আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় শুক্রবার। ট্রাম্প বলেছেন, এর ঠিক আগে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে। এর মধ্যে টিকটক প্রসঙ্গও ছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট টিকটকের আপিল খারিজ করে দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে টিকটককের সর্বশেষ আইনী পাথটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
মার্কিন আদালত বলছে, নতুন যে আইনের ফলে টিকটক নিষিদ্ধ হয়ে গেল, সেটি টিকটক বা দেশটিতে এর ১৭ কোটি ব্যবহারকারীর জন্য প্রথম সংশোধনীর অধীনে পাওয়া অধিকার লঙ্ঘন করেনি।
কিন্তু দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্ত কি সত্যিই আমেরিকায় এর যবনিকা টানবে? এমন প্রশ্ন তুলে এর নানা সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
হোয়াইট হাউস বলছে, “সময়টিই এমন যে, আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার্যত ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে পড়বে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরদিনই তিনি নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিচ্ছেন।
আর, ডনাল্ড ট্রাম্প টিকটককে একটি লাইফলাইন দেবেন বলে আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
তাহলে এরপর কী হচ্ছে?
ট্রাম্প কি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারবেন?
শনিবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি টিকটককে নিষেধাজ্ঞা থেকে ৯০ দিনের একটি ছাড় দেবেন। এনবিসি নিউজকে তিনি বলেছেন, সোমবার এ নিয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে।
কিন্তু প্ল্যাটফর্মটি নিষিদ্ধ করার নতুন আইন কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই অ্যাপটি মার্কিন ব্যবহারকারীদের জন্য অফলাইন হয়ে যায়। অ্যাপটি খুললেই সেখানে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে- এমন একটি বার্তা দেখাচ্ছে।
ওই বার্তায় টিকটক জুড়ে দিয়েছে, “সৌভাগ্যক্রমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর টিকটক যেন ফের চালু করা যায় সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন।”
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় শুক্রবার। ট্রাম্প বলেছেন, এর ঠিক আগে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন বাণিজ্যসহ নানা বিষয়ে। এর মধ্যে টিকটক প্রসঙ্গও ছিল।
সোশাল মিডিয়ায় করা পোস্টে তিনি লেখেন, “আশা করছি আমরা একসঙ্গে অনেক সমস্যার সমাধান করব এবং কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শক হিসাবে কাজ করবেন মাইক ওয়াল্টজ। বৃহস্পতিবার তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, “নতুন প্রেসিডেন্ট টিকটককে টিকিয়ে রাখার উপায় খুঁজছেন।”
“আমি নির্বাহী আদেশ টপকে কিছু বলতে চাই না। কিন্তু, আমরা একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করছি।”
বাইডেন প্রশাসন আগেই বলে দিয়েছে, তারা আইনটি প্রয়োগ করবে না। ফলে, ট্রাম্পের জন্য বিকল্প হতে পারে মামলাটি চলতে দেওয়া, আইনটিও বলবত হতে দেওয়া, তবে বিচার বিভাগকে (ডিওজে) বিষয়টি উপেক্ষা করতে বলা।
এর মধ্যে সরকার অ্যাপল এবং গুগলকে বলবে যে, অ্যাপ স্টোরে টিকটক অ্যাপটি রাখার জন্য তাদের সাজা পেতে হবে না। যার অর্থ হচ্ছে, আইনটি বহাল থাকবে ঠিকই, তবে এর কোনো গুরুত্ব থাকবে না।
অ্যাপল-গুগল অবশ্য এ নিয়ে অস্বস্তিতে থাকবে, কারণ, তারা আইন ভাঙছে। তারা তখনই স্বস্তি বোধ করবে যখন প্রেসিডেন্ট তাদেরকে আক্ষরিকভাবেই কথা দেবেন যে, তাদেরকে এ নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।
নিষিদ্ধ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে কি টিকটক ব্যবহার করা যাবে?
ট্রাম্প যদি টিকটকের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলতে না পারেন, তবে কী হবে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার সবচেয়ে সম্ভাব্য উপায় হল যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ স্টোরে টিকটক না রাখা।
তবে বিচার বিভাগ বলছে, “আইনটি প্রয়োগের প্রকৃত প্রক্রিয়া হচ্ছে, অ্যাপল-গুগল নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছে তা নিশ্চিত করা এবং এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া হবে”।
যদি অ্যাপ স্টোর থেকে টিকটক ডাউনলোড না করা যায়, তা হলেও এরইমধ্যে যাদের ফোনে অ্যাপটি আছে, তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা কোনো প্রভাব ফেলবে না।
কিন্তু যেহেতু অ্যাপটি আর নতুন করে পাওয়া যাবে না, এর আপডেটও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীরা পাবেন না। ফলে, পুরোনো সংস্করণ ক্রমশ অব্যবহারযোগ্য হয়ে যাবে।
আর এই প্রক্রিয়ায় পুরোনো টিকটক অ্যাপ নিরাপত্ত ঝুঁকিতে পড়বে।
অবশ্য, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোরও উপায় আছে
টিকটকে এরইমধ্যে অনেক ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যা ব্যবহারকারীদের শিখিয়ে পড়িয়ে দিচ্ছে কীভাবে ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টিকটক ব্যবহার করা সম্ভব। এতে করে ফোনটির অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে না দেখিয়ে অন্য কোথাও দেখানো হয়।
আবার অ্যাপ স্টোরের সেটিং বদলেও অঞ্চল পাল্টে নেওয়া সম্ভব। ফলে, যে কেউ অন্যান্য দেশের জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন। এতে করে অবশ্য অ্যাপ ইনস্টলের সময় যে শর্তাবলীতে রাজী হতে হয়, সেখানে মিথ্যা কথা বলতে হচ্ছে। আর সেটি আইনবিরুদ্ধ।
কারা টিকটক কিনতে পারেন?
এতদিন পর্যন্ত বাইটড্যান্স বলে এসেছে যে, অ্যাপের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশটি বিক্রির জন্য নয়।
কিন্তু এখন এটা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর কি বাইটড্যান্স নতুন করে ভাববে? বিশেষ করে এমন একজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসছেন যিনি তার “আর্ট অফ ডিল” বা তার চুক্তি করার ক্ষমতা নিয়ে গর্ব বোধ করেন?
সম্ভাব্য ক্রেতারা অবশ্য লাইনে আছেন – ব্লুমবার্গ নিউজের এক প্রতিবেদন মঙ্গলবার বলেছে, বাইটড্যান্স সম্ভাব্য ক্রেতা হিসাবে ইলন মাস্কের নাম বিবেচনা করছিল। তবে, টিকটক একে “স্রেফ গাঁজাখুরি” বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের সাবেক অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন এবং ধনকুবের ব্যবসায়ী ফ্রাঙ্ক ম্যাককোর্ট এর আগে এটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্স বেসবল দলের সাবেক মালিক ম্যাককোর্ট বলেছেন, টিকটক কেনার জন্য বিনিয়োগকারীদের একটি কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে তিনি দুই হাজার কোটি ডলারের মৌখিক প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
সম্ভাব্য মালিক আরও আছে!
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইউটিউবার মিস্টারবিস্ট বলছেন, তিনিও বিভিন্ন বিলিওনেয়ারদের কাছ থেকে টিকটক কেনার প্রস্তাব পেয়েছেন। টিকটকে মিস্টারবিস্টের ১০ কোটির বেশি অনুসারী আছে বটে, তবে তার এই আলাপকে বাগাড়ম্বর বলেই মনে হতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, টিকটকের ভাগ্যে হতে পারে অনেক কিছুই। তার আগে অনেকগুলো যদি, তবে, কিন্তু রয়েছে।