়ে তোর ডাক্তার চাচাকে দেখিয়ে আসিস। এখন তাহলে একটা বিস্কিট দিয়ে চা খা, খালি পেটে চা খাবিনা।
মধুমিতা চা খেতে খেতে গতকালের কথা মনে করলো। রবিন ঠিকই বলেছিল, রাতে ওর খুব ভালো একটা ঘুম হবে, তাইই হয়েছে। খুব ফ্রেস একটা ঘুম হয়েছে। কিন্ত খারাপের মধ্যে একটাই হয়েছে,সকালে উঠে মাথাটা ঘুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। ঘুমের জন্য, অপূর্ব কল করেছিল কিন্ত ও ফোনের রিংটোন শুনে নাই।মনে মনে নিজেই বলল, ভালো হয়েছে শুনে নাই। অপূর্ব ওকে যখন তখন Avoid করে, এবার বুঝবে। ও আর কল করবে না অপূর্বকে, মনে মনে ঠিক করল।
মধুমিতা কল রিসিভ করল না কেন, সেই কথা ভেবে অপূর্ব চিন্তিত হয়ে পড়ল। মৌ এর কোন বিপদ হয়নি তো! ফ্রি হয়ে পরে আবার ওকে কল করবে। অপূর্বর মধুমিতাকে কল করতে করতে রাত হয়ে গেল কারণ বাবার অফিসে একটু কাজে ব্যস্ত ছিল। মধুমিতা কল ধরল। তারপর বলল, কি ব্যাপার! এতদিনে তোমার আমার কথা মনে পড়ল?
অপূর্ব বলল, কি বলবো তোমাকে, বাবা তাঁর অফিসের কাজে আমাকে লাগিয়ে দিয়েছে। বলেছে যতদিন এখানে আছো, ততদিন একটু দয়া করে অফিসে এসো। রেজাল্ট বের হতে তো দেরি আছে, এরমধ্যে কাজগুলো একটু বুঝে নেও, তাহলে পরবর্তিতে যখন অফিসে যোগ দিবে, তখন আর কষ্ট হবে না। তাই…।
মধুমিতা অভিমান করে বলল, রাতেও কাজ কর? না অন্য কাউকে পেয়েছও ওখানে?
কিযে বল না মধু। তোমার কি আমাকে সেইধরনের মনে হয়? আমি তোমার নেশায় ঘোরে ডুবে আছি, সেখানে কার এতবড় সাহস হবে আমার ঘোর ভাঙ্গে! এই বলে অপূর্ব হাসতে লাগলো।
মধুমিতা বলল, থাক আর বলতে হবে না। কবে আসবে ঢাকায়?
আসব, হাতে কিছু কাজ আছে তা শেষ করেই আসব। তুমি কোন চিন্তা করোনা, লক্ষ্মীটি।
মধুমিতা রেগে গেল কিন্ত অপূর্বকে বুঝতে দিল না। মিথ্যে করে বলল, আমার ঘুম আসছে, আমি এখন ঘুমাবো।
অপূর্ব বলল, ঠিক আছে ঘুমাও। অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভ রাত্রি।
মধুমিতার চোখ দিয়ে পানি এসে পড়ল। ও ফোনের লাইন কেটে দিল। দুই তিনদিন হল ও ঘুমাতে পারছেনা। সারা শরীরে এক অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। সে যে রবিন ইনজেকশন পুস করল, সেদিনই অনেক শান্তিতে ঘুমিয়েছে। এরপর থেকে আর ঘুম আসছে না। সারাক্ষণ ছটফট করছে। এখন রাত অনেক হয়েছে, তানাহলে রবিনকে কল করে জিজ্ঞেস করতো, ও কি ঢুকিয়ে ছিল সিরিঞ্জের ভেতর! ওর সব কিছুতেই মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে, এটা ঠিক হচ্ছে না। রবিনকে সব বলতে হবে। সকালে রবিনকে কল করে সব বলল। রবিন সব মনোযোগ দিয়ে শুনে বলল, আমি এসে তোকে কিছু ট্যাবলেট দিয়ে যাব, তুই সেগুলো খেলে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবি। সিরিঞ্জে যে,প্যাথেডিন দিয়েছিল তা আর মধুমিতার কাছে প্রকাশ করল না। রবিন অবশ্য সেদিন ঝোঁকের মাথায় সব করেছিল। এখন মিতার জন্য ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। এদিকে দিনে দিনে মধুমিতাও নেশায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, সারাক্ষণ মনে হয় ওর মত দুঃখী কেউ নেই। মা বাবা একটু কিছু বললেই কেঁদে ফেলছে। অপূর্বর সাথেও রাগারাগি হচ্ছে অনবরত। নিজেই জানেনা, কখন কি করছে! এখন ও ট্যাবলেট ছাড়া রাতে একটুও ঘুমাতে পারে না।
