কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। (ভিডিও)

1

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকেঃ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে এবারো রেকর্ড পরিমাণ অর্থ দান করা হয়েছে। গতকাল মসজিদের দান সিন্দুক খুলে পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা। যা দান সিন্দুক থেকে পাওয়া দানের হিসাবে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সকাল ৯টায় মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টাকা গণনা শেষে এই হিসাব পাওয়া যায়।

ভিডিওঃ ঢাকাপোষ্ট

মোট ২২০ জন মানুষ টানা সাড়ে ৯ ঘণ্টা সময় ধরে এ টাকা গণনা করেন। বিপুল পরিমাণ দানের এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে বেশকিছু স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। এর আগে সর্বশেষ গত ১৯শে জুন দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

পাগলা মসজিদের সিন্দুকে পাওয়া গেল ২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা | প্রথম আলো

এ ছাড়া চলতি বছরের ২৩শে জানুয়ারি দান সিন্দুক খুলে সর্বোচ্চ ২ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাধারণত ৩ মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। কিন্তু, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দান সিন্দুক খোলার সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। এবার ৪ মাস ১৭ দিন পর এসব দান সিন্দুক খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। তবে এবার ৮টি দান সিন্দুকের মধ্যে ৬টি দান সিন্দুকই খোলার অন্তত ৭দিন আগেই পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় সেগুলোতে দানগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। দান সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। টাকা গণনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদ মাদ্রাসার ১২৫ জন ছাত্র-শিক্ষক, রূপালী ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১০ জন আনসার এবং ৩৫ জন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ২২০ জন মানুষ অংশ নেন।

পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা | প্রথম আলো

পাগলা মসজিদের মালামাল সংরক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মসজিদের দান সিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। এ সবের মধ্যে রয়েছে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ফল-ফলাদি, কোরআন শরীফ ইত্যাদি। নিলামঘরে প্রতিদিন এসব নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়।

কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্চা পূর্ণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউনের সময়ে মসজিদে মুসল্লিদের চলাচল সীমিত করে দেয়া হয় এবং মহিলাদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়া হয়। তখনকার পরিস্থিতিতেও মসজিদটিতে মানুষ দান অব্যাহত রাখেন।

কিশোরগঞ্জের মসজিদের দানবাক্সে দেড় কোটি টাকা

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে জমা পড়েছে। ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, পাগলা মসজিদকে একটি অন্যতম আধুনিক ইসলামিক স্থাপত্য হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ জমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল।

পাগলা মসজিদের সিন্দুকে ১১১ দিনে মানুষের দান দেড় কোটি টাকা | প্রথম আলো

সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবন। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।

SHARE THIS ARTICLE