উত্তপ্ত বাংলাদেশঃ সারাদেশে সংঘর্ষে ১৪ পুলিশসহ নিহত ৯৫ জন (ভিডিও)

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে সংঘর্ষে অন্তত ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। আজ রোববার (০৪ আগস্ট) বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এর মধ্যে ঢাকায় সাতজন, মুন্সীগঞ্জে তিনজন, মাগুরায় চারজন, পাবনায় তিনজন, রংপুরে চারজন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ মোট তেইশজন, বরিশালে একজন, ভোলায় তিনজন নিহত, বগুড়ায় পাঁচজন, জয়পুরহাটে দুইজন, ফেনীতে আটজন, কিশোরগঞ্জে পাঁচজন, কুমিল্লায় দুইজন, নরসিংদীতে ছয় জন, সিলেটে পাঁচজন, লক্ষ্মীপুরে আটজন, শেরপুরে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন, কক্সবাজারে একজন ও ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একজন নিহত হয়েছেন।

vedio: ALJAZEERA

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জে সংঘর্ষে ১৩ পুলিশ সদস্যসহ ২২ জন নিহত হয়েছেন। সরকারের পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার একদফা আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী রেঞ্জের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (অপারেশন) মো. সাইফুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এনায়েতপুর থানা এখনো অরক্ষিত। পুলিশ সদস্যরা থানায় ঢুকতে পারছে না। গাছ দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে।

ঢাকা

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের নেতা এবং আরেকজন শিক্ষার্থী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন।

Vedio:TRT World

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিকাল থেকে টানা চার ঘণ্টা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ-যুবলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে শুরু হওয়া ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিকাল থেকেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোহাম্মদপুর সংঘর্ষে একজন কিশোর নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতে সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।নিহত কিশোর হলেন- ওমর ফারুক (১৬)। তিনি মোহাম্মদপুরের বোর্ড ঘাট এলাকার বাসিন্দা।

ফেনী

ফেনীতে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৮ জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোববার ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, আহত অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। প্রায় ৬০ জনের মতো আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন জেনারেল হাসপাতালে। নিহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

মাগুরা : মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

রোববার (০৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে শহরের পারনানন্দুয়ালী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। রাব্বী নিহতের বিষয়ে জেলা বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নরসিংদী

নরসিংদীতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

রংপুর

রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা আব্দুল জলিল দুজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও দুজন নিহতের তথ্য জানিয়েছেন।

নগরীর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা ও তার গাড়িচালক সংঘর্ষের সময় নিহত হন। তাদের লাশ সিটি করপোরেশন গেটের সামনে পড়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

পাবনা

পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন।

পাবনার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে জানা গেছে। সেখানে এখনো গোলাগুলি চলছে বলে জানা গেছে।

বগুড়া

বগুড়ায় সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে হাজারো জনতা। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত বগুড়া শহর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা। এখন পর্যন্ত সেখানে ৫ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।

ভোলা

ভোলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

মুন্সীগঞ্জ

মুন্সীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। সকাল পৌনে ১১টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ধামরাই

ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। তবে তিনি কখন এবং কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক আহমেদুল হক তিতাস বলেন, ‘দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কয়েকজন ওই যুবককে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসে। যুবকের পিঠে গুলিবিদ্ধের চিহ্ন দেখা গেছে। মরদেহ এখানে ফেলে সেই যুবকেরা চলে গেছে।’

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, সিলেটে ৫ জন, বরিশালে ১ জন, শেরপুরে ২ জন ও জয়পুরহাটে ১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

SHARE THIS ARTICLE