চতুর্থ দফা সংলাপে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিলেন ড. ইউনূস

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর চতুর্থবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে শনিবারের এই সংলাপে গুরুত্ব পেয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গ। এর বাইরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগেও কয়েক দফা বৈঠক করেছেন তিনি। এবার রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করতে প্রধান রাজনেতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

শনিবার চতুর্থ দফার গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বিজেপি, ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সংলাপ শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়েই বেশি কথা হয়েছে। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, তিনটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা, গণহত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিচার এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এককভাবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সংলাপে কোন দলের কী প্রস্তাব


গণফোরাম: শুরুতেই সংলাপে অংশ নেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম। সংগঠনের সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে নির্বাচন ব্যবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছি। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে। সরকার গঠিত কমিশনের বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব কয়েক দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে দেওয়া হবে।

এলডিপি: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করাসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ২৩ প্রস্তাব দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। দলটির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বলেন, আজ আমরা ২৩টা প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য যা প্রয়োজন প্রস্তাবে সেগুলো রয়েছে। তিনি বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন, সুন্দর প্রশাসন চালানোর জন্য, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য, দ্রব্যমূল্যের জন্য মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, তাদের সহযোগিতা করার জন্য আমাদের প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছে।

বিজেপি: বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চালানো গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখার দাবি জানিয়েছেন। গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না সে ব্যাপারে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। সংলাপে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের প্রস্তাব তারা দিয়েছেন।

এনডিএম: জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা বলেছি আমরা বিশ্বাস করি, ২০২৫ সালের জুন বা জুনের পরেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। উনাদের চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। উনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবেন এবং আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।

লেবার পার্টি: উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার দাবি করেছেন লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, আমরা বলেছি যত সংস্কার করুক না কেন, সবার আগে সংস্কার করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদের। এ পরিষদের হাতেগোনা কয়েকজনের সফলতা ছাড়া বাকি সবাই ব্যর্থ। তাই ব্যর্থদের দ্রুত অপসারণ করতে হবে।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, বিদ্যমান সংবিধান জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধান নয়। এটা একটা অবৈধ সংবিধান। আমরা সুস্পষ্টভাবে সরকারকে বলেছি, হাসিনাকে ভারত থেকে এনে এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

SHARE THIS ARTICLE