আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ জুমার দিনটি মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের প্রতি এক অন্যতম নেয়ামত। রাব্বুল আলামিন সমস্ত দিনের ওপর এ দিনটিকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সূর্য উদয়ের দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এ দিনে হজরত আদম আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করা হয়। তাকে এই দিন জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনে জান্নাত থেকে তাকে বের করা হয়। আর এই জুমার দিনেই কিয়ামত হবে সংগঠিত হবে।’ (মুসলিম-২০১৪)।
এ ছাড়াও এই দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা অনেক বড় বড় কাজ সম্পাদন করেছেন। এই দিনটি আল্লাহ পাকের নিকট অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এ দিনের ফজিলত বুঝাতে আল্লাহ তায়ালা দিনটিকে ঈদের দিন বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এই দিনকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (ইবনে মাজাহ-১১৫২)।
জুমার দিন দোয়া কবুলের দিন। বান্দা আল্লাহর কাছে যা আবেদন করে তাই মঞ্জুর করা হয়। আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, ‘এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যেকোনো মুসলিম বান্দা যদি এ সময় আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।’ (বুখারি-৯৩৫)।
‘জুমার দিনে দোয়া কবুলের এই সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল ঈঙ্গিত দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জুমাবারের যে মুহূর্তটিতে দোয়া কবুলের আশা করা যায়, তোমার সে মুহূর্তটিকে বাদ আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টিতে তালাশ করো।’ (তিরমিযী-৪৯১)।
আল্লাহ তায়ালা জুমার দিনকে মুসলমানদের জন্য অন্য রকম এক মিলনমেলা বানিয়ে দিয়েছেন। এই দিনে জোহরের নামাজের পরিবর্তে মহল্লার সকলকে একত্রিত হয়ে জুমার নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং বেচা-কেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। (সূরা: জুমুআ-৯)।
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলতের কারণে জুমার নামাজকেও আল্লাহ তায়ালা অনেক ফজিলতপূর্ণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘শুক্রবার দিন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরিশতারা অবস্থান করে এবং আগমনকারীদের নাম ক্রমানূসারে লিপিবদ্ধ করতে থাকে। ইমাম যখন (মিম্বরে) বসেন, তারা লিপিসমূহ গুটিয়ে নেয় এবং যিক্র (খুতবা) শোনার জন্য চলে আসে। মসজিদে যে আগে আসে তার উদাহরণ সে ব্যক্তির মত যে একটি উটনী কোরবানী করেছে। তার পরবর্তীজনের। দৃষ্টান্ত তার মত যে একটি গাভী কোরবানী করেছে। তার পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মত যে ভেড়া কোরবানী করেছে এবং তার পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মত যে একটি মুরগি দান করেছে। পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মত যে একটি ডিম দান করেছে।’ (মুসলিম-২০২১)।
জুমার দিনে জুমার নামাজ আদায় করলে দশ দিনের গোনাহ মাফ হয় এবং জুমার নামাজের দিকে প্রতি কদমে এক বছর নফল রোজা ও নামাজ পড়ার সওয়াব হয়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে যে ব্যাক্তি গোসল করে অতঃপর জুমার জন্য যায় এবং সমর্থ অনুযায়ী সালাত আদায় করে, এরপর ইমাম খূতবা সমাপ্ত করা পর্যন্ত নীরব থাকে। এরপর ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করে। তবে তার এ জুমা হতে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (মুসলিম-২০২৪)।
আল্লাহর রাসূল আরো বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সকাল সকাল গোসল করল এবং গোসল করাল, তারপর ইমামের কাছে গিয়ে বসে চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল তার প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে সে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব পাবে। (তিরমিযী-৪৯৮)।
জুমার দিন যেমন বরকতময় জুমার নামাজও আরো বেশি বরকতময়। আমরা অনেকেই জুমার নামাজকে অবহেলা করে থাকি। সাবধান! অযথা বিনা কারণে কখনো জুমার নামাজ পরিত্যাগ করা যাবে না। এ ব্যাপারে শরীয়তে কঠিন হুঁশিয়ারি করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমাহ পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন।’ (তিরমিযী-৫০২)।
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা আমাদের যথাযথ ভাবে জুমার নামাজ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।