টিপ নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে সাফাই গাইলেন পুলিশ কর্তা

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ টিপ নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট দেয়ায় সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে ক্লোজ করেছেন পুলিশ সুপার (এসপি)। সেই সঙ্গে স্ট্যাটাসের বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এসপি ফরিদ উদ্দিন আজ সারাদিন অন্য একটি ঘটনার তদন্তে জৈন্তাপুর ছিলেন। রাতে তিনি স্ট্যাটাসের বিষয়টি জেনে লিয়াকতকে ক্লোজ করার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

টিপ পরায় কলেজশিক্ষককে এক পুলিশ সদস্যের হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে দেশজুড়ে যখন তোলপাড়, তখন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস সমালোচনা সৃষ্টি করেছে।

কলেজশিক্ষককে হয়রানির পর ফেসবুকজুড়ে নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষও কপালে টিপ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন লিয়াকত। যদিও পরে তিনি সেটি মুছে দেন।

তার আগেই সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে, চলছে সমালোচনা।

তিনি সোমবার ওই স্ট্যাটাসে লিখেছেন (মূল পোস্টের বানান অপরিবর্তিত), ‘টিপ নিয়ে নারীকে হয়রানীর করার প্রতিবাদে অনেক পুরুষ নিজেরাই কপালে টিপ লাগাইয়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু আমি ভবিষ্যত ভাবনায় শংকিত। বিভিন্ন শহরে অনেক নারীরা যেসব খোলামেলা পোষাক পড়ে চলাফেরা করেন – তারমধ্যে অনেকেরই ব্রায়ের উপরে দিকে প্রায় অর্ধেক আনকভার থাকে। পাতলা কাপড়ের কারনে বাকী অর্ধেকও দৃশ্যমান থাকে। এখন যদি কোনো পুরুষ এইভাবে ব্রা পড়ার কারনে কোনো নারীকে হয়রানী করে তবে কি তখনও আজকে কপালে টিপ লাগানো প্রতিবাদকারী পুরুষগণ একইভাবে ব্রা পড়ে প্রতিবাদ করবেন???’

এই স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী বলেন, ‘ওই স্ট্যাটাস আমি ডিলিট করে দিয়েছি। যেটা ডিলিট করে দিয়েছি, যেটার অস্তিত্বই নাই, সেটা নিয়ে আমি কথা বলব না।

‘পুরুষ হয়ে টিপ পরে প্রতিবাদ জানানোর ভাষাটা আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি। সেটা নিয়ে লিখেছি।’

স্ট্যাটাস কেন ডিলিট করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লিয়াকত বলেন, ‘আমার ভালো লাগছিল তাই দিয়েছিলাম। পরে ভালো লাগে নাই, তাই সরিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া ওটা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। প্রাতিষ্ঠানিক কিছু না।’

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন ত বলেন, ‘একজন পুলিশ সদস্যের এমন মন্তব্য খুবই আপত্তিকর ও মানহানিকর। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। আমি আশা করব, কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে অপসারণ করবে।’

পুলিশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর একজন সদস্য ফেসবুকে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না- সে প্রশ্ন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফুরকে।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রবিধানে ফেসবুক নিয়ে কিছু নেই। কারণ যখন প্রবিধান তৈরি হয় তখন ফেসবুক ছিল না। তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া ও মন্তব্য করা নিয়ে একটি গাইডলাইন রয়েছে। লিয়াকত আলীল স্ট্যাটাসে ওই গাইডলাইনের ব্যত্য়য় ঘটেছে কি না তা আমরা যাচাইবাছাই করছি।’

টিপ পরায় গত শনিবার রাজধানীতে হেনস্তার শিকার হন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। এ ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেককে সোমবার বরখাস্ত করা হয়েছে।

SHARE THIS ARTICLE