কেমন হবে জান্নাতের অধিবাসীদের কবরের জীবন

নুশরা মুহসিনঃ যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলেঃ হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় দুনিয়াতে প্রেরণ করুন। যাতে আমি ভালো কাজ করতে পারি, যা আমি আগে করিনি। কখনোই নয়, এ তো তার একটি উক্তি মাত্র। তাদের সামনে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আছে বারজাখ।(সূরা আল মু’মিনুনঃ ৯৯-১০০) 

মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবসের পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়কে বলা হয় বারযাখ। পৃথিবীর তুলনায় বারযাখ বা কবরের জীবন অনেক বড় এবং বিস্তৃত। মাতৃগর্ভের চেয়ে পৃথিবী যেমন বড় বা বিস্তৃত বারযাখের জীবনও পৃথিবীর তুলনায় এতটাই বিস্তৃত। মৃত্যুর সাথে সাথেই এ জীবন শুরু হয়।  

বিশ্বাসী ব্যক্তির মৃত্যুর সময় আসমান থেকে শুভ্র এবং সূর্যের মতো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করবেন। তারপর তারা বিশ্বাসী ব্যক্তির দৃষ্টির সীমানা পর্যন্ত  বসে যাবেন। এই ফেরেশতাদের সাথে থাকবে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা তার মাথার পাশে বসে বলতে থাকবে- হে শান্তিপ্রিয় পবিত্র আত্মা! আল্লাহর ক্ষমা এবং সন্তুষ্টির দিকে বের হয়ে এসো। কলসির মুখ থেকে পানি যেভাবে খুব সহজে বের হয়ে আসে মৃত্যুর ফেরেশতার ঘোষণার পর বিশ্বাসী আত্মাও শরীর থেকে খুব সহজে সেভাবেই বের হয়ে আসবে। মালাকুল মাওত বা মৃত্যুর ফেরেশতা তা গ্রহণ করে চোখের পলক পরিমাণ সময়ও  নিজ হাতে না রেখে তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন ও সুগন্ধির মধ্যে রেখে দিবেন।  তা থেকে পৃথিবীতে পাওয়া যায় এমন সর্বোৎকৃষ্ট মিশকের সুগন্ধি বের হতে থাকে।

 তারপর বিশ্বাসী আত্মাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে যাবেন; ফেরেশতারা তার জন্য আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করবেন। আসমানের দরজার রক্ষক জিজ্ঞাসা করবেন, এ আত্মা কি পাপাত্মা নাকি পূণ্যাত্মা? পূণ্য্যাত্মা হওয়ায় তাঁর জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হবে। তারপর সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছানো পর্যন্ত প্রত্যেক আকাশের নৈকট্যলাভকারী ফেরেশতারা তার অনুসরণ করতে থাকবে। সেখানে পৌঁছানোর পর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, আমার এ বান্দার ঠিকানা ইল্লিয়্যিনে লিখে দাও। তারপর তাকে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আকাশ থেকে ফিরে বিশ্বাসী ব্যক্তির আত্মা তার শরীরে এসে প্রবেশ করবে। তারপর সে দেখবে তার সঙ্গীরা তাকে কবরে দাফন করে রেখে চলে যাচ্ছে।  সে তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে থাকবে। আওয়াজ শুনে সে বুঝবে ধীরে ধীরে তার সাথীরা দূরে চলে যাচ্ছে। ঠিক তখনই তার সামনে দু’জন নীল চোখ বিশিষ্ট কৃষ্ণকায় ফেরেশতা এসে উপস্থিত হবেন। তাদেরকে বলা হয় মুনকার ও নাকির। 

তাকে বসিয়ে ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার রব কে?
সে বলবে: আমার রব আল্লাহ।
তারা বলবে: তোমার দ্বীন কী?
বিশ্বাসী ব্যক্তি বলবে: আমার দ্বীন ইসলাম।
তারপর মুনকার ও নাকির তাকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি পৃথিবীতে কী বলতে?

সে বলবে: তিনিতো আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। 

তখন আকাশ হতে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করবেন যে, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে জান্নাতের পোশাক পরিধান করিয়ে দাও। তারপর তার জন্য জান্নাতের একটি দরজা ও জাহান্নামের একটি দরজা খুলে দিয়ে বলা হবে: তুমি যদি আল্লাহর নাফরমানী করতে তাহলে তোমার ঠিকানা হতো জাহান্নামে; কিন্তু এর পরিবর্তে তোমাকে জান্নাত দিয়েছেন। তখন জান্নাত থেকে বিশ্বাসী ব্যক্তির কবরে সুগন্ধিযুক্ত হাওয়া আসতে থাকবে এবং তার জন্য তার কবরকে প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। 

তারপর বিশ্বাসী আত্মার কাছে সুদর্শন চেহারার সুন্দর পোশাক পরা ও সুঘ্রাণ যুক্ত এক ব্যক্তি আসবে- সে বলবেঃ সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করবে, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। বিশ্বাসী আত্মা বলবেঃ তুমি কে, তোমার চেহারা এমন ব্যক্তির মতো  যে শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে।  সুদর্শন ব্যক্তিটি বলবেঃ আমি তোমার নেক আমল।

বিশ্বাসী আত্মা তখন ফরিয়াদ করবে-

“হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি।”

তারপর মৃত ব্যক্তি সেই কাংক্ষিত মূহুর্তের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবে… যে মূহুর্তকে পাওয়ার জন্য সে এতদিন তার প্রভুর কাছে ফরিয়াদ করেছিলো, যে মূহুর্তকে পাওয়ার জন্য সে পৃথিবীতে আকুল হয়ে অপেক্ষায় ছিল। এক সময় বিশ্বাসী ব্যক্তির অপেক্ষার পালা শেষ হবে এবং নতুনভাবে তার যাত্রা শুরু হবে। 

বিশ্বাসী ব্যক্তিদেরকে মৃত্যুর সময় এবং বারযাখের জীবনে ফেরেশতারা যেভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছে সেভাবেই হাশরের শুরু থেকে জান্নাতে পৌঁছা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাদের সাথেই থাকবে। এমনকি এ পৃথিবীতেও তারা বিশ্বাসীদের সঙ্গী হিসেবেই আছে!  

সূত্রঃ আল কুরআন এবং আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া

SHARE THIS ARTICLE