গত ১৬ বছরের মতো এবার ১৫ আগষ্টে কোনো আয়োজন নেই

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আজ ১৫ আগস্ট। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের দিন। ১৯৭৫ সালের এই রাতে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য এ হত্যাকা- সংঘটিত করে। ঘাতকের নির্মম বুলেটে সেদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক ভবনে নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এবারের ১৫ আগস্ট ভিন্ন রকমভাবে এসেছে। দিবসটি নিয়ে গত ১৬ বছরের মতো এবার কোনো আয়োজন নেই। প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগও। এর আগে দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল।

এ দিন সাধারণ ছুটিও থাকত। এবার দলীয় কোনো কর্মসূচি যেমন নেই। নেই সরকারি কোনো কর্মসূচিও। আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচিও (গতকাল রাতে) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে চলে যাওয়ায় তারও এবার ১৫ আগস্টে শ্রদ্ধা নিবেদন করার সুযোগ নেই। 

তবে বিভিন্ন বার্তায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে ঢাকায় জমায়েত ঘটিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ির সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করার নির্দেশনা দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে এর আগ পর্যন্ত ঐতিহাসিক এ বাড়িটি ছিল অক্ষত। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর ৩২ নম্বরের এ বাড়ি ক্ষত-বিক্ষত হয়। ওইদিন দুষ্কৃতকারীরা বঙ্গবন্ধুর এ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। করা হয় ভাঙচুর ও লুটপাট। ভাঙচুর করা হয় সেখানে থাকা প্রতিকৃতিও। ফলে এবারের ১৫ আগস্ট অনেকগুলো ক্ষতচিহ্ন নিয়ে সামনে এসেছে। শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া নিয়ে ভয়ভীতিও রয়েছে সাধারণের মধ্যে। আত্মগোপনে থাকা দলের নেতাকর্মীর মধ্যেও ভয়ভীতি রয়েছে।   

সেদিন ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, কর্নেল জামিল। খুনিদের বুলেটে সেদিন আরও প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ খান রিন্টুসহ অনেকে। দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো বাঙালি তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে না বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু। সেজন্য তিনি গণভবনের পরিবর্তে থাকতেন ধানম-ির ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে। যে বাড়িটি বাঙালির স্বাধিকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে অসম্ভব প্রিয় ছিল বঙ্গবন্ধুর। এখানে থেকেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে ব্রত ছিলেন। সেদিন ঘাতকদের বুলেটের মুখেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অকুতোভয়। প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটিকে আইন হিসেবে অনুমোদন দেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের হত্যাকারী পাঁচ আত্মস্বীকৃত খুনির ফাঁসির দণ্ডাদেশও কার্যকর হয়।

আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ২০০১ সালে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসে আবার রাষ্ট্রীয়ভাবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এবার আবার ব্যত্যয় ঘটে। বাতিল করা হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস পালন।

১৫ আগস্ট ঘিরে প্রস্তুত পুলিশ : আজ বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সশস্ত্রবাহিনীর টহল ও তল্লাশি। পুলিশও তাদের টহল কার্যক্রম জোরদার করেছে। ইতিমধ্যে দেশের প্রায় সবকটি থানার কার্যক্রম চালু হওয়ার পর পুলিশের সব ইউনিটকে টহল জোরদার করতে বলা হয়েছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ যাতে কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারে, সেজন্য মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই দিন কেন্দ্রীয় কার্যালয়, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এতে দেশে আবারও সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ও পরে দেশের প্রায় ৪৫০টি থানায় হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। থানাগুলোতে এখন সীমিত পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। অনেক থানায় পুলিশের টহল খুবই সীমিত। পুলিশের গাড়িসহ অধিকাংশ যানবাহন ভস্মীভূত হয়েছে। অনেক থানার অবকাঠামোও ধ্বংস করা হয়েছে। অনেক পুলিশ সদস্য এখনো কাজেও যোগ দেননি। বিষয়টিকে পুলিশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্য পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভিন্ন ইউনিটকে ১৫ আগস্টের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন উপকমিশনার বলেন, ‘এ অবস্থায় পুলিশের জন্য সহিংস পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন বিষয়। তবে জনসাধারণের সহযোগিতা পেলে পুলিশ অবশ্যই পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হবে।’

SHARE THIS ARTICLE