আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জলভূমিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে সরকার কিশোরগঞ্জের হাওরের ওপর দিয়ে ১১ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এই উদ্যোগটি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে পর্যটনকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পটি হাওর পরিস্থিতি সহনশীল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে হাওর এলাকায় সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে কৃষি উৎপাদন ও বিপণনে সহায়তা করবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত হাওর এলাকায় এলিভেটেড সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পটি আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা এবং নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলা উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আসবে।
প্রকল্পের আওতায় ১০ দশমিক ৮ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়কের পাশাপাশি সব মৌসুমে ব্যবহার উপযোগী ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক ও ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া পানিতে তলিয়ে যাবে এমন ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার উপজেলা ও ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক এবং ৫৭টি সেতু ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রস্তাবিত এলিভেটেড সড়কের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রস্তাবিত এলিভেটেড রোডে যানবাহন চলাচল সম্ভব হবে।
প্রতিবছর বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাওর এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনাকারী দলের সদস্য হাদিউজ্জামান বলেন, রাস্তার অভাবের কারণে শুষ্ক মৌসুমেও মানুষ যোগাযোগের সমস্যার সম্মুখীন হয়, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওর এলাকায় ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়নের ফলে সারা বছর পণ্য, কৃষি পণ্য এবং মৎস্য সম্পদ দ্রুত ও সহজে পরিবহনের সুবিধা হবে। ফলে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। তা ছাড়া পর্যটকদের বিস্তীর্ণ হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দিতে এলিভেটেড রোডের দুপাশে অন্তত ৬ থেকে ৭টি দ্বিতল টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।
এলিভেটেড রোড প্রকল্পসহ মোট ১০টি প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। অন্যগুলো হলো, চীনের অর্থায়নে ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার ডিজিটাল সংযোগ প্রকল্প। এটি বেইজিংয়ের অর্থায়নে বাস্তবায়িত ২৭টি প্রকল্পের একটি।
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় প্রকল্পগুলোর জন্য ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণের আশ্বাস দেয় চীন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল দেশের প্রতিটি এলাকায় সর্বাধুনিক আইসিটি অবকাঠামো দিয়ে সজ্জিত করা, প্রায় সব সরকারি সেবাকে ডিজিটাল করা এবং মাঠ পর্যায়ে আইসিটির ব্যবহার বৃদ্ধি করা।
প্রকল্পের অধীনে সরকার ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড এবং ব্যবহারকারী সংযোগ, ১০ হাজার ডিজিটাল ল্যাব, ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব, একটি কেন্দ্রীয় ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম, আইটি অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা স্থাপন করা হবে।