আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে একটি লরিতে পাচারের শিকার ৩৯ ভিয়েতনামির মৃত্যুর ঘটনার মামলার রায় ঘোষণা করেছে বেলজিয়ামের একটি আদলাত৷ রায়ে ভো ভ্যান হং নামে ৪৫ বছর বয়সি এক ভিয়েতনামি নাগরিককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং প্রায় দশ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়েছে৷
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাজ্যে আসা একটি লরিতে ৩৯ ভিয়েতনামি অভিবাসী মৃত্যুর মামলার রায় ঘোষণা করেছে বেলজিয়াম আদালত৷ ব্রাসেলসে থাকা পাচারকারীদের নেটওয়ার্কের নেতা হিসেবে ৪৫ বছর বয়সি ভিয়েতনামি নাগরিক ভো ভ্যান হংকে ১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে বেলজিয়ামের ব্রুজ শহরের আদালত৷
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘‘লরিতে থাকা ৩৯ জনের মধ্যে অন্তত ১৫ অভিবাসীকে যাত্রার আগের দিন ব্রাসেলসের সীমান্তবর্তী শহর আন্ডারলেচট থেকে নেয়া হয়েছিল৷ কারণ সেখানে পাচারকারী নেটওয়ার্কের একটি গোপন আস্তানা ছিল৷’’
লরিটি মূলত বেলজিয়ামের জিব্রুজ বন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করে৷ বেলজিয়াম থেকে যুক্তরাজ্যে এক রাত ভ্রমণের পরে, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের গ্রেসের শিল্প এলাকায় লরিটিতে ৩৯ অভিবাসীর নিথর দেহের সন্ধান মিলে৷ নিহতদের মধ্যে একত্রিশজন পুরুষ ও আটজন নারী ছিলেন৷ দুইজনের বয়স ছিলো মাত্র ১৫ বছর৷ অভিবাসীরা লরির ভেতরে বদ্ধ পরিবেশে তীব্র শ্বাসকষ্ট ও হাইপারথার্মিয়াতে মারা যান৷
‘অপরাধী সংগঠনের’ নেতা
মামলায় মোট ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছিল, যাদের সবাই প্রধানত ভিয়েতনামী বা ভিয়েতনামী বংশোদ্ভূত বেলজিয়ান নাগরিক৷ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্রুজ ফৌজদারি আদালতে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল৷ ভো ভ্যান হংকে বেলজিয়ামে একটি ‘অপরাধী সংগঠন’ এর নেতৃত্ব দেয়ার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷
তদন্তে উঠে আসে, তিনি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের মে মাসের মধ্যে মোট ১১৫ জন অভিবাসীকে অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন৷
এই মামলায় প্রদত্ত রায়ের অভিযোগগুলি গত ১৫ ডিসেম্বর ফেডারেল প্রসিকিউটর কার্যালয় থেকে দেয়া অভিযোগের সাথেও হুবহু মিলে যায়৷ এই অপরাধের জন্য তদন্তকারীদের আবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ সাজাই দিয়েছে আদালত৷ ভো ভ্যান হং’কে কারাদণ্ডের পাশপাশি প্রায় দশ লাখ ইউরো জরিমানা করা হয়েছে৷
বিচার চলাকালে, প্রসিকিউশন জনিয়েছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তি মূলত অপরাধ চক্রের বেলজিয়ান সেলের নেতা৷ অপরাধী চক্রের নেতা হিসেবে তার ভূমিকা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷
অভিযুক্ত ভো ভ্যান হং আদালতে দাবি করেন, তিনি পাচারকারি চক্রের শিকার একজন ভুক্তভোগী মাত্র৷
তবে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি ব্রাসেলসে ট্রানজিট পয়েন্টে থাকা অভিবাসীদের থাকার তত্ত্বাবধান করেছিলেন৷ যেমন, অভিবাসীদের সাথে থাকা মোবাইল কখন চালু বা বন্ধ করতে হবে সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক নির্দেশনাও দিচ্ছিলেন তিনি৷
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপে প্রবেশের উদ্দেশে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ১৮ হাজার ভিয়েতনামি পাচারকারীদেরকে টাকা দেন৷ যাদের মধ্যে অনেকেই ভিসা পেতে জনপ্রতি ৪০ হাজার ইউরো পর্যন্ত পরিশোধ করেন৷