সামীর রূহাণী [ অভিনেতা এবং লেখক – বাংলাদেশ ] – আমরা অধিকাংশ সবাই একদিনের জন্য দেশপ্রেমিক । বিশেষ বিশেষ দিবস ছাড়া শহীদদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা যেনো ডাস্টবিনের আবর্জনার মতন অবহেলায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকে । রাষ্ট্রীয় শহীদদের বেদি স্মৃতি স্তম্ভ বা মিনারের এতটা অসম্মান হয়ত আর কোনো দেশে হয় কিনা আমার জানা নেই । পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশ রক্তের বিনিময়ে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছে । অথচ তাদের শহীদ মিনারে বা স্মৃতি স্তম্ভে ময়লা আবর্জনা তো দূরে থাক সামান্য একটা ফুলের পাপড়ি পর্যন্ত পড়ে থাকতে দেখা যায় না । আর আমাদের দেশে বছরে একদিন বিশেষ দিনে শহীদের সম্মানে ফুল দিতে যেয়ে মারামারিতে পর্যন্ত লিপ্ত হয়ে যাই । বাংলাদেশের সমস্ত দেশপ্রেমিকদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যে রাষ্ট্রীয় শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে চাইলে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ দিনের মাঝে সেটা সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছর শ্রদ্ধা সম্মানটা তাদের রক্তের প্রতি প্রতিদান স্বরূপ প্রকাশ করুন যাতে স্বাধীনতার মর্যাদা নষ্ট না হয় ।
আর বাংলাদেশ সরকারের কাছে শহীদের সম্মান রক্ষার্থে আমার বিশেষ কিছু অনুরোধ রইলো : # সারা বছর শহীদদের বেদিতে মিনারে এবং স্মৃতি স্তম্ভে জুতা স্যান্ডেল খুলে উঠার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন ।। # শহীদদের বেদিতে মিনার এবং স্মৃতি স্তম্ভের উপর হিন্দি গান বাজনা বাজানো বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করুন ।। # সারা বছর শহীদ মিনার এবং এর প্রাঙ্গণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করুন ।। # সারা বছর শহীদদের বেদি এবং স্মৃতি স্তম্ভের আশেপাশে অন্ধকারে প্রস্রাব করা বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিন ।। # শহীদ মিনার সহ স্মৃতি সৌধ এবং বুদ্ধিজীবীদের বদ্ধভূমিতে সারা বছর নোংরা আবর্জনা ময়লা ফেলে ডাস্টবিন বানিয়ে রাখা বন্ধ করুন ।। # সারা বছর স্মৃতি সৌধ এবং বদ্ধভূমির উপরে সামনে পেছনে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা জরাজরি নষ্টামি অশ্লীল কাজকর্ম বন্ধ করার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন ।। # মিনারের উপরে উঠে মানসিক রুগীর মতো সেলফি তোলা এবং শ্রদ্ধা নিবেদনের ফুল চুরি করে নষ্ট করা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিন ।। # সাধারণ মানুষ আপনারা রাষ্ট্রীয় বিশেষ দিন’কে ভালোবাসা দিবসে পরিনত করে দেশ এবং শহীদদের সম্মানে আঘাত করা দয়াকরে বন্ধ করুন ।। # রাষ্ট্রীয় বিশেষ বিশেষ দিনে আনন্দ উৎসবের নামে হিন্দি বা ইংলিশ কিংবা অশ্লীল শব্দের বাংলা গান বাজিয়ে পাড়া মহল্লায় নোংরামি বন্ধ করার কঠোর ব্যবস্থা নিন ।। পরিশেষে সবাইকে বলতে চাই যে আঞ্চলিক রাজনৈতিক ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে শহীদদের সম্মান নিয়ে টানাহেঁচড়া সমালোচনা করাটা নীচ মন মানসিকতার পরিচয় । শহীদরা তাদের জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে শরীরের তাজা রক্ত কুরবানী করে আমাদের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে এমন কোনো ভুল করে ফেলেনি যে আমরা তাদের নিয়ে যা ইচ্ছা তাই সমালোচনা করবো । আমি মনে করি সেই যোগ্যতা আমরা রাখি না । বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন যে আপনি আমি আর আমরা যা করছি বা করবো সেটাই কিন্তু বিশ্বের চোখে প্রকৃত বাংলাদেশের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে । এইজন্য আমি একদিনের দেশপ্রেমিক হতে চাই না ।। ধন্যবাদ