গলফ গেইট কেলেংকারিতে আয়ারল্যান্ডে মন্ত্রী এবং সেনেড ভাইস চেয়ারম্যানের পদত্যাগ (ভিডিও)

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ডের নবীন সরকারে নৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। নীতিবিচ্যুতির দায় মাথায় নিয়ে কৃষিমন্ত্রী দারা ক্যালারি এবং সিনেটর জেরি বার্টিমার ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। ২৭শে জুন ২০২০ সালে মিহল মার্টিনের নেতৃত্বে তিনদলীয় জোট সরকার গঠিত হবার পর মন্ত্রীসভা থেকে এটা ছিল দ্বিতীয় অপ্রত্যাশিত বিদায়। সরকার গঠনের ১৪ দিনের মাথায় কৃষি, খাদ্য এবং মেরিন বিষয়ক মন্ত্রী বেরি কোয়েন ৪ বছর আগে মদ্যপান করে বিধিবহির্ভূত ভাবে গাড়ি চালানোর দায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হোন। �বেরি কোয়েনের পদত্যাগের ফলে তার স্থলে দায়িত্ব নেন দারা ক্যালারী, আর তিনিও ৩৭ দিনের মাথায় নীতিবিচ্যুতির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হলেন। আর টি ই পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ গত সপ্তাহে গলওয়ে শহরের ক্লিফডনের একটি হোটেলে সংসদীয় গলফ সোসাইটি আয়োজিত নৈশভোজে যোগদান করেন কৃষিমন্ত্রী দারা ক্যালারি, শেনেডের ভাইস চেয়ারম্যান জেরি বার্টিমার, আয়ারল্যান্ডে ই ইউ কমিশনার ফিল হোগান, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি শিমাস উলফ এবং আর অন্যান্য। কিন্তু এই নৈশভোজে যোগদান যে তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে, জাতীয় জীবনে সংকট সৃষ্টি করতে পারে সেটা তখন তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেন নি। �ঘটনা হলো, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সরকার যে লক ডাউন দিয়েছিলো সেই লক ডাউন থেকে উত্তরণের পথে আয়ারল্যান্ডে ৩য় ধাপ চলছে, এমতাবস্থায় সংক্রমণের হার আবার বাড়তে থাকায় ১৮ই আগস্ট মঙ্গলবার, সরকার ৪র্থ ধাপে উত্তরণ স্থগিত করে দেয়।

একই সাথে অতিরিক্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। তৃতীয় ধাপে জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সামাজিক অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের অনুমতি প্রদান করেছিলো। নিজগৃহে ১০ জন, অন্তরাংগনে ৫০ জন আর বহিরাংগনে ২০০ জনের অতিরিক্ত জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে নৈশভোজের আগের দিন ১৮ই আগস্ট মঙ্গলবার এই নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়িয়ে দিয়ে নিজগৃহে ৬ জন, আর বহিরাংগনে ১৫ জনের অতিরিক্ত জনসমাগম নিষিদ্ধ করে সরকার। ১৯শে আগস্ট বুধবার, রাতে ক্লিফডোনের স্টেশন হোটেলে পূর্ব নির্ধারিত নৈশভোজ অনুষ্ঠান যথারীতি অনুষ্ঠিত হয়। � ২০শে আগস্ট আইরিশ এক্সামিনার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় যে, উক্ত নৈশভোজে অতিথি ছিলেন সর্বমোট ৮১ জন, সুতরাং এটা ছিল বিধি নিষেধের সরাসরি লঙ্ঘন। এই সংবাদ প্রকাশিত হলে জনসাধারণের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয় এবং সমালোচনার হিড়িক পড়ে যায়, বিরোধী দল সোচ্চার হয়, পুলিশি তদন্ত শুরু হয়। এমতাবস্থায়, আজ ভোরে কৃষি মন্ত্রী দারা ক্যালারি এবং শেনেড ভাইস চেয়ারম্যান জেরি বার্টিমার উভয়েই পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর মিড ওয়েস্ট রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে দারা ক্যালারি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “এই ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী দুঃখ পেয়েছেন এবং হতাশ হয়েছেন। এটা ছিল ভুল এবং অনুধাবনের ত্রুটি। আমি কোভিড আক্রান্ত পরিবার, ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মি ও সকলের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি। কোভিড বিধিমালা মেনে চলার জন্য সারা দেশের লোকেরা তাদের পারিবারিক জীবনে এবং তাদের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে খুব কঠিন, ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকার করেছে। গত মঙ্গলবার সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তাতে এই ইভেন্টে যোগ দেয়া আমার মোটেও উচিত হয়নি ।” জেরি বার্টিমার তার পদত্যাগ পত্রে লিখেন,” যে মুহূর্তে মহামারী থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য সারা জাতি ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার করছে এই অবস্থায় এই অনুষ্ঠানে আমার যোগদান সরকারকে বিব্রত করেছে, এটা ছিল আমার বিচার বিশ্লেষণের মারাত্নক ত্রুটি। আমি সকলের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি।” �ঘটনার এখানেই শেষ হয়নি, ই ইউ কমিশনার ফিল হোগান এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদত্যাগের দাবীও উত্থাপিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে সংসদের আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন, বলে প্রকাশিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে তার দলের চীফ হুইপকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আর কিছু পদক্ষেপের কথাও শুনা যাচ্ছে। �আমরা অনেকেই ভেবে দেখিনা। করোনা মহামারীতে লক্ষ লক্ষ জীবন হারিয়ে গেছে এবং প্রতিদিন আর ও হারিয়ে যাচ্ছে। যারা বেঁচে যাচ্ছেন তাদের জীবনেও কষ্ট থেকে যাবে। বেঁচে থাকার একমাত্র পন্থা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধুয়াধুয়ি করা, মাস্ক পরা। যতটুকু সম্ভব নিজ গৃহে থাকা। সংক্রমণ সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রিত না হওয়া অবধি আরোপিত বিধি নিষেধ মেনে চলা। আমরা দেখেছি কিভাবে, ৩ মাস লক ডাউন আয়ারল্যান্ডে সফলত্যা দিয়েছিলো। ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই সাফল্য , কতিপয় মানুষের দায়িত্বহীনতার জন্য ব্যার্থ হোক সেটা মোটেও কাম্য হতে পারেনা। এই অবস্থায় যে সকল নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করে বিধি লঙ্ঘন করে জাতিকে অসম্মানিত করেছেন তারা লজ্জিত হয়েছেন, অনুধাবন করছেন, এটা আমাদের জন্য অনুসরনীয়। মানুষের প্রয়োজনে যারা বিধি তৈরি করে তারাই যদি বিধি লঙ্ঘন করে তাহলে সেই সমাজে আইনের শাসন আশা করা যায়না। আমরা সচেতন হই, বিধি লঙ্ঘন করা থেকে বিরত থাকি। সর্বোপরি মনে রাখা উচিত একটি জীবন ঝরে যাওয়ার অর্থ সমগ্র মানবতা ধ্বংস হওয়া। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ আমাদেরকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অঙ্গীকার দেয়। সমাজের প্রতিটি মানুষের সচেতনতা কামনা করি।

SHARE THIS ARTICLE