অপূর্ব মধুমিতার কথায় বুঝতে পারল, ওর কিছু একটা হয়েছে। তাই আর দেরি না করে ঢাকায় চলে আসলো। ঢাকায় এসে দেখে যে মধুমিতাকে ও রেখে গিয়েছিল, সে আর তেমন নেই। মধুমিতার বাবা মা অপূর্বকে সব খুলে বলল, মধুমিতার ব্যাপারে। মধুমিতাকে ডাক্তারের কাছেও তারা নিতে পারে নাই। তাদেরকে এড়িয়ে চলে, দরজা বন্ধ করে সারাদিন রুমে পরেপরে ঘুমায়। আগের সেই উচ্ছলতা হারিয়ে গেছে। তারা খুব কান্নাকাটি করল। এই দুইমাস অপূর্ব রাজশাহীতে এতই বিজি ছিল যে, মধুমিতাকে সেভাবে সময় দিতে পারেনি আর সেই ফাঁকে রবিন এত বড় সর্বনাশ করে ফেলল!
এখন কিভাবে ফেরাবে মধুমিতাকে? একবার ভাবল, রবিনের সাথে কথা বলতে হবে আবার চিন্তা করলো, রবিনকে বলে কি হবে? মধুমিতা তো ছোট না। তাছাড়া মধুমিতা নিজেই মাদকদ্রব্য এর বিরুদ্ধে থিসিস লিখে কি করে এই কাজ করলো? অপূর্ব ভেবেই পেল না। যা হবার হয়ে গেছে এখন যে করেই হোক মধুমিতাকে এই অন্ধকার জগত থেকে ফেরাতে হবে। ও কত স্বপ্ন দেখেছে মধুমিতাকে নিয়ে, তা বিফলে যেতে দেয়া যাবে না।
তাই মধুমিতা যখন ওর পায়ে মাথা রেখে শুয়ে থাকে তখন ও প্রতিদিন মধুমিতাকে ওর স্বপ্নের কথা বলতে থাকে। মধুমিতা বধুবেশে, নাকে নথ, কপালে বড় লাল টিপ, খোঁপায় বেলি ফুলের মালা সাথে থাকবে লাল গোলাপ, পায়ে নূপুর, দুহাত ভরা লাল রেশমি চুড়ি আর লাল বেনারসি শাড়ির সাথে মিলিয়ে লাল চেলি দিয়ে ঘোমটা টানা থাকবে।
মধুমিতা অপূর্বর কথায় বাধা দিয়ে বলে, বেনারসি শাড়ির রঙটা কিন্ত হতে হবে রানী কালারের লাল।
অপূর্ব বলল, তুমি নিজে আমার সাথে গিয়ে কিনে এনো। কারণ রানী কালারের লাল কোনটা, তাতো আমি বুঝি না।এভাবেই অনেকদিন হয়ে গেল কিন্ত মধুমিতাকে নেশা থেকে সেভাবে ফেরানো যাচ্ছেনা। অপূর্ব ভাবল, এবার মধুমিতাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা প্রয়োজন। মধুমিতাকে তো ওর বাবা মা এখন ওর কাছে বিয়ে দিবে না, তাই মধুমিতার কথা মত ওকে পালিয়েই বিয়ে করবে। অপূর্ব ঠিক করলো মধুমিতাকে নিয়ে রাজশাহী চলে যাবে এবং সেখানে বিয়ে করে পরে ওর বাবা মা এবং মধুমিতার বাবা মাকে জানাবে। সাহেদের বিয়ের সময় ওর মা যখন ওর কাছে জানতে চেয়েছিল, কেউ আছে কিনা! তখনি ও মধুমিতার কথা বলেছে। তাই কোন অসুবিধা হবেনা। বিয়ে হয়ে গেলে মধুমিতাকে ওখানকার মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে দিলেই হবে। যে করে হোক মধুমিতাকে ভাল করতেই হবে। কারণ মধুমিতা যে ওর ভালোবাসার নেশা।
একদিন মধুমিতাকে বলল, তুমি না বলেছিলে পালিয়ে বিয়ে করবে? চল পরশু রবিবার আমরা রাজশাহীতে ট্রেনে করে যাই তারপর ওখানে গিয়ে বিয়ে করি। কেউ জানবে না, সাহেদ সব ব্যাবস্হা করবে। তুমি না বলেছিলে আমার সাথে ট্রেনে করে যাবে। চল যাই, যাবে?
