আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ একনাগাড়ে তিনদিন করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য প্রতিদিনের নতুন বৈশ্বিক রেকর্ড স্থাপন করেছে ভারত। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের এক তথ্যে প্রকাশ যে একদিনে আনুষ্ঠানিক সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩,৪৬,৭৮৬ জন। মহামারিকালে ভারতে সর্বমোট আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন ১ কোটি ৬৬ লক্ষ, সর্বমোট পরিসংখ্যানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারতের স্থান দ্বিতীয়। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড ২৯৭,৪৩০ প্রথমবারের মতো ছাড়িয়ে যায় ভারত, সেদিন ভারতে নূতন করে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৩১৫,০০০ জন। সেই থেকে প্রতিদিনই বাড়তে থাকে সংক্রমণ, যার ফলে গতকাল একদিনে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ,৪৬,৭৮৬ জনে। মৃত্যুও বাড়ছে একই গতিতে, গতকাল একদিনে এই সংখ্যা ২৬২৪ জন- ভারতের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা। মোট প্রাণহানির সংখ্যা এখন ১, ৮৯,৫৪৪ জনে পৌঁছেছে। রাজধানী নয়াদিল্লিতে প্রতি চার মিনিটের মধ্যে একজন ব্যক্তি কোভিডে মারা যাচ্ছেন বলে প্রকাশিত হয়েছে।
অক্সিজেন সরবরাহের স্বল্পতা এখনো অব্যাহত আছে। উত্তর ভারতে পরিচালিত হাসপাতাল নেটওয়ার্ক ম্যাক্স হেলথ কেয়ার টুইট করেছে যে তাদের অক্সিজেন আর মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে। আরেকটি বড় চেইন, ফোর্টিস হেলথ কেয়ার বলেছে যে এটি “ব্যাকআপে চলছে”।
ভারতের অন্যান্য স্থান থেকে সামরিক বিমান ও ট্রেনে অক্সিজেন নয়াদিল্লিতে পরিবহন করা হচ্ছে – এছাড়া আসছে সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য দেশ থেকে। তবে পরিস্থিতি এখনও সংকটজনক। সূত্রে প্রকাশ রাজধানীর অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন শেষ হয়ে গেছে কিংবা শেষ হয়ে যাচ্ছে এই অবস্থায় আছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা জানিয়েছে নয়াদিল্লির জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে কমপক্ষে ২০ জন কোভিড রোগী অক্সিজেন সংকটে রাতারাতি মারা গেছেন। স্কাই নিউজের সংবাদদাতা অ্যালেক্স ক্রাফোর্ড জানিয়েছেন যে নয়াদিল্লির একটি বড় হাসপাতালের বাইরে ফুটপাতে অসুস্থদের মারা যেতে দেখা গেছে। সেখানে আত্মীয় স্বজনরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সমালোচকরা বলছেন যে সংক্রমণের নিম্নগতির প্রবণতা দেখে গত বছরের শেষ দিকে রাজনীতিবিদ এবং সরকারী কর্তৃপক্ষ ধর্মীয় উত্সব এবং নির্বাচনী সমাবেশ সহ সুপার-স্প্রেডার ইভেন্টগুলি সংঘবদ্ধ হওয়ার অনুমতি দিয়েছে এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ সরকারি নেতৃবৃন্দ উৎসবে যুক্ত থেকেছেন। অনেকেই মনে করছেন ভাইরাসের নূতন রূপ যতটা না দায়ী তার থেকে নেতৃবৃন্দের চিন্তাভাবনার স্বল্পতা, কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা মহামারির এই সর্বনাশা রূপের জন্য দায়ী।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে মৃতদের সৎকারের সংকট দেখা গেছে। রিক্সায় এবং এম্বুলেন্সে মৃতদেহ নিয়ে অপেক্ষায় স্বজনরা দিশেহারা হয়ে আছেন। শ্মশানে মৃতদেহ আর ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে সৎকার করা যাচ্ছেনা বরং এক সাথে স্তূপীকৃত অবস্থায় মৃতদের পোড়ানো হচ্ছে। শ্মশান কর্মীরা বিপর্য্যস্থ হয়ে পড়েছেন। এত বেশী মৃতদেহ আর কখনো তাদের পোড়াতে হয়নি বলে জানিয়েছেন এক শ্মশান কর্মী। শ্মশানঘাটে অনবরত জ্বলছে আগুণের শিখা।