গর্তে লুকিয়ে নয়, ধরা পড়ার সময় ‘ঘরে নামাজ পড়ছিলেন’ সাদ্দাম: মার্কিন দোভাষী

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার অভিযোগে ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র জোট। এসময় ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন আত্মগোপন করেন। ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর মাটির নিচে তৈরি একটি গর্ত থেকে সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় দখলদার জোট বাহিনী। কিন্তু, রুশ গণমাধ্যম স্পুটনিক নিউজকে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা সাবেক এক দোভাষী জানিয়েছেন, সাদ্দামকে গ্রেপ্তারের সময় সত্যিকার যে পরিস্থিতি ছিল তার বিবরণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করা হয়।

Death Of A Dictator: 10 Years Since Saddam Hussein's Execution

দোভাষীর পরিচয় গোপন রেখেছে রুশ গণমাধ্যমটি। তিনি বলেছেন, “সাদ্দামকে গ্রেপ্তারের পর পরই তাকে কীভাবে বন্দী করা হলো সেই সত্যকে বিকৃত করা হয়। বুশের নেতৃত্বে আমেরিকান প্রশাসন যেন ইরাকে পরাজিত প্রমাণিত না হয়, সেজন্যই এ ছলনার আশ্রয় নেয়। তাছাড়া, ইরাককে বিশ্বশান্তির জন্য হুমকি এবং ব্যাপক গণবিদ্ধংসী অস্ত্র রাখার জন্য দায়ী করা হলেও- সেসবের কোনো প্রমাণও তারা পাচ্ছিল না।”

তিনি আরও জানান, আমি বিশ্বকে জানাতে চাই গ্রেপ্তার হওয়ার সময় সাদ্দাম স্থানীয়ভাবে দিশদাশা নামে পরিচিত আরবি জোব্বা পরে নামাজরত ছিলেন। তিনি যে দখলদার বাহিনীর ভয়ে জুবুথুবু হয়ে পড়েছিলেন বলে প্রচার চালানো হয়েছে তা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি ঘরের ভেতর ছিলেন, সুড়ঙ্গের ভেতর লুকানোর চেষ্টা করেননি। তাছাড়া, সুড়ঙ্গটি ছিল খুবই সরু, আর সে সময় প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্যও বেশ রুগ্ন হয়ে পড়েছিল। তাই ভয়ে সেখানে তার লুকানোর চেষ্টা বানোয়াট কাহিনী।

দোভাষীটি জোর দিয়ে বলেন, “আমি তখন বুলেটপ্রুফ ভেস্ট পরেছিলাম। সেটি খুলে অনেক কসরত করে সুড়ঙ্গে প্রবেশও করেছি। সেখানে ঢোকা সহজসাধ্য ছিল না। একথা সত্য সুড়ঙ্গের সেই গর্ত অবশ্যই ছিল। কিন্তু, সাদ্দাম ঘরেই ছিলেন। সেখানেই তাকে বন্দী করা হয়। তিনি কারো ভয়ে গর্তে লুকাননি।”

ঘরটির বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি- “ঘরটি ছিল একেবারেই সাদামাটা। যোগাযোগের কোনো আহামরি যন্ত্রপাতি সেখানে ছিল না। ছিল কেবল একটি ওয়ার্ডরোব, দুইটি বিছানা, একটি রেডিও, একটি ভয়েস রেকর্ডার, আর ছোট্ট একটি টেলিভিশন।”

ওই দোভাষী আরও জানান, যে বাড়িতে সাদ্দাম আত্মগোপনে ছিলেন সেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ভর্তি ১৭টি বাক্স ছিল। মার্কিন সেনারা এসব অর্থ সাথে করে নিয়ে যায়।

A Great Day For Iraq?

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট যে ঘরে ছিলেন, তার থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে ছিল একটি পশুর আস্তাবল। কঠোর নিরাপত্তার কারণে সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি, কিন্তু অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনা সদস্য আমাকে পরে এসব বলেছিল। সে জানায়, আমরা ১৭টি বিশালাকায় বাক্স পেয়েছি, সেগুলো ভর্তি বহু মিলিয়ন ডলারে। সাদ্দাম হোসেনের ঘরে থাকা একটি বাক্সে আরও ছিল স্বর্ণের বার ও অমূল্য গহনা।”

সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করা সেনা ইউনিটটি এসব ধন-সম্পদ অজ্ঞাত কোনো স্থানে নিয়ে যায়। এমনকি তা ইরাকি জনগণকে জানানোও হয়নি। সম্পদের মূল্য বা সেগুলো কোথায় গেছে- তাও কখনো জানানো হয়নি।

The Country That Still Considers Saddam Hussein a Hero - Atlas Obscura

পেন্টাগনের দাবি অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে একটি খামারের ঘরের নিচে একটি আট বাই আট ফুটের গর্ত থেকে সাদ্দামকে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় আটক করা হয়। কিন্তু, বাস্তবে সাদ্দাম গ্রেপ্তারের সময় ঘরের মধ্যেই কোনো কারণে অচেতন অবস্থায় ছিলেন, এসময় তিনি কী বলছেন বা করছেন- তাও বুঝতে পারছিলেন না। এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দেয় তাকে কোনো ধরনের চেতনানাশক দেওয়া হয়েছিল- বলে জানান নিরাপত্তার কারণে নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দেওয়া ওই দোভাষী।

২০০৬ সালে সাদ্দামকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু, যে গণবিধ্বংসী জীবাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র থাকার অভিযোগে তার দেশে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল, তেমন কিছুই কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

SHARE THIS ARTICLE