মধুমিতা বলল, ঠিক আছে, যাব।কিন্ত বাবা মাকে বলবে না। বিয়ের পর আমি কল করে জানাবো, হিন্দি সিনেমার মত, এই বলে হেসে দিল।
অপূর্ব ওর হাসি হাসি মুখের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। তারপর বলল, ঠিক আছে।
সাহেদকে বলে অপূর্ব টিকেট করে রাখল। তারপর মধুমিতাকে বলল, আগামীকাল সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ট্রেন ছাড়বে। মধুমিতা যেন রেডি হয়ে থাকে। অপূর্ব ঠিক ভোর ৬টায় বাসা থেকে বের হয়ে যাবে এবং কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে ওয়েটিংরুমে মধুমিতার জন্য অপেক্ষা করবে।
মধুমিতা সব শুনে বলল, ঠিক আছে, আমি রেডি হয়ে থাকব।
মধুমিতা রাতে বাবা মায়ের সাথে খাবার খেলো তারপর মায়ের রুমে গিয়ে মাকে বলল, মা তোমার বিয়ের শাড়িটা একটু দিবে, আমি পড়ব।
মা মধুমিতার কথায় একটুও অবাক হল না কেননা মধুমিতা আজকাল যখন ওর মন যা চায় তাই করে। কি যে হয়েছে মেয়েটার! মধুমিতার মা আলমারি থেকে তার লাল বেনারসি শাড়ি বের করে দিল। মধুমিতা শাড়ি নিয়ে ওর রুমে চলে গেল। নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে শাড়িটা পড়লো। তারপর খুব করে সাজল। শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘোমটা দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে দেখল, খুব ভাল লাগছে। অপূর্বকে যদি দেখাতে পারত!কিন্ত অনেক রাত হয়ে গেছে। ছাদে যাওয়া যাবে না এখন। অপূর্ব তখনি কল করল। মধুমিতা বলল, তুমি বুঝলে কি করে আমি তোমার কথা ভাবছিলাম!
আমি যে তোমার মনের মধ্যে আছি, তাই বুঝে গিয়েছি। এবার বল, আমার কথা ভাবছিলে কেন?
মধুমিতা সব বলল, তারপর বলল, ইস!তোমাকে যদি দেখাতে পারতাম, বিয়ের শাড়িতে আমাকে কেমন লাগছে।
অপূর্ব বলল, এই তো আর কয়েক ঘণ্টা। তারপর তো তোমাকে আমি বিয়ের সাজে দেখতে পাব। যদিও এখন দেখতে পেলে আমারও খুব ভাল লাগত কিন্ত অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি ঘুমাবে না? ঘুমিয়ে পড়, তানাহলে তো সকালে উঠতে পারবে না। আমি এখন ঘুমিয়ে পড়ব। অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য, শুভ রাত্রি
মধুমিতার ঘুম আসছিল না কারণ প্রতি রাতে ওর ট্যাবলেট না খেলে ঘুম আসে না। কিন্ত ও আজকে ঘুমের ওষুধ খেতে চাচ্ছে না কারণ ঘুমের ওষুধ খেলে ও ভোরে উঠতে পারবে না।। ও এত এক্সাইটেড হয়ে আছে পালিয়ে বিয়ের কথা ভেবে তাই ঘুম আসছে না।হঠাৎ করে শরীরে কেমন যেন যন্ত্রনা অনুভব করল। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকার কারণে আস্তে আস্তে ওর নেশার মাত্রা বেড়ে যেতে থাকলো। ও কি করবে এখন? রবিনের দেয়া ট্যাবলেট এখনো অনেকগুলো আছে, যদিও অপূর্বকে বলেছিল ও এখন আর খায় না কিন্ত প্রতিদিন না খেলে ওর ঘুম হয় না।
