১৭ই অক্টোবর ২০২০, শনিবার; আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ রাজনীতি এমন এক খেলা যেখানে রাতারাতি ক্ষমতা হারিয়ে কেউ যায় কারাগারে আর কারাগার থেকে উঠে এসে কেউ হয়ে উঠেন ক্ষমতার রাজা। কিরগিস্তানের নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সাদির জাপারভ এমনি এক সময়ের সন্তান যিনি ১১ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে অন্তরীন থাকা অবস্থায় সমর্থকরা গত ১১ই অক্টোবর রাস্তায় আন্দোলন করে তাকে জেলমুক্ত করে ক্ষমতায় বসায়। আন্দোলনকারীরা তাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েই ক্ষান্ত হন নাই সংসদের সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের পদেও তিনি অভিষিক্ত হলেন। গতকাল ১৬ই অক্টোবর রাষ্ট্রীয় ভবনে সমবেত আইনপ্রনেতাদের সাথে আলাপকালে সাদির জ্যাপারভ তাঁর এই ক্ষমতাগ্রহনকে “শান্তিপূর্ণ ও আইনী ক্ষমতা হস্তান্তর” বলে বর্ণনা করেন।
জাপারভ সমর্থকদের হুমকির মুখে গতকাল একই স্থানে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট সুরনবাই জিনবেকভ বলেছিলেন, রক্তপাত এড়ানোর লক্ষ্যেই তিনি পদত্যাগ করছেন। জিনবেকভ বলেছিলেন, “আমি ক্ষমতা আঁকড়ে নেই; আমি রাষ্ট্রপতি হিসাবে কিরগিস্তানের ইতিহাসে রক্তপাতকারী ও গুলি চালানোকারী হিসাবে নাম লিখাতে চাইনা। আমি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেছিলেন: “আমার জন্য, কিরগিস্তানের শান্তি, দেশের অখণ্ডতা, মানুষের ঐক্য এবং সমাজে শান্তি অন্য যে কোনও কিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক কর্মী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন রক্ষায় অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য। এক্ষেত্রে রক্ত ঝরবে। এটা অবশ্যম্ভাবী। আমি উভয় পক্ষকেই অনুরোধ করছি যেন উস্কানিতে না ডুবে যান।”
জিনবেকভ কিরগিস্তানের তৃতীয় এবং সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট যাকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগে বাধ্য করা হলো। অস্কার আকায়েভ এবং কুরমানবেক বাকিয়েভকে যথাক্রমে ২০০৫ ও ২০১০ সালে জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এই রাজপথের আন্দোলন আর শক্তি প্রদর্শন কতটুকু জনতার সমর্থন আর কতটুকু দলীয় সমর্থকদের রোষানল তা বোঝার জন্য একটি নিরপক্ষে নির্বাচননের গত্যন্তর নাই। অতীতে পদত্যাগী প্রেসিডেন্টদের মত জিনবেকভের কি পরিণতি হয় সেটাও সময়ের ব্যাপার। অতীতের পদত্যাগী প্রেসিডেন্টকে হয় দেশত্যাগ করতে হয়েছিলো নয়ত কারাবরণ করতে হয়েছিলো।
এই সাদির জাপারভ, অপহরণের অভিযোগে ১১ বছরের জেল খাটছিলেন। আন্দোলনরত সমর্থকরা ১০ই অক্টোবর তাকে জেলমুক্ত করে ক্ষমতায় আসীন করতে আইন প্রণেতাদের অনেকটাই বাধ্য করেছেন বলে অনুমিত হয়। জাপারভ অবশ্য, সংবিধান অনুসারে ১০ই জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। বিধি অনুসারে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে এই দায়িত্ব সংসদের স্পিকার কানাত ইসাইভের নিকট ন্যাস্ত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু জাপারভ সমর্থকরা ইসাইভকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিতে নারাজ ছিলেন এমনকি তাকে বন্দী করার দাবী উত্থাপিত হয়েছিলো। এমতাবস্থায় স্পিকার নিজে দ্রুত সরে দাঁড়ানোর পক্ষে মত প্রকাশ করলে স্বভাবতই তা প্রধানমন্ত্রীর উপর অর্পিত হয়। এখন দেখার বিষয় জাপারভ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না? বিধি অনুসারী অন্তর্বতী দায়িত্ব থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেন না।
কিরগিস্তানের সাম্প্রতিক আন্দোলন চীনকে চিন্তাযুক্ত করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কিরগিস্তানের শিল্পায়নে চীন বিশাল বিনিয়োগ করেছে। আন্দোলনে চীন বিরোধিতা যুক্ত আছে বলে মনে করা হলেও প্রভাবশালী রাইমবেক মেট্রিয়ানভ আন্দোলনে ইন্ধন যুগিয়েছেন বলে সন্দেহ আছে একই সাথে সাদির জাপারভের সাথে মেট্রিয়ানভের সম্পর্ক এই রাজনীতিতে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে বলেও মনে করা হয়।
সংবাদসূত্রঃ দা গার্ডিয়ান, আর টি ই, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট