
আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আফগান প্রেসিডেন্টের সর্বাত্মক প্রতিরোধ ঘোষণার পর পরই তালেবান যোদ্ধাদের কাবুলের আরো কাছে পৌঁছে যাওয়ার খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। লগার প্রদেশের আইনপ্রণেতা হোদা আহমাদির বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরের শহর আসিয়াবে পৌঁছেছে তালেবান সশস্ত্র যোদ্ধারা। শুধু আসিয়াব নয়, কাবুলের চারপাশ কার্যত ঘিরে ফেলেছে তারা। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি আর বেশিদিন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারবেন না।
চলমান সংঘাতের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এতে তিনি তালেবানদের প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন। আগে থেকেই ধারণ করা ভিডিওতে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী পুনর্গঠনই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে তার সরকার। সেই সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানদের লড়াইয়ের কারণে শিশু, নারীসহ যেসব মানুষ ঘরবাড়িছাড়া হয়েছে তাদের সহযোগিতার উপায় খোঁজা হচ্ছে। এজন্য আন্তর্জাতিক মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে আফগান সরকারের আলোচনা চলছে বলে জানান আফগান প্রেসিডেন্ট। তিনি আশ্বাস দেন আর যেন সহিংসতা না বাড়ে, কেউ যেন বাস্তুচ্যুত না হয় সে চেষ্টা চলছে। তবে এ আশ্বাসের ব্যাপারে তার সরকারের উদ্যোগ কী তা তিনি জানাননি। পূর্ব রেকর্ডকৃত বক্তব্যটি প্রচার করে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। এর আগে সর্বশেষ মাজার ই শরিফে প্রকাশ্যে দেখা গেছে আফগান প্রেসিডেন্টকে। শনিবার দিনভর মাজার ই শরিফকে লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালায় তালেবান যোদ্ধারা।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ আর ধরে রাখতে পারবে না সরকার। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আফগানিস্তানের অধ্যাপক হারুন রাহিমি আফগান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, শুধু আশরাফ গনি সরকারের থাকা না থাকার বিষয় নয়, এটা ক্ষমতার রক্তপাতহীন পরিবর্তনের বিষয়। তার দৃষ্টিতে কাবুলের পতন ঘটলে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের সুযোগ আর থাকবে না। সমঝোতার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া অথবা তালেবানদের সঙ্গে আংশিক ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে এ সংঘাত বন্ধে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নেয়া দরকার। শান্তি অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ভিক্টোরিয়া ফন্টানও মনে করেন বর্তমান সরকারের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়াই সমাধানের পথ তৈরি করবে। তার দৃষ্টিতে জাতির উদ্দেশে আশরাফ গনির দেয়া বক্তব্যে সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা বলতে ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ উপায় কী হতে পারে হয়তো তা বুঝিয়েছেন।
এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়া এলাকাগুলোতে নারীদের মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। আফগানিস্তানের নারীদের অধিকার হরণের যে তথ্য আসছে তা ভয়ংকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা ভয়াবহ এবং মন ভেঙে দেয়ার মতো।
কাবুলের পতন ঘটলেও তালেবান নিয়ন্ত্রিত দখলদার সরকারকে স্বীকৃতি না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, জার্মানি, কাতার ও তুরস্ক। সরাসরি তালেবানদের নাম উল্লেখ না করে দেশগুলোর পক্ষে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। এতে আফগান সরকার ও তালেবানদের দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে আরো দুটি প্রদেশ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে তালেবানরা। শনিবার সকালে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকতিকা প্রদেশের শারানা বেদখল হয়ে যায়। প্রদেশের আইনপ্রণেতা খালিদ আসাদ বার্তা সংস্থা এপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রদেশটির গোয়েন্দা দপ্তর, গভর্নর অফিস, পুলিশ কার্যালয় ও কারাগার সবই এখন তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে। তিনি জানান, তীব্র লড়াইয়ের পর হার মানে নিরাপত্তা বাহিনী। পরে সমঝোতার মাধ্যমে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন গভর্নরসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই দিন পতন হয়েছে কুনার প্রদেশের রাজধানী আসাদাবাদের।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে ওই এলাকার রাস্তায় তালেবানদের পতাকা হাতে মানুষদের চলতে দেখা গেছে। তবে ২৭ তালেবান যোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সরকারি বাহিনী। পুলিশের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মায়মানার মুখপাত্র আব্দুল করিম তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে জানান, পাল্টা হামলায় ২৭ তালেবান সশস্ত্র যোদ্ধা নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছে। তার দাবি, হতাহতদের মধ্যে তালেবান সেনা কর্মকর্তা মোল্লা শোয়েব রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তানের দুই-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ এখন তালেবানদের হাতে।
অনিশ্চয়তা আর নিরাপত্তা সংকটে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশ ছাড়তে ভিড় জমিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। বিবিসির সাংবাদিকের টুইট করা ছবিতে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছে। দেশত্যাগ প্রসঙ্গে তারা বলে, এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। সন্তানদের জন্য বাঁচতেই অনন্যোপায় হয়ে দেশান্তরি হতে হচ্ছে।