এই অবৈধ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সরকারের বিদায়ের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচন চায়। তবে তা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। সেজন্য সংসদ বিলুপ্ত ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এই অবৈধ সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না।

গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির ‘বরিশাল বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এ সমাবেশে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার হাজার হাজার তরুণ অংশ নেন। তাঁরা জাতীয় পতাকা, ফেস্টুন ও ক্যাপে সজ্জিত হয়ে দুপুর থেকে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। গান, কবিতার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির স্লোগানে মাতিয়ে রাখেন অনুষ্ঠান। একই দিনে বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকে আধাকিলোমিটার দূরে নগর ভবন ও শহীদ মিনারের সামনে যুবলীগ সমাবেশ করে। এ নিয়ে নগরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করলেও শেষ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সমাবেশে তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশটাকে বাঁচাতে হলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, তরুণদের সামনে এগিয়ে দিয়ে মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে হবে। তরুণরা জেগে উঠুন। ঐক্যবদ্ধ হোন। এ সরকার পরিবর্তন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকার বৈধ নয়। সংবিধানে সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। কিন্তু আজকে দুই প্রজন্ম ভোট দিয়ে পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনি। এই ভোট চোর সরকারকে এখন আর কেউ ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এদের সরানো ফরজ হয়ে গেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সুমন থেকে শুরু করে আমাদের ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। তাঁদের সন্তানরা এখনও অপেক্ষায় বাবা ফিরে আসবে। শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতেই ১৪ বছর ধরে নির্যাতন করছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার বলে, তাদের অধীনে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কয়েকদিন আগে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী একজন আলেমকে মারধর করেছে। সিইসি বলেছেন, তিনি (মেয়র প্রার্থী) কি ইন্তেকাল করেছেন? আসলে তিনি মানুষ না মরলে শান্তি পান না। এই হচ্ছে শেখ হাসিনার পছন্দের নির্বাচন কমিশন। এরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের কথা বলে! কিন্তু কোন সংবিধান? সংবিধানে তো ভোট দেওয়ার অধিকার আছে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার নিয়ম আছে। কিন্তু এরা চুরি-লুট ও টাকা পাচারের জন্য দিনের ভোট রাতে করে জনপ্রতিনিধি সংসদে পাঠায়। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে বলে, ভোট হয়ে গেছে। কারণ তারাও জানে, জনমতের সঠিক প্রতিফলন হলে ১০টি আসনও পাবে না।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজ সরকার বিদ্যুতের কথা বলে। কিন্তু বিদ্যুৎ নেই। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রকল্পের নামে টাকা পাচার করা। আজকে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা আরাম-আয়েশ করছে। এরা কাগজকলম সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। এরা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, এ অবস্থা চলতেই থাকবে।’

সমাবেশে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ভোটাধিকার ফেরত ও গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারে উপস্থিত তরুণ-যুবকদের চলমান আন্দোলনে শরিক হতে শপথবাক্য পাঠ করান। এ সময় তিনি বলেন, ‘এই সরকারের আমলে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার ভোট দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বললে গুম-খুন করা হচ্ছে।’

ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, মহানগর বিএনপির সভাপতি মনিরুল ইসলাম খান ফারুক প্রমুখ।

শান্তি সমাবেশ করল যুবলীগ

বরিশালে বিএনপির ‘বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ’ চলাকালে গতকাল শনিবার এক কিলোমিটার দূরে নগর ভবনের সামনে শান্তি সমাবেশ করেছে জেলা ও মহানগর যুবলীগ। সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা এতে অংশ নেন।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপির অনুসারী মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজামের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম, জহিরউদ্দিন খসরু, বরিশাল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করীম শাহীন, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক এ এম মেজবাহউদ্দিন জুয়েল প্রমুখ।

SHARE THIS ARTICLE