কর্কের ঘটনার প্রতি তীব্র নিন্দা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার আহ্বান

ডা. মুসাব্বির হোসাইন| কর্ক, আয়ারল্যান্ড:গত ১১ মে ২০২৫ তারিখে কর্ক লেডিজ ক্লাবে সংগঠিত ন্যাক্কার জনক ঘটনার ধিক্কার জানানোর ভাষাও আমি হারিয়ে ফেলেছি। বিষয়টি যদি কেবল মাত্র মহিলাদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতো তার একটা ব্যাখ্যা হয়তো দাঁড় করানো যেতো কিন্তু যখন একজন পুরুষ ঘটনাটার সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি প্রশমন/কন্ট্রোল করার চেষ্টা না করে নিজেও ঘটনার একটা অংশ (পার্ট) হয়ে ইনভলভ হয়ে যান তখন এ ঘটনাটি আর একটি সাধারণ ঘটনা থাকে না। আমরা বাংলাদেশীরা কখনো কলহ কিংবা ঝগড়াঝাটি পছন্দ করি না। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা আমাদের মান সম্মানের জন্য বিশেষত আয়ারল্যান্ডের মত দেশে যেখানে মাল্টিন্যাশনাল এবং মাল্টিকালচারের জনগণের বসবাস সে ধরনের সোসাইটিতে দারুন এফেক্ট পড়বে। আমি এই ঘটনার প্রতি তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।
এটি শুধুমাত্র নারী অবমাননা নয়—বরং মানবতা ও নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন।

আমরা সবাই সামাজিক জীব। আর সেই সামাজিক দায়বদ্ধতার স্থান হতে আমি আজ কিছু বিষয় উপস্থাপন করছি।

একজন মানুষের মূল্যায়ন কখনো বাহ্যিক পোষাক বা পরিধেয় কাপড়ের উপর নির্ভর করে না। বরং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে একজন মানুষের ইনার এডুকেশন বা অন্তর্গত শিক্ষা-দীক্ষা ও কর্মক্ষেত্র এবং সামাজিক আচার-আচরণ, কর্ম দক্ষতা, দায়িত্ব বোধ এবং ধৈর্য ও সহনশীলতার উপর। প্রকৃত শিক্ষা একজন মানুষের অন্তর্গত বা আভ্যন্তরিণ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আর এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, একজন মানুষের অর্জিত প্রকৃত শিক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার আচার ব্যবহার এবং দৈনন্দিন কার্যকলাপ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্য দিয়ে।

এ কথা সর্বজন বিদীত যে, বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশ-এর ইমেজ সংকট রয়েছে। আর এই ইমেজ সংকটের মূল কারণ সমূহের মধ্যে অন্যতম কারণ হলোঃ
১) পড়াশুনোয় পশ্চাৎপদতা।
২) কর্মক্ষেত্রে নিম্ন মানের এবং কম পারিশ্রমিকে কাজ করা(মধ্যপ্রাচ্য)
৩) অসংযত আচরণ এবং কলহ প্রিয়তা।

কিন্তু এই ইমেজ ভেংগে আমাদের দেশ সম্পর্কে বিশ্বকে নতুন বার্তা দেয়া আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব।
সমাজের মধ্যে আমরা আল্লাহর রহমতে অগ্রগামী জন সংখ্যা। শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে আমরা সবাই অগ্রগন্য ও সুবিধাজনক অবস্থানে অবস্থান করছি।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আয়ারল্যান্ড পৃথিবীর বুকে একটি উন্নত দেশ যে তার স্বকীয়তা এবং শিক্ষা দীক্ষায় বিশ্বে উচ্চ সম্মানের স্থানে অধিষ্ঠিত।

এমতাবস্থায় সমাজের প্রতি এবং বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতি আমার সবারই কম-বেশি দায়বদ্ধতা আছে। আর তাই আয়ারল্যান্ড এর মতো মাক্টি ন্যাশনাল এবং মাল্টি কালচারের দেশে বাংলাদেশে সম্মান উচ্চতর আসনে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার আপনার, আমাদের সবার।

লেডিজ ক্লাবের ঘটনায় যারা সরাসরি ইনভলভ ছিলেন তারা সবাই সামাজিক ভাবে সম্মানিত হলেও সেই দিন ওনারা সবাই দায়িত্ব জ্ঞান হীন এবং অপরিনামদর্শী আচরণ করেছেন। এতে করে একদিকে উনারা যেমন ওনাদের সম্মান খুইয়েছেন তেমনি অপরপক্ষে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তির অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে।

আমি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
বিপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি ট্যাকেল করার মধ্যেই রয়েছে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, স্বাতন্ত্র্যবোধ, আত্মমর্যাদা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, সামাজিক মূল্যবোধ ও অন্তরের প্রকৃত সৌন্দয্য।

লেখক: ডাক্তার মুসাব্বির হোসাইন, কর্ক, আয়ারল্যান্ড প্রবাসী।

SHARE THIS ARTICLE