আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ কোভিড মহামারির বর্তমান পর্য্যায়ে অমিক্রণ সংক্রমণের শিখর অতিক্রান্ত এবং হাসপাতালে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আপেক্ষিকভাবে স্থিতিশীল আছে এই অনুধাবন থেকে আয়ারল্যান্ড সরকার মহামারি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অধিকতর সহজ করে দিয়ে কোভিড মহামারি ব্যাবস্থাপনায় একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে।
গতকাল একদিনে আয়ারল্যান্ডে সংক্রমিত হয়েছেন ৬৫৯৭ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৯২ জন, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ১২৮ জন কম এবং একই সময়ে আই সিউ তে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৫ জন।
গতকাল বিকেলে আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিহল মার্টিন জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেন, “আমি আপনাদের সামনে অনেক খারাপ সময়ে দাঁড়িয়েছি কিন্তু আজ একটি ভালো সময়ে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আমাদের আবার নিজস্ব জীবনে ফিরে যাবার সময় এসেছে”। মিহল আরও বলেন, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে আয়ারল্যান্ডের বিশ্ব মানের টিকা প্রদান কর্মসূচী এবং বুস্টার টিকার সাফল্য আমাদের অবস্থাকে সম্পুর্ন পরিবর্তন করে দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে বেশীরভাগ বিধিনিষেধের আর কোন প্রয়োজন অবশিষ্ট নাই। তাই আগামীকাল সকাল ৬ ঘটিকা থেকে বেশীরভাগ বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে নেয়া হলো।”
কি কি বিধি নিষেধ থাকছেঃ
১। সাধারণ যানবাহনে, দোকানপাট, ট্যাক্সি, ষ্টেশন এবং এয়ারপোর্টে বর্তমানের মাস্ক পরিধান করার প্রয়োজনীয়তা অব্যাহত থাকবে। শপিং সেন্টার, লাইব্রেরি, সিনেমা, থিয়েটার, মিউজিয়াম, পোস্ট অফিস, ব্যাংক এবং অফিস আদালতে মাস্ক পরিধান করোতে হবে। সেলুন, লন্ড্রি, ট্রাভেল এজেন্ট ইত্যাদি স্থানে মাস্ক পরিধান করা অব্যাহত রাখতে হবে।
২। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোভিড সার্টিকেট প্রদর্শনের আবশ্যিকতা থাকছে। যারা টিকা গ্রহণ করেন নি কিংবা যারা সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড থেকে রোগমুক্ত হন নি তাদের জন্য ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টার কম সময় আগে করা পি সি আর টেস্ট নিগেটিভ হওয়ার আবশ্যিকতা থাকবে।
৩। কেউ পজিটিভ হলে কিংবা উপসর্গ থাকলে কিংবা ক্লোজ কন্টাক্ট হলে নিজস্ব আইসোলেশনের বর্তমান নিয়ম অব্যাহত থাকবে।
৪। স্কুল সমূহের বর্তমান ব্যাবস্থা অব্যাহত থাকবে।
কি কি বিধি নিষেধ থাকছে নাঃ
১। রেস্টুরেন্টের আভ্যন্তরে খাবার দাবারে, ব্যায়ামাগার (জিম্নাশিয়ামে), অবসর কেন্দ্র (লেইশার কেন্দ্রে), সিনেমা কিংবা থিয়েটারে কোভিড সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা আর থাকবেনা কিংবা সংখ্যার নিয়ন্ত্রণ ও আর থাকবে না।
২। ২ মিটার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আইনি বৈধতা আর থাকবেনা।
৩। বাসাবাড়িতে বেড়ানোর ক্ষেত্রে আর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। যে কোন সংখ্যক অতিথি এক বাসা থেকে অন্য বাসায় বেড়াতে যেতে পারবেন।
৩। সেবা (হসপিটালিটি) বিভাগের সকল কর্মচারীবৃন্দ ধীরে ধীরে তাদের স্বাভাবিক কর্মস্থলে যোগদান করবেন। সেবা বিভাগের সকল প্রতিষ্ঠান খোলা কিংবা বন্ধ করার সময়ের বিধি নিষেধ আর থাকছে না।
৪। বহিরাংগনে অনুষ্ঠান কিংবা খেলাধুলায় আর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকছেনা।
৫। আভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে শাদি, ভোজসভা, সভা সমিতিতেও আর কোন বিধিনিষেধ থাকছেনা।
৬। পাব কিংবা নাইট ক্লাবের সময় কিংবা সংখ্যার নিয়ন্ত্রণ ও আর থাকছেনা।
কোভিড সংক্রান্ত নীতিমালা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে জানান মিহল মার্টিন। ইতিমধ্যে ৫-১১ বছরের শিশু কিশোরদের টিকা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিনি সকল অভিভাবকদের আহবান জানান। তিনি অবশ্য সকলকে সাবধান থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, মহামারী এখনো শেষ হয়ে যায়নি।”
যে কোন সময় যে কোন ধরণের নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমাদের উন্নয়নশীল বিশ্বকে টিকা প্রদানের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।”
মিহল মার্টিন আরও বলেন, “বসন্ত আসছে, আমি ভাবতে পারছিনা কিভাবে এই সময়ের জন্য আমি উন্মুখ হয়ে আছি। বিশ্বের সকল মানুষ সামাজিক কিন্তু আইরিশ জনগণ সবচেয়ে বেশী সামাজিক। আমরা একে অপরের সাথে দেখা করতে চাই, হাসতে চাই, খেলতে চাই, গল্প গুজব করতে চাই।”
সরকারের সময়োপযোগী এই সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে সাদরে গৃহীত হলেও অনেকে আবার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কেউ ভেবেছেন অধিকাংশ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার ফলে সংক্রমণ বেড়ে যাবার সম্ভাবনা দেখা দিলো। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন যেহেতু ৯৫-৯৬% মানুষ ইতিমধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি কিংবা আই সি ইউতে ভর্তির সংখ্যা স্থিতিশীল আছে, তাই যদি সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধিও পায় তবুও গুরুতর আক্রান্তের সংখ্যা তেমন বৃদ্ধি পাবেনা। যদি কিছুটা বৃদ্ধি পায়ও তাহলে বাজারে ইতিমধ্যে দুটো ঔষধ এসেছে যার একটি হচ্ছে মলনিপুরাভির আর অন্যটি হচ্ছে প্যাক্সলোভিড, এই দুটি ঔষধ রোগাক্রান্তদের নিরাময় দিতে সক্ষম হবে।
আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে এবং প্রার্থনা করতে হবে যাতে কোনভাবেই কোভিডের নতুন মারাত্নক কোন ধরন না জন্ম নেয়।