আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ক্লনডালকিন মসজিদ (আই সি সি বি), আয়ারল্যান্ড আয়োজিত ১৭তম তাফসিরুল কোরআন মাহফিল ২০২০ অনুষ্ঠিত হলো গতকাল ২৫শে ডিসেম্বর। এবারের মাহফিল ছিল ব্যাতিক্রমী, প্রতিবছর এই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে প্রত্যক্ষ কিন্তু কোভিড মহামারীর কারনে এবারের মাহফিল ছিল পরোক্ষ (ভার্চুয়াল), জুমের মাধ্যমে। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন জনাব মিজানুর রহমান জাকির। সভাপতিত্ব করেন জনাব আব্দুল মান্নান, সভাপতি, ক্লোনডালকিন মসজিদ, ডাবলিন এবং সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন জনাব শামসুল হক, সেক্রেটারি ক্লনডালকিন মসজিদ, ডাবলিন।
গতকাল শুক্রবার, বিকেল ২ ঘটিকায় অনুষ্ঠান শুরু হলে কোরআন তিলাওয়াত করেন জনাব আনামুল হক, এরপর ইসলামী নাশিদ ও গজল করেন, স্থানীয় শিল্পী আইয়ুব আলি এবং শিশু শিল্পী জারিফ। বাংলাদেশ থেকে জনাব মশিউর রহমান নাশিদ পরিবেশন করেন।
মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক সাইয়েদ কামাল উদ্দিন আব্দুল্লাহ জাফরী। জাফরি সাহেবের বক্তব্যের বিষয় ছিল “ইসলামী উম্মার ঐক্য”। তিনি তার বক্তব্যে কোরানের সূরা আল ইমরানের ১০৩ নাম্বার আয়াতের “ওয়া’তাসিমু বিহাবলিল্লাহি জামিয়াও ওয়ালা তাফাররাক্কু” সূত্রায়িত করে বলেন, এই আয়াতে ইতিবাচক আদেশ যেমন আছে, নিষেধাজ্ঞাও তেমনি আছে অর্থাৎ ইসলামের রজ্জু ধারণ করার আদেশ দেয়ার সাথে সাথে পৃথক না হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যার কারণে এই দুটো আদেশই বাধ্যতামূলক। তিনি ঐক্যবদ্ধ থাকার ব্যাপারে কোরানের সাথে যুক্ত থাকার কথা বলেন। তিনি বলেন, কোরানের সাথে যুক্ত থাকতে হলে কোরান পাঠ করতে হবে, অধ্যয়ন করতে হবে, চিন্তা করতে হবে, গবেষণা করতে হবে এবং এব্যাপারে অন্যান্য সূরা থেকে কয়েকটি আয়াত সূত্রায়িত করেন। তার বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে আহূত হয়ে তিনি জানান যে, সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ তিনি উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশের আলেম-উলামাদের সাথে ঐক্য, সম্প্রীতি এবং সদাচার নিয়ে আলোচনা করেছেন। ঐক্যের লক্ষ্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তিনি আশাবাদী ধীরে ধীরে বৃহত্তর ঐক্য অর্জিত হবে।
সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ রুহুল আমিন, গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট, ওয়ার্ল্ড মুসলিম হেরিটেজ রিসার্চ সেন্টার তার বক্তব্যের শিরোনাম ছিল, “কোরান আঁকড়ে ধরা”। তিনি তার মূল্যবান বক্তব্যে কোরানের তাতপর্য্য, শিক্ষা এবং কোরান থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন পরিচালনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
যুক্তরাজ্য থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন ডঃ আব্দুস সালাম আজাদি, পরিচালক কিউ এন এস একাডেমী, যুক্তরাজ্য। জনাব আজাদি সাহেব বিশ্বব্যাপী তার সাবলীল, ভদ্র ও কোমল ধারার বক্তব্যের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি সূরা আবাসার তাফসির পরিবেশন করেন। শুরুতে সুরা আবাসা নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে এই সূরার কয়েকটি শব্দের বিশ্লেষণ নিয়ে শিক্ষামূলক বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এই সূরার কয়েকটি শব্দ “ইয়াজ্জাক্কা” অর্থাৎ পরিশুদ্ধি, “ইয়াসয়া” অর্থাৎ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসা, “ইয়াখশা” অর্থাৎ ভীতি, “তালাহহা” অর্থাৎ অবহেলা, “জাকারা” অর্থাৎ স্মরণ, “মারফুআ” অর্থাৎ সুউন্নত এবং “মুতাহহারা” অর্থাৎ সুপবিত্র, এই সূরায় সন্নিবেশিত এধরনের শব্দের বিশ্লেষণ এবং জীবনের সাথে এর সাহ্নিধ্য নিয়ে সুগভীর আলোচনা উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্যের পর তিনি ক্লনডালকিন মসজিদের জন্য কিছু তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। প্রতিবারের মত অনেকেই তহবিলে তাদের সামর্থ এবং আগ্রহ অনুযায়ী দান করেন।
এবারের অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব ছিল তিনটি দেশ থেকে তিনজন বরেণ্য আলেমকে বক্তব্য প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো। জনাব মশিউর রহমান বাংলাদেশ থেকে নাশিদ শোনান বিশেষ করে তার সুন্নাতের উপর পরিবেশিত দ্বিতীয় নাশিদ অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী ছিল। শিশু শিল্পী জারিফের নাশিদ পরিবেশনা ছিল অনন্য। তহবিলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ দান করে একজন অতিথি জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ থেকেও তিনি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন এবং তাই অনুষ্ঠানটি বৈশ্বিক মাত্রা লাভ করে। এসকল বিশেষত্বের জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যম অর্থাৎ জুমের অবদান বৈশিষ্ট্যময়।
পরিশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব আব্দুল মান্নানের ধন্যবাদ প্রদান এবং সকল সুচিন্তিত বক্তব্য বিশেষ করে জনাব আজাদি সাহেবের ভিন্নধর্মী তাফসিরের প্রশংসা করেন এবং দোয়া পরিচালনার জন্য জনাব আজাদি সাহেবকে অনুরোধ করেন। জনাব আজাদি সাহেবের দোয়া পরিচালনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।