অপূর্বর খুব ভরে ঘুম ভাঙল। ও তাড়াতাড়ি করে ফ্রেস হয়ে, সুটকেস নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সিঁড়িতে একটু দাড়াল। মনের মধ্যে খুব অস্থিরতা অনুভব করল। যদি মধুমিতাকে একটু দেখে যেতে পারত! কিন্ত তা সম্ভব না। ওর সাথে দেখা করতে গেলে, সবাই জেগে যাবে এবং নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। থাক কিছুক্ষণ পর তো মধুমিতার সাথে দেখা হচ্ছেই এবং সারাজীবনের জন্য মধু ওর হয়ে যাবে। তখন ও প্রাণভরে ওকে দেখবে। অপূর্ব সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় একটা ধাক্কা খেল। মনটা যেন কেমন করে উঠল। ও তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল।
অপূর্ব কমলাপুর রেল স্টেশনের ওয়েটিংরুমে বসে অপেক্ষা করছে মধুমিতার জন্য আর কত কি যে ভাবছে! কি করে মধুমিতাকে নিয়ে বাসার সবার সামনে দাঁড়াবে? ওর বোন অপি ওকে কিভাবে নিবে? অন্যান্য আত্মীয়স্বজন কিভাবে মধুমিতাকে গ্রহণ করবে, তাইই ভাবছে। ওর চারিপাশে কত মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করছে কিন্ত মধুমিতাকে নিয়ে ও অনেক বড় একটা রিক্স নিয়েছে। ওকি মধুমিতাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবে! যেভাবেই হোক মধুকে ওর স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। কিন্ত মধুমিতা এখনো আসছেনা কেন? ৮ টা তো প্রায় বেজে গেল! তাহলে কি ও আর আসবে না? মধুমিতা কি ওর সিদ্ধান্ত পালটিয়ে ফেলেছে! ফোনও তো ধরছেনা। অপূর্ব বুঝে উঠতে পারছে না কি করবে? নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। তাহলে মধু কি ওকে Avoid করলো। ওর কথার কোন মূল্যই দিল না। কি করে এখন বাবা, মা, বন্ধুবান্ধবকে মুখ দেখাবে? কারণ ও যে আগে থেকে সবাইকে বলে রেখেছে। মধুকে নিয়ে ও আসছে। খুব খুব খারাপ লাগছে। অপূর্ব খুব ভেঙ্গে পড়লো। আর ভাবল তাহলে কি ওর ভালোবাসা নেশার কাছে হেরে গেল! অপূর্ব খুব অভিমানি তাই ভাবল, আর নাহ! এই মুখ আর ও কাউকে দেখাবে না। অপূর্ব উঠে দাঁড়িয়ে চলন্ত ট্রেনের দিকে ছুটে গেল, আশেপাশের লোকজন চিৎকার করে ডাকতে লাগলো কিন্ত কোন লাভ হোলও না। এক নিমিষে সব শেষ!
এদিকে মধুমিতার বাড়িতে ওর রুমের দরজা সমানে ধাক্কা মারছে ওর বাবা, মা এবং বাড়ির সবাই কিন্ত মধুমিতা দরজা খুলছে না। সবাই মিলে দরজা ভেঙ্গে দেখে, মধুমিতা ওর মায়ের লাল বেনারসি শাড়ি পড়েই অসার হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাড়াতাড়ি পাশের বাসা থেকে ডাক্তার এসে হাতের পালস চেক করে দেখে মাথা নিচু করে বল্ল, Sorry!she is dead. সব শেষ! মধুমিতার মা বাবা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। ডাক্তার ডেড সার্টিফিকেটে লিখল, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনই, তার মৃত্যুর কারণ।
অপূর্ব আর কখনই জানতে পারল না, কেন মধুমিতা কমলাপুর রেল ষ্টেশনে পৌঁছোতে পারেনি কেননা সে যে তার আগেই তার আসল গন্তব্যে পৌঁছে গেছে! মধুমিতাও জানতে পারল না, অপূর্বও তার নিজের গন্তব্য খুঁজে নিয়েছে। এভাবেই একদিকে প্রেমের নেশা ও আরেকদিকে মাদকের নেশার পরিসমাপ্তি হলো।
সমাপ্ত