ঈদুল ফিতর ( কোভিড-১৯) ও আইরিশ বাংলা পোষ্টের আত্মপ্রকাশ

ডাঃ “জিন্নুরাইন জায়গীরদার”- আইরিশ বাংলা পোষ্ট ডেস্কঃ বৈশ্বিক মহামারীতে সারা বিশ্বে যখন নথিভুক্ত তিন লক্ষ চল্লিশ হাজারের অধিক জীবন ঝরে গেছে, যে সময়ে মানব সভ্যতা থমকে গিয়ে গৃহবন্দী হয়ে আছে, যে সময়ে মুসলিম বিশ্ব এক মাস সংযমের পর আজ ব্যাতিক্রমী ও অভূতপূর্ব ঈদুল ফিতর উদযাপণ করতে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়ে “আইরিশ বাংলা পোস্ট” নামে একটি সংবাদ পত্রের আত্নপ্রকাশ কোন নূতন অঙ্গীকার নিয়ে আবীর্ভূত হচ্ছে কি না এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হওয়া অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিগত বছরগুলোতে আমরা হাজারো অনলাইন সংবাদপত্রের জন্ম প্রত্যক্ষ করেছি একই সাথে তাদের অধিকাংশকে অকালে ঝরে যেতেও দেখেছি।
একটি সংবাদপত্র সমাজ উন্নয়ন এবং বিবর্তনে কার্য্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে যদি সেই সংবাদপত্র তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিচ্যুত না হয়। সাধারণতঃ একটি সংবাদপত্র হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের সংবাদ সমূহের পঞ্জিকা এর মধ্যে রাজনৈতিক, অপরাধ, ব্যাবসা, বাণিজ্য, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সংযুক্ত থাকে। সংবাদের সাথে ছবি এবং ভিডিও এর ব্যাবহার সংবাদপত্রের মান বৃদ্ধি করে। ব্রেকিং নিউজ কিংবা সদ্যপ্রাপ্ত সংবাদ পাঠকদের জন্য আকর্ষনীয় হয়ে থাকে। মতামত কলাম যেমন সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাবন্ধিক কলাম সংযুক্ত করা হলে সমাজ অধিকতর অবহিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের কার্টুন ব্যাবহার করে এটিকে অধিকতর আকর্ষনীয় করা যেতে পারে। এছাড়া আবহাওয়া সংবাদ এবং পূর্বাভাস, উপদেশমূলক, ধর্মীয় কিংবা রসাত্নক কলাম একটি সংবাদপত্রকে পাঠক বান্ধব করে তুলতে পারে। গল্প, কবিতা, কৌতুক , পুষ্টি, খাবার এবং রন্ধন সম্পর্কীয় সংবাদ কিংবা প্রবন্ধ যুক্ত হলে সংবাদপত্রের মান উন্নত হয়। বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবহার করা গেলে সমাজে এই সংবাদপত্রের উপকারিতা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, একটি প্রকৃত সংবাদপত্র শুধুমাত্র পেশাজীবীদের মাধ্যমে সফল পরিচালনা সম্ভব। “আইরিশ বাংলা পোস্ট” সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায়ের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস। যারাই এই সকল কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছেন তারা সকলেই নিতান্ত শখ এবং নেশার বশেই এর সাথে যুক্ত হচ্ছেন। নিজেদের দৈনন্দিন কাজ ও পরিবারের দায়িত্ব পালনের পর কিছুটা সময় এই কাজে ব্যয় করে তারা অল্প বিস্তর সমাজের উপকারের উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। সংবাদ পত্রের সাথে কিছুটা সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে কিছুটা ভূমিকা রেখে নিজেরা কিছুটা পবিত্র সুখ ও আনন্দ লাভই মুখ্য। তাই অন্যান্য অনেক সংবাদপত্রের মত এর স্থায়িত্ব কতটুকু হবে তা নির্ভর করবে এর সাথে যুক্ত ব্যাক্তিদের ঐকান্তিকতা এবং পাঠক সমাজের সহযোগিতার উপর। তাই পাঠক সমাজকে সম্পৃক্ত করে তাদের ময়াতামতকে প্রাধান্য দেয়া হলে এই সংবাদপত্র মানোত্তীর্ন হবে এবং স্থায়িত্ব পাবে। সর্বোপরি সততা, নৈতিকতা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন এই কাজের একটি অপরিহার্য্য অংগ। পেশা হিসাবে সাংবাদিকতা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে, নীতিহীনতা এই পেশাকে কলুষিত করে। এই পেশায় ঝুঁকি আছে, সমালোচনা আর বিতর্ক এই পেশার নিত্যসঙ্গী। সাংবাদিকতা সর্বদাই সরব, এটাই হচ্ছে এই পেশার প্রধান গুণ এবং প্রধান ত্রুটিও বটে। নীরব সাংবাদিকতা বলে কিছুই নেই। পাঠক সমাজ এই সংবাদপত্রের অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ন কমিউনিটি কিংবা রাষ্ট্রীয় সংবাদ লিখে পাঠিয়ে “আইরিশ বাংলা পোস্টের” অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করুন। আপনাদের অংশগ্রহণ এই সংবাদপত্রের মানকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে সক্ষম। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংবাদপত্রের আর একটি গুরুত্ত্বপূর্ন অংগ। সমাজে গুরুত্ত্বপূর্ন যে কোন ধরনের সঠিক তথ্য সমৃদ্ধ অনুসন্ধানী রচনা পাঠকদের বিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই বৈশ্বিক মহামারীর লগ্নে বৈজ্ঞানিক রচনা আমাদের সকলকে সচেতন করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আপনারা সকলেই অবগত আছেন এই মুহূর্তে বিশ্ববাসী কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে একটি টিকা আবিষ্কারের দিকে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে অক্সফোর্ডের জেনার ইন্সটিটিউটের চ্যডোক্স ভ্যাক্সিন গবেষণায় অগ্রগতি অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ১.২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে প্রথম ৩ কোটি ভ্যাক্সিন ক্রয় করার আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছে। পরীক্ষায় সফল হলে অক্টোবরের কোন এক সময়ে এই ভ্যাক্সিন আলোর মুখ দেখতে পারে। যদি পরীক্ষা ব্যার্থ হয় তাহলে এস্ট্রা জেনেকার এই ৩ কোটি ভ্যাক্সিন ধ্বংস করে দিতে হতে পারে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না নামক কোম্পানির পরীক্ষাও সফলতার প্রান্তে বলে তারা দাবী করেছে। চীনের তানজীনের উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনের পরীক্ষা সাফল্যের দাবীও উত্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও বিশ্বে ১০০ টিরও অধিক প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন নিয়ে গবেষণা করছে। আশার আলো আছে, অন্ধকার ও আছে। আশার উপর ভিত্তি করেই মানুষ জীবন যাপন করে তাই হতাশ হলে চলবেনা।

সমগ্র ইউরোপ জুড়ে যখন কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণের দ্বারপ্রান্তে সেই সময় জন্মভূমি বাংলাদেশে এই মহামারী দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে, চীন আবিষ্কৃত সফল লক ডাউন পদ্ধতির প্রয়োগ ব্যর্থতায় পর্য্যবসিত হয়েছে । বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে গোটা সমাজ। যেখানে সুইডেন লক ডাউন পদ্ধতি গ্রহণ না করে মৃতদের মিছিল বাড়িয়েছে সেখানে বাংলাদেশে আংশিক লক ডাউন আর আংশিক খুলে দেয়া পদ্ধতি কি ফলাফল দেবে সেটা হিসাব সাপেক্ষ। ভারতের মত বিশাল দেশ লক ডাউন করেও এই রোগের বিস্তার কতটুকু রোধ করতে পেরেছে? চীন দেশে আইনের কঠোর প্রয়োগ ছিল। ইউরোপে মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা দর্শনীয় সাফল্য দিয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব সংকটে গভীর সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ জীবনের সলীল সমাধি হয়েছে। বাংলাদেশে অকালে আর প্রাণের প্রস্থান হোক আমরা চাইনা। আল্লাহ এই সময়ে একমাত্র ভরসা।
আইরিশ বাংলা পোস্ট” এবারের ঈদকে মহিমান্বিত করুক। বর্তমান সময়ে, কোভিড-১৯ বিশ্ব সভ্যতার একটি অনন্য সংকট। আজ মুসলিম ধর্মীয় জগতের একটি প্রধান উৎসব কিন্তু এই উৎসব নূতন মাত্রার। এই দুর্যোগ আর দুর্ভোগের মাঝে ঈদ এসেছে আনন্দের বার্তা নিয়ে। দিনে দিনে যুগে যুগে মুসলিমরা মসজিদে এবং লোকালয়ে জমায়েত হয়ে এই দিনে পার্থনা করে থাকেন, ঘর থেকে ঘরে, আত্নীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সাথে কুশল বিনিময়, দেখা সাক্ষাত, কোলাকুলি, মতবিনিময়, আড্ডা আর রকমারি খাবার খেয়ে উদযাপন করে থাকেন এই দিনে। এক মাস সংযমের পর এই উৎসব এবার গতানুগতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে নূতন আঙ্গিকে উৎসব পালনের সংবাদবহ হয়ে উঠেছে। আমরা আশা করি মুসলিম বিশ্ব এবার আনন্দ উৎসবের নূতন নূতন ধারা উদ্ভাবন করে বিশ্বকে উপহার দেবেন আর “আইরিশ বাংলা পোস্ট” “ব্রেকিং নিউজ” হিসাবে উৎসবের সংবাদ পরিবেশন করে একটি পাঠক বান্ধব সংবাদপত্র হয়ে দীর্ঘজীবি হবে। ঘরে থেকে নূতন মাত্রার শোকের আবেশময় আনন্দ উৎসব সফল হোক। সকলেই সুস্থ থাকুন। কোভিড-১৯ দ্রুত ধরাশায়ী হোক। আমিন।।

SHARE THIS ARTICLE