আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আয়ারল্যান্ডে জুলাই গণহত্যার স্মরণসভা আয়োজন করা হয়েছিল। আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশী সচেতন নাগরিক সমাজের অংশগ্রহনে ডাবলিনের Scientology Community Centre -এ এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল এই গণহত্যার স্মৃতি যেন মুছে না যায় এবং বাংলাদেশে যেন এমন ঘটনা আর কখনো না ঘটে তা নিশ্চিত করা। জুলাই গণহত্যা, যেখানে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়, চারহাজারেরও বেশী মানুষকে অন্ধত্ব বরন করতে হয় এবং বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়, অনেকেই পঙ্গু হয়ে যান।
বেশিরভাগ হতাহত ছিল কম বয়সী ছাত্র এবং শিশু। এমন মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতি কিছুটা ফিকে হতে শুরু করায়, এই স্মরণসভার আয়োজনের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশিরা ভিক্টিমদের স্মরণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী হন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক রন্টি চৌধুরী উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমরা জুলাই গণহত্যার ঘটনাটি ভুলতে পারি না এবং আমাদের দায়িত্ব হলো নিশ্চিত করা যে বাংলাদেশে এমন কিছু আর কখনো না ঘটে।
এরপর তিনি কেন এই অনুষ্ঠানের প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা করেন। একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় যা জুলাই মাসের গণহত্যার ঘটনার চিত্র তুলে ধরে। প্রামাণ্যচিত্র চলাকালীন অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং অনেকের চোখে অশ্রু দেখা যায়। প্রামাণ্যচিত্রের পর, অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাগরিক সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি তাদের অভিজ্ঞতা ও মতামত প্রকাশ করেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন জনাব আব্দুল হামিদ রনি, জনাব মেহেদী হাসান, জনাব তানভীর শরীফ, জনাব বদরুজ্জামান মাসুম, জনাব আব্দুল জলিল, ছাত্র প্রতিনিধি জনাব মুজাহিদ, জনাব হাবিবুর রহমান, জনাব দিদারুল আলম, জনাব মাহমুদুল হান্নান জুনুন ও অন্যরা।
তারা প্রত্যেকেই গণহত্যার ঘটনায় তাদের অনুভূতি ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা বলেন, পৃথিবীতে এমন নজির নেই যেখানে নিজের দেশের সরকার তার দেশের মানুষের বুকে গুলি করে, যেমন টা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ করেছে।মাত্র এক সপ্তাহে ২৫ হাজার মানুষের গুলি বিদ্ধ হওয়াতে কত গুলি লেগেছে? বক্তারা বলেন, দেশে এমন যাতে আর কোনদিন না হয়, কখনও যাতে ফ্যাসিবাদ আর ফিরতে না পারে তার জন্যে বাংলাদেশে ও প্রবাসে আমাদের সবার সচেষ্ট হতে হবে। হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে দেশের সিস্টেমের এমন ক্ষতি কেউ না করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এরপর ইউনাইটেড ফর হিউম্যান রাইটস (UHR)এর মুখপাত্র মিস এশিয়া কুজমা ৩০টি মৌলিক মানবাধিকারের বিষয়ে বক্তব্য দেন এবং কীভাবে সেগুলো কার্যকর করা যেতে পারে তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই মানবাধিকারের বিষয়গুলো বোঝা এবং প্রয়োগ করা ভবিষ্যতে এ ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধের চাবিকাঠি। এই স্মরণসভা কেবল ভিক্টিমদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন নয়, বরং গণহত্যার ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মানবাধিকারের প্রতি সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে। অনুষ্ঠানটি আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে যে তারা জুলাই গণহত্যার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখবে এবং একটি ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করবে যেখানে এ ধরনের নৃশংসতার আর কোনো স্থান থাকবে না।