
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ
জো বাইডেনঃ জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র, জো বাইডেন হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দুই মেয়াদে কাজ করেন। ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ার থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জন্ম: বাইডেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে। স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারে তাঁর বেড়ে ওঠা। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।
বাবা-মা: বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তাঁর মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।
শিক্ষা: বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।
পরিবার: সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন ১৯৬৬ সালের নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। নিলিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। সিনেটর হওয়ার পর তাঁর লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। পরে ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন।’ ৭৩ থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৮৭ সালে একবার ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাইমারিতে লড়ার ঘোষণা দেন বাইডেন। তবে অসুস্থতার কারণে ১৯৮৮ সালে প্রাইমারির শুরুতে ক্ষান্ত দেন তিনি। ২০০৭ সালে আবার প্রেসিডেন্ট পদে দলীয় প্রাইমারিতে নামেন। সেই যাত্রায় তিনি বারাক ওবামা আর হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালে ওবামা তাঁকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০: ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক ভিডিওবার্তায় বাইডেন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রাইমারিতে লড়াইয়ের আভাস দেন। দলীয় প্রাইমারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কমলা হ্যারিস (যিনি তাঁর বর্তমান রানিংমেট), ভারমন্টের সিনেটর উদারপন্থী বার্নি স্যান্ডার্স, ম্যাসাচুসেটসের এলিজাবেথ ওয়ারেন, পেটি বুটেগিগ, অ্যামি ক্লুবেচারকে পেছনে ফেলে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন। জাতীয় পর্যায়ে বেশিরভাগ জনমত জরিপে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পঃ

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে ছিলেন ব্যবসায়ী ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। নিউইয়র্কের কুইন্সে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা।
জন্ম: ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন, নিউইয়র্কের জ্যামাইকা হসপিটাল মেডিক্যাল সেন্টার।
বাবা-মা: বাবা আবাসন ব্যবসায়ী ফ্রেডরিক ক্রাইস্ট ট্রাম্প ও মা স্কটিশ বংশোদ্ভূত ম্যারি অ্যান ম্যাকলিউড ট্রাম্প। ট্রাম্পের দাদা ছিলেন জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন।
শিক্ষা: ট্রাম্প নিউইয়র্ক মিলিটারি একাডেমিতে স্কুলজীবন শেষে প্রথমে ফোর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দুবছর পর সেখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির হোয়ার্টন স্কুল অব ফিন্যান্স থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
পরিবার: ট্রাম্পের প্রথম স্ত্রী ইভানা ট্রাম্প (১৯৭৭-১৯৯২)। ইভানার ঘরে ট্রাম্পের তিন সন্তান ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, ইভানকা ট্রাম্প ও এরিক রয়েছেন। ইভানার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন মারলা ম্যাপলসকে (১৯৯৩-১৯৯৯)। মারলার ঘরে রয়েছে এক সন্তান টিফানি।২০০৫ সালে ট্রাম্প তাঁর চেয়ে প্রায় ২৩ বছরের ছোট স্লোভেনীয় বংশোদ্ভূত মেলানিয়াকে বিয়ে করেন।
রাজনৈতিক জীবন: রাজনীতিতে আসার আগে আবাসন ব্যবসায়ী ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি ছিল ট্রাম্পের। তবে কয়েকবার রাজনৈতিক অবস্থান বদল করেছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে তিনি নিবন্ধিত রিপাবলিকান ছিলেন। দুই বছর পর ১৯৮৯ সালে স্বতন্ত্র হিসেবে এবং ২০০১ সালে তিনি ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিবন্ধিত হন। তবে এর আগে ২০০০ সালে রিফর্ম পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেন। ২০০৯ সালে আবার রিপাবলিকান শিবিরে ফিরে আসেন। এর মধ্যেও ২০১১ সালে স্বতন্ত্র হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছিলেন। চূড়ান্তভাবে তিনি ২০১২ সালে রিপাবলিকান দলে ফিরে আসেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিট রমনির প্রতি সমর্থন জানান।
নির্বাচন ও প্রেসিডেন্ট: ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনেকটা আকস্মিকভাবে আমেরিকার রাজনীতিতে ট্রাম্পের আবির্ভাব। রিপাবলিকান পার্টির প্রাইমারিতে টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ সরে দাঁড়ালে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের চূড়ান্ত মনোনয়নের পথ খুলে যায়। পরে নির্বাচনে সব জনমত জরিপ ও গণমাধ্যমের হিসাব-নিকাশকে ভুল প্রমাণ করে ডেমোক্র্যাটপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পপুলার ভোটে তিনি হিলারি থেকে প্রায় ২৯ লাখ ভোটে পিছিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল কলেজের জটিল হিসাব তাঁর জন্য হোয়াইট হাউসের দরজা খুলে দেয়। এবারও ট্রাম্প রিপাবলিকান দলের প্রার্